পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মনে মনে নিজকে কেবল দৃঢ় করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । ভানুমতী বলিলেন, "আট লাখ টাকা রেখে যান, আমার জ্যেঠশ্ব গুর। র্তার উইলে ছিল, বংশে ছেলে যার হবে, সেই ও টাকা পাবে। ঐ টাকার জন্তে তোর কাকা কম করেনি, আমাদের খুন করতেও তার আটুকাত না । তখন তার বয়স ছিল অল্প, ছেলে হ’বার আশাও ছিল। যাহোকৃ, উনি মারা গেলেন, তখন তার প্রাণটা জুড়ল। কিন্তু তখন আমার ছেলে পেট্রে, সেও এক জ্বালা হ’ল । ভবানী বাঘিনীর মত দরজা আগলে থাকৃত, পাছে কোথা দিয়ে আমার কিছু অনিষ্ট হয়। তার যত রাগ ছিল উদয়ের ওপর, এতট আর কারো ছিল না।” ভানুমতী খানিকক্ষণ চুপ করিয়া হাপাইতে লাগিলেন। সুবীর নীরবেই তাহার হাত ধরিয়া বসিয়া রহিল । ভানুমতী আবার বলিতে লাগিলেন, “ছেলে হবার জন্তে আমি কলকাতায় আসি । আমার বাবা তখন বেঁচে ছিলেন, ভবানীপুরে বাসা করেছিলেন। তার কাছেই ছিলাম। তখনও নিজের দেওয়া ডাক্তার ধাত্রী এনে কিছু একটা গোলমাল করবার ঢের চেষ্টা উদয় করেছিল। কিন্তু ভৱানীকে হার মানাতে পারে নি। উদয়কে জবা কর্বার তার এক রোথ চড়ে গিয়েছিল। কাছেই এক ধাত্রী ছিলেন, মিসেস মিত্ৰ ব’লে, তাকে সে ঠিক করুল, কাউকে আর ঘরে ঢুকতেই দিল না। মেজদি এসেছিল, যেমন অদৃষ্ট, তার স্বামীর অসুখ বলে সেও ঠিক সেদিন চ'লে গেল। ভবানী আর ধাত্রী রইল কেবল ।

  • আমি ত অজ্ঞান হয়েছিলাম, যখন জ্ঞান হ’ল তোকে কোলে দিয়ে ভবানী বললে, “এই নাও ছেলে ।” বাবা তার হাত থেকেই তোকে বুকে নিয়েছিলাম, বুকের রক্ত দিয়ে পালন করেছি, ভগবানের চোখে তুই আমারই ছেলে চিরদিন থাকৃবি । কিন্তু মানুষ এ সম্বন্ধ স্বীকার

করবে না।” সুবীর বাধা দিয়া বলিল, “ম, এক রকম সবই বুঝলাম । কেবল জানতে চাই, কোথা থেকে তারা আমার আমন সময়মত নিয়ে এল। আর তোমার সন্তান যেটি হয়েছিল, তার কি হ’ল ?” - 8y9 سے পরভৃতিক ૭૧૧ ভানুমতী বলিলেন, “মেয়ে হয়েছিল। টাকাটা উদরের হাতে চ’লে যাবে, এই ভয়ে ভবানী তাকে তখনি ধাত্রীর কাছে দিয়ে দেয়। ধাত্রীর ঘরে দু-তিন দিন আগে একটি গরীব মেয়েমানুষ প্রসব হ’তে এসে মারা যায়, ছেলেটি মিসেস মিত্রের কাছেই ছিল। আর কিছু ভবানী ব’লে যেতে পারে নি ।” স্ববীরের চোখের সন্মুখে বিশ্বের মূৰ্ত্তি যেন অন্ত রকম হইয়া গেল। এই কয় মিনিট আগে সে ধনীর বংশের একমাত্র দুলাল, অতুল ঐশ্বৰ্য্যের অধিপতি ছিল। এখন সে নামধাম পরিচয়হীন পথের ভিখারী। তাহার জগতে কেহ আপনার বলিতে নাই, তাহার নাম বংশ-পরিচয় পৰ্য্যস্ত নাই। ভানুমতীর দিকে চাহিয়া সে বলিল, “আচ্ছা মা, আমার বা শুল্বার ছিল শুনলাম। যতটুকু প্রতিকার এখন করা যায়, তা করতে চেষ্টা করব। তুমি দুঃখ কোরো না, সেরে উঠতে চেষ্টা কর । তোমার সাহায্যও আমার দরকার হবে ।” ভানুমতী কাদিতে কাদিতে বলিলেন, “চলে যাস্নে, বাবা। তুই বল এখনও আমাকে ম-ই বলবি। আমার উপর কোনো য়াগ রাখিস্নে ৷” স্থবীর আবার বসিল, ভানুমতীর গায়ে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিল, “ম, তুমিই আমার মা, চির দিন তাইই থাকৃবে। কিন্তু তোমার ছেলে হ'লেও, এ বংশের ছেলে আমি নই। এদের ধনসম্পত্তি ভোগ করবার কোনো অধিকার আমার নেই। তাদের নাম ব’য়ে বেড়াবার কোনো অধিকার আমার নেই। এ সব আমায় ঝেড়ে ফেলতে হবে। স্নেহের উপর আইনের দাবী নেই মা, সেইটুকু কেবল আমার থাকবে। আর যার উপর অন্যায় হয়েছে সবচেয়ে বেশী, সেই মেয়েকে খুজে বার করতে হবে। তার প্রাপ্য তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। টাকাও যেটা কাকার প্রাপ্য তা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তুমি মন শক্ত ক’রে সেরে ওঠ মা, এত কাজ প’ড়ে রয়েছে। আমার ঘরে বসে থাকৃলে চলবে না, কত দেশে, কত জায়গায় ঘুরতে হবে ।” তানুমতী বলিলেন,“বাবা,আমন ক'রে বলিসনে। তোকে আমি অমন করে ভাসিয়ে দিতে পারব না। এদের কিছু তুই .