পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতালীর বেশভূষা - - ভ্রমণীন্দ্রমোহন মৌলিক, ডি এসসি - ཟ།། ইউরোপের চর্চা যেদিন থেকে আমাদের দেশে স্বরু হয়েছে সেই থেকে আজ পর্য্যস্ত আমরা এই মহাদেশটিকে একটা একক সত্তা হিসাবে দেখে এসেছি। ইতিহাস এবং ভূগোলের দধ্য দিয়ে, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি এবং শিল্পের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ইউরোপের যে মূৰ্ত্তি আমরা দেখতে পাই তাতে এই ধারণ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ; কারণ ইউরোপের এই ঘূর্তিটি হচ্ছে আসলে তার সভ্যতার মূৰ্ত্তি। এই ধারণার জোরে হিস্পনি থেকে রাশিয়া পৰ্য্যন্ত আর গ্রীস থেকে নরওয়ে পৰ্য্যস্ত সমস্ত ভূখণ্ডকে একটি একক শিক্ষা, আচার, ধৰ্ব্ব এবং অনুভূতির অন্তর্গত ব’লে মনে ক’রে থাকি। লুর বিশ্লেষণে এই একত্ব ধোপে টেকে কি না তা নিয়ে নুগুদ্বৈধ হ’তে পারে, কিন্তু ইউরোপের বাইরের যা রূপ, ইন্দ্রিঘের সাহায্যে তার অন্তরের যে পরিচয় আমরা পাই ভতে গোড়াতেই মনে হবে যে ইউরোপ বলে একক কোন একটি বস্তু নেই। ইউরোপে বৈষম্যের অন্ত নেই ; প্রাকৃতিক দৃশ্যে, মানুষের আকৃতি ও প্রকৃতিতে, আচারে g ব্যবহারে, বেশে ও ভূষায়, সঙ্গীত ও শিল্পের এভিব্যক্তিতে, একটি দেশ থেকে আর একটি দেশে ত দুরের কথা, একটি জনপদ থেকে আর একটি জনপদে যা প্রভেদ দেখেছি তা আমাদের বৈষম্যময় ভারতবর্ষেও দেখতে পাই নি। প্রথমতঃ ইউরোপে কতকগুলো জাতিগত, ভাষাগত বৈষম্য আছে যা ইতিহাস-চর্চার মধ্য দিয়ে ততটা ধরা পড়ে ন৷ যতটা পড়ে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ে । এক জন ইতালীয়ান আর জাৰ্ম্মানে যা বৈষম্য, এক জন করালী আর ইংরেজে যা বৈষম্য, কিংবা এক জন ওলন্দাজ জার রাশিয়ানে যা বৈষম্য তা আমাদের মাদ্রাজী এবং পাঞ্জাবীর মধ্যে যে প্রভেদ তার চেয়ে বেশ ছাড়া কম নয়। ভাষার ব্যাপারেও এই বৈষম্য গভীর ভাবে বিদ্যমান। শুধু এক দেশ থেকে আর এক দেশে নয়, -> এক দেশেরই বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের ভাষা এবং উপভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দক্ষিণ-আলপসের টিরোলে একটি উপত্যক থেকে আর একটি উপত্যকায় ভাষার বৈষম্য লক্ষ্য করেছি। ইতালীর "দক্ষিণ ও উত্তর সীমাস্তের মধ্যে ভাষার ততখানি বৈষম্য যতখানি আমাদের চট্টগ্রাম এবং বীরভূমের মধ্যে, অথচ ওটাও ইতালীয়ান আর এটাও বাংলা। জাৰ্ম্মানী, ইংলণ্ড, ফ্রান্স আর হুইটজারল্যাণ্ডের ত কথাই নেই, এদের বিভিন্ন অঞ্চলেও ভাষার অথবা উপভাষার একই বৈষম্য দেখেছি। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে ষে রাশিয়া-বিহীন ইউরোপ আয়তনে যদি ভারতবর্ষের সমান হয় তবে আমাদের জাতি-বৈষম্য কিংবা ভাষা-বৈষম্য ওদের অনুপাতে মোটেই বেশী নয়। কিন্তু সেজন্য একথা বলছি না যে, বৈষম্য থাকাটা উচিত নয় ; বস্তুতঃ বৈষম্যটাই হচ্ছে আসল সমৃদ্ধি । ভেবে দেখুন, বাংলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন উপভাষা না-থেকে যদি খালি একটি মাত্র সাধু ভাষার প্রচলন থাকত তাহলে বাংলা ভাষা আজ যা আছে, তার চেয়ে কম সমৃদ্ধিশালী হ’ত ন-কি ? এমনি করে বৈষম্যের মধ্য দিয়েই দেশের একটি কেন্দ্রীয় সভ্যতা, ভাষা আরও পুষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন ভাষার ব্যাপারে, বেশভূষার ব্যাপারেও তাই। ইউরোপের প্রত্যেক দেশের আলাদা আলাদা বেশভূষা আছে। প্রত্যেক দেশের মধ্যে আবার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের বেশভূষার প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। খালি পরার ঢঙে নয়, বর্ণসমন্বয়ের কচিতেও কারও সঙ্গে কারুর মিল নেই। কিন্তু সেখানেই তার সৌন্দর্ঘ্য এবং সমৃদ্ধি। আজ বাঙালী, মরাঠী, গুজরাটি এবং মাড়োয়ারীদের বেশভূষা যদি একই রকম হত, তাহলে ভারতীয় বেশভূষার অনেক সৌন্দৰ্য্য-সমৃদ্ধি আমরা পেতাম नां । ষত্র-যুগের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এবং সাম্যবাদের