পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপান যাত্রা গ্রীশান্তা দেবী বাংলা দেশের শীতে যাদের ঠাণ্ড লেগে যায়, এমন মাহুষ সচরাচর পৌষ মাসের শীতে জাপান যায় না। কিন্তু আমার ভাগ্যে এই সময়েই জাপান যাবার সুযোগ জুটল। আমি মনে মনে যথেষ্ট ভয় পেলেও যাবার সংকল্প ত্যাগ করলাম না। ডাক্তারের অনেকেই বললেন, সমুদ্রের হাওয়ায় শরীর এত ভাল হয়ে যাবে, যে, ঠাণ্ডা লাগবার আর কোনও ভয় থাকবে না . জাপানে লেখিকা ও তাহার কন্য যাই হোক, সাবধানতার জন্য যথাসাধ্য গরম কাপড়চোপড় যোগাড় করতে লাগলাম। আমাদের দেশে জাপানী জিনিষ খুব আমদানী হয়, কাজেই ব্যবসায়স্থত্রে অনেককে জাপানে যেতে হয়। কাপড় কিনতে গিয়ে এই রকম একটি লোকের সঙ্গে দেখা হ’ল। সে বললে, “শীতকালে জাপান ? সে যে ভয়ানক ব্যাপার ” আমি বললাম, “শীতকালের দাৰ্জিলিঙের মত ?” সে বললে, “ন, না, আরও অনেক বেশী।" বুঝতে পারলাম না সেই অনেক বেশীটা কি রকম হতে পারে । যাই হোক, শীতেও সেখানে বাঙালী যখন ইতিপূৰ্ব্বে থেকেছে তখন বেশী ভয় না পেয়ে যাওয়াই ভাল । ৬ই জানুয়ারী রাত্রে ট্রেন ধরে ৮ই সকালে আমরা বোম্বাই পৌছলাম। ৭ই যখন ভোরে মির্জাপুরে ট্রেন থামূল তখন সেখানে ওভারকোট পরে নেমেও দাড়ানো যায় না, শীতে ঠক্ ঠক্‌ ক’রে পা কাপে । বেশী শীত আমাদের দেশেও অনেক জায়গায় আছে। ভাবলাম কিছু কিছু সহ ক’রে যাওয়া ভাল । বোম্বাইএর কাছে শীত প্রায় নেই, ছোট ছোট ষ্ট্রেশন থেকে সমুদ্রের টুকুর বার-বার দেখা যায়। পূজার সময় দেখেছি এখানে যেমন সমুদ্র-শকুন ( sea-gull ) আর তেমনই রঙীন শাড়ী-পরা মারাঠি মেছুনীর ভিড়। এবার দুই জাতীয় ভিড়ই কম, বোধ হয় শীতের দিন বলে। ট্রেনে আমাদের গাড়ীতে এক ফিরিঙ্গি-দম্পতি উঠেছিল, আমার মেয়ে এত অল্পবয়সে জাপান যাচ্ছে শুনে মেমটি তার ভাগ্যের খুব প্রশংসা করল। “শি ইজ ভেরি লকি।" বোম্বাইএ আমরা আতিথ্যপরায়ণ স্বরেশচন্দ্র মজুমদার তারা তখন বাড়ীতে মহাশয়ের বাড়ীতে উঠেছিলাম । ছিলেন না, কিন্তু তার জন্য আতিথ্যে বিন্দুমাত্র ক্রটি হয়নি। বালকেশ্বর রোডের উপর সমুদ্রের ধারেই তাদের চারতলার ফ্ল্যাট । সকালবেলা সমুদ্রের বুক থেকে স্বৰ্য্য উঠে রোদে জল কাচের মত জলে, সেদিকে চাওয়া যায় না। রোটা একটু সরে গেলেই আমরা মা ও মেয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে সমুদ্রের পরিবর্তনশীল নানা রূপ দেখতাম। সারাদিনই ছোট বড় পাল তোলা নৌকা চলেছে, জাল হাতে জেলেরা ভাটার সময় সমুদ্রের ভিতর নেমে যাচ্ছে, ডিঙি নৌকা