পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

aجسb নিজের মা বলে জানতাম। কিন্তু ঘটনাচক্রে কয়েক দিন হ’ল অনেকগুলি গুপ্ত ব্যাপার প্রকাশ হ’য়ে পড়েছে। সৰ শেষ অবধি অনুসন্ধান ক’রে জানা গেছে যে, যদিও জমিদার-গৃহিণীর সন্তান হয়েছিল, সে সন্তান আমি নয়। তার একটি মেয়ে হয়েছিল, ধাত্রী এবং বাড়ীর এক জন পুরনো ঝি ষড়যন্ত্ৰ ক’রে মেয়েটিকে সরিয়ে ফেলে, একটি নবজাত ছেলেকে সেখানে রেখে দেয়। সেই ছেলে আমি, সেই মেয়ে আপনি " কৃষ্ণ রুদ্ধনিশ্বাসে এই অদ্ভূত কাহিনী শুনিতেছিল। এখন জিজ্ঞাসা করিল, "এত বড় একটা কাও বাড়ীর লোকে জানতে পারল না ? মা তাতে রাঙ্গী হলেন ? তার স্বামী কিছু জানলেন না ? কেন এমন ভয়ানক কাজ ঝি বা ধাত্রী করতে গেল ?” স্থবীর বলিল, “একে একে বলছি। যে-ঘরে সস্তান হয়, তার ভিতরে ধাত্রী, ঐ ঝি এবং ধাত্রীর এক ঝি ছাড়া কেউ ছিল না। যা অজ্ঞান হ’য়ে ছিলেন, তিনি কিছুই জানতে পারেননি। মাঝ রাত্রে সন্তান হওয়ায় বাড়ীর অন্ত লোকের ঘুমিয়ে পড়েছিল। মেয়েকে সরিয়ে, ছেলে এনে রেখে, তবে তাদের জানান হয় । ধাত্রীর বাড়ী খুবই কাছে ছিল, সহজেই তারা এই কাগুটা করতে পেরেছিল। আমার মা ভানুমতী দেবী গর্ভবতী অবস্থার বিধবা হন। পুত্রসন্তান না হ’লে বংশ থেকে অনেক লাখ টাকা আর একজন লোকের হাতে চ’লে যেত। সে আত্মীয় হ’লেও অভিবড় শত্রু। তার হাতে থেকে রক্ষা করবার জন্তে খানিক, এবং তার প্রতি অত্যন্ত জাতক্রোধ থাকায় ঝি ভবানী এই কাজ ক’রে থাকবে।” কৃষ্ণ' বলিল, “কি হ’য়ে সে এতবড় কাজ করতে সাহস পেল ?” সুবীর বলিল, “নামে ঝি হলেও কাৰ্য্যতঃ সেই বাড়ীর কত্রী ছিল। আমার মাকে সেই মানুষ করেছিল, তার স্বার্থসম্বন্ধে সে খুবই সজাগ ছিল। আপনাকে যিনি মানুষ করেছিলেন, সেই মিসেস মিত্রই যে ধাত্রীর কাজ করেছিলেন তা বুঝতেই পেরেছেন " কৃষ্ণা বলিল, “হ্যা, তা ত বুঝতেই পারছি। কি ক’রে এ সব কথা প্রকাশ হ'লু ?” প্রবাসী—অশ্বিন, ১৩৩৫ [ २४* छांनं, »न १७ সুবীর বলিল, “ঝি ভবানী মরবার সময় মাকে সব কথা খুলে বলে যায়। তিনি আমায় বলেন। তারপর খোজ ক’রে বাকিটুকু বার করতে হয়েছে।” কৃষ্ণা চুপ করিয়া রহিল। এতক্ষণ যেন সে গল্প শুনিতেছিল। ব্যাপারট। তাহার নিজের জীবনে কি আশ্চৰ্য্য পরিবর্তন আনিবে তাহ ধারণাও করিতে পারে নাই। ক্রমে ক্রমে তাহা সে এখন অনুভব করিতে আরম্ভ করিল। এতদিনের জীবন তাঁহার আজ শেষ হইয়া গেল। জীবননাট্যের দুই তিনটা অঙ্কের পর যবনিকা পড়িল । আবার যখন তাহ উঠিবে, তখন অন্ত দৃপ্ত। কৃষ্ণ রার, খ্ৰীষ্টান ধাত্রীর কুড়ানো পালিত কল্প অন্তৰ্হিতা, তাহার স্থলে অতুল বিভবের অধীশ্বরী, পরাক্রান্ত হিন্দু-জমিদারের একমাত্র কন্থা। কিন্তু এই নূতন আবেষ্টনে তাহাকে মালাইবে কি ? সে কি পদে পদে আঘাত পাইবে না, আঘাত দিবে না ? কৃষ্ণ একবার সুবীরের দিকে চাহিয়া দেখিল। এই মানু্যটি না জানি মনে মনে তাহাকে কি ভীষণ অভিশাপ দিতেছে। এ আজ পথের ভিখারী হইল কৃষ্ণারই জন্য । কৃষ্ণ যদি বাচিয়া না থাকিত, তাহা হইলে সুবীরকে ত নিজের আজন্মের মুখসম্পদের নীড় ছাড়িয়া বাহির হইতে হইত না ? এ আঘাত কৃষ্ণার অনিচ্ছাকৃত, কিন্তু ইহার ফল সমানই মারাত্মক । কার্ডে সুধীরের নাম দেখিয়া তাছার বুকের ভিতর যে আনন্দের শিহরণ জাগিরা উঠিয়াছিল, সে ত এই সম্পদ পাইবার আশায় নয়। যে-ঐশ্বৰ্য্য রমণীর হৃদয়ে সৰ্ব্বাপেক্ষা কামনার ধন, তাহা কি কৃষ্ণ আজ চিরদিনের মত হারাইল না ? স্থবীর তাহাকে আর ভুলিবে না, ইহা সত্য। নিজের অদৃষ্ঠাকাশে করাল ধূমকেতুর মতই সে কৃষ্ণাকে মনে রাখিবে, সৰ্ব্বস্বঅপছন্ত্রী পাপিষ্ঠা বলিয়াই স্মৃতিপটে বিদ্বেষের রঙে তাহাকে আঁকিয়া রাখিবে। কিন্তু কৃষ্ণার অপরাধ কোথায় ! নিষ্ঠুর নিয়তির হাতে সে খেলার পুতুলমাত্র। সুবীরের দিকে ভাল করিয়া চাহিতেও তাহার সঙ্কোচ বোধ হইতেছিল। না জানি, কি সে তাহার দৃষ্টির