পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ প্রস্তাব আপনা হইতেই সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত श्ल ? তবুও মান বজায় রাখিতে হইবে । অত্যন্ত সংযমের সহিত মনের ভাব চাপিয়া উদাসীনের মত বলিলাম—ও ! আচ্ছা ভেবে বলব। কাল আছে ত ? অবিনাশ খুব খোলাখুলি ও দিলদরিয়া মেজাজের মানুষ। বলিল—ভাবাভাবি রেখে দাও। আমি বাবাকে আজই পত্র লিখতে বসছি। আমরা এক জন বিশ্বাসী লোক খুঁজছি। জমিদারীর ঘুণ কৰ্ম্মচারী আমরা চাই নে— কারণ তার প্রায়ই চোর। তোমার মত শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান লোকের সেখানে দরকার। জঙ্গল-মহাল আমরা নতুন প্রজার সঙ্গে বন্দোবস্ত করব । ত্ৰিশ হাজার বিঘের জঙ্গল । অত দায়িত্বপূর্ণ কাজ কি যার-ভার হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় ? তোমার সঙ্গে আজ আলাপ নয় । তোমার নাড়নক্ষত্র আমি জানি। তুমি রাজী হয়ে যাও— আমি এখুনি বাবাকে লিখে অ্যাপয়েণ্ট মেট লেটার আনিয়ে দিচ্ছি। Ε কি করিয়া চাকুরী পাইলাম তাহ বেশী বলিবার আবিস্তক নাই। কারণ এ গল্পের উদেখ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ংক্ষেপে বলিয়া রাথি অবিনাশের বাড়ীর চায়ের নিমন্ত্রণ খাইবার দুই সপ্তাহ পরে আমি একদিন নিজের জিনিষপত্র লইয়া বি. এন. ডব্লিউ রেলওয়ের একটা ছোট ষ্টেশনে নামিলাম। শীতের বৈকাল। বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ঘন ছায়। নামিয়াছে, দূরে বনশ্রেণীর মাথায় মাথায় অল্প অল্প কুয়াশা জমিয়াছে। রেল-লাইনের দু’ধারে মটর-ক্ষেত, শীতল সান্ধ্য বাতাসে তাজা মটরশাকের স্নিগ্ধ স্বগন্ধে কেমন মনে হইল যে-জীবন আরম্ভ করিতে যাইতেছি তাহ বড় নির্জন হইবে, এই শীতের সন্ধ্য যেমন নির্জন, যেমন নির্জন এই উদাস প্রান্তর আর ওই দূরের নীলবর্ণ বনশ্রেণী, তেমনি। গরুর গাড়ীতে প্রায় পনর-ষোল ক্রোশ চলিলাম সারারাত্রি ধরিয়া—ছইয়ের মধ্যে কলিকাতা হইতে আনীত কম্বল রাগ, ইত্যাদি শীতে জল হইয়া গেল—কে জানিত প্রবণসী - ১৩৪৪ - এ-সব অঞ্চলে এত ভয়ানক শীত ? সকালে রৌদ্র যখন উঠিয়াছে, তখনও পথ চলিতেছি। দেখিলাম, জমির প্রকৃতি বদলাইয়া গিয়াছে—প্রাকৃতিক দৃপ্তও অন্য মূৰ্ত্তি পরিগ্রন্থ করিয়াছে—-ক্ষেতখামার নাই, বস্তি-লোকালয়ও বড়-একটা দেখা যায় না—কেবল ছোট বড় বন, কোথাও ঘন, কোথাৎ পাতলা, মাঝে মাঝে মুক্ত প্রাস্তর কিন্তু তাহাতে ফসলের আবাদ নাই । কাছারিতে পৌছিলাম বেল দশটার সময়। জঙ্গলের মধ্যে প্রায় দশ-পনর বিঘা জমি পরিস্কার করিয়া কতকগুলি খড়ের ঘর, জঙ্গলেরই কাঠ, বাঁশ ও খড় দিয়া তৈরি—া । শুকুনা ঘাস ও বন-ঝাউয়ের সরু ওঁড়ির বেড়, তাহার উপর মাটি দিয়া লেপা । ঘরগুলি নতুন-তৈরি, ঘরের মধ্যে ঢুকিয়াই টাটুক-কাটা খড়, আধর্কাচা ঘাস ও বাশের গন্ধ পাওয়া গেল ! জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম আগে জঙ্গলের ওদিকে কোথায় কাছারি ড়িল, কিন্তু শীতকালে সেখানে জলাভাব হওয়ায় এই ধর নতুন বাধা হইয়াছে, কারণ পাশেই একটা ঝরণা থাকা । এখানে জলকষ্ট নাই । | ס\ জীবনের বেশীর ভাগ সময় কলিকাতায় কাটাইয়াছি। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ, লাইব্রেরি, থিয়েটার, সিনেম নার আড়া—এ-সব ভিন্ন জীবন কল্পনা করিতে পারি মা-এঅবস্থায় চাকুরীর কয়েকটি টাকার খাতিরে যেখানে আসিয়া পড়িলাম, এত নির্জন স্থানের কল্পনাও কোনদিন করি নাই। দিনের পর দিন যায়, পূৰ্ব্বাকাশে স্থৰ্য্যের উদয় দেখি দুরের পাহাড় ও জঙ্গলের মাথায়, আবার সন্ধ্যায় সমগ্র বনঝাউ ও 鼬 ঘাসের বনশীর্ষ সিচুরের রঙে রাঙাইয়া স্বৰ্য্যকে ডুবিয়া যাইতে দেখি—ইহার মধ্যে শীতকালের যে এগার ঘণ্ট ব্যাপী দিন, তা যেন খ খ করে শূন্য, কি করিয়া তাহ পুরাইব, প্রথম প্রথম সেইটা আমার পক্ষে হইল মহাসমস্যা। কাজকৰ্ম্ম করিলে অনেক করা যায় বটে, কিন্তু আমি নিতান্ত নব । আগন্তুক, এমনও ভাল করিয়া এথানকার লোকের ভাষা বুঝিতে পারি না, কাজের কোন বিলিব্যবস্থাও করিতে পারি না। নিজের ঘরে বসিয়া বসিয়া, যে কয়খানি o .