পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৮ কোট, কাশ্মীরি কাপড়, সাদা মলমল--এই সমস্তই রংবেরং আধা-বিলাতী ভারতের বহিরাবরণ ; ভারতের এই সকল লোকই সভাস্থলে সমাসীন। চন্দাবকার বিপ্লবকারী দলের লোক নহেন। “ইনি মিতবাদী, রাজভক্ত প্রজ, আমাদের একজন মিত্র”–এই কথা, Times of Indiaর পরিচালক আমাকে বলিলেন। কিন্তু দেখিবে, এই মিত্রটা খুব স্পষ্টবক্তা। আশাময় মুখের ছবি আঁকিবার এ সময় নহে। দুর্ভিক্ষ ত ভারতের একটা পুরাতন রোগের সামিল হইয়া দাড়াইয়াছে, কিন্তু এবার আরও ভীষণ আকারে দেখা দিয়াছে ; এরূপ মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দুর্ভিক্ষের ইতিহাসে অজ্ঞাতপূৰ্ব্ব। বাগ্মী বলিলেন ;–“তোমাদের বিগত অধিবেশনের পর হইতে ভারতের উপর দিয়া একটা ভয়ানক বিপদ চলিতেছে... ভারতের কর্তৃপক্ষ স্বীকার করিয়াছেন, এরূপ দারুণ দুর্ভিক্ষ ভারতে আর কখন হয় নাই...বর্তমান সময়ের এখন যেটি মহাসমস্তা, সেই সমস্তাটি কতটা গুরুতর ও জরুরী,—এই দুর্ভিক্ষ, দায়ী কর্তৃপক্ষকে চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইল ; ইহাতে আর কিছু না হউক, সরকারের একটা শিক্ষা হইয়াছে।” স্থল কথা:–ভারত অনাহারে মরিতেছে ; তাহার অন্ন চাই। অতএব এ সমস্তাটি এমন নহে, যাহার আলোচনা অন্য দিনের জন্য স্থগিদ রাখা যাইতে পারে। আজই এবিষয়ের একটা মীমাংসা করা কৰ্ত্তব্য । ত্রিশকোটি ভারতবাসীর পক্ষে ইহা একটা জীবন-মরণের সমস্ত । দেখ, কেমন সময়ে ১৯০০ অব্দের কংগ্রেসের অধিবেশন আরম্ভ হইয়াছে। এরূপ বিষাদ-অন্ধকার ইহার পূৰ্ব্বে কেহ কথন দেখে নাই। তার পর ভাবিয়া দেখ, শাসনকার্য্যে যে জাতি পৃথিবীর মধ্যে সৰ্ব্বপ্রধান, সৌভাগ্যের বিষয়, ভারত সেই জাতির দ্বারা পরিশাসিত হইতেছে— আর, ১৫০ বৎসর হইতে এই শাসনকাৰ্য্য চলিতেছে ; ভাবিয়া দেখ, ভারতে কত খাল আছে, কত রেল-পথ আছে...ইহার গুঢ় রহস্তটা এইখানেই, এই রহস্তটি উদ্ভেদ করা আবশুক । চনাবৰ্কার বলিলেন, এস্থলে ইংরাজের রাষ্ট্রনীতিই ঘোরতর অপরাধী। এই রাষ্ট্রনীতি সমস্তই উপেক্ষা করিতেছে,“সমস্তই ঘটিতে দিতেছে, ইহা একেবারেই প্রবাসী। [ ৮ম ভাগ। ৪র্থ সংখ্যা । ] মতাই এই দারুণ সত্যটি রাজপুরুষেরা একপাশে সরাইয় রাখেন। চন্দাবকার বলেন, ভাইসরয়ের প্রদত্ত তথ্যতালিকা হইতে আমি এই সকল সংখ্যাঙ্ক সংগ্ৰহ করিয়াছি। বাবস্থাপক সভায় সম্ভাষণকালে বড়লাট নিজেই চাষার আয়ের অঙ্ক ১৭ টাকা বলিয়া নিৰ্দ্ধারিত করেন। ইহাই প্লট ও স্বজন্ম বৎসরের আয়। এই অবস্থায় চাষাকে কি বলা যাইতে পাবে, তোমাদের এই মুখের গ্রাস স্ট্রভাগে বিভক্ত করিয়া, একভাগ বৎসরের জন্য রাখিয়া দেও? ইংরাজসরকার এক একবার হঠাৎ জাগিয়া ওঠেন, ifা এক একবার তাহদের মনে দয়ার আবেশ উপস্থিত * , ছাদের প্রকৃত রাষ্ট্রনীতি জরবিকারের রাষ্ট্রনীতি, ব্যুরোগের রাষ্ট্রনীতি! মহাজনের উপর আড়ী করিয়া উীর তাড়াতাড়ি চাষার সাহায্যে ধাবিত হয়েন। উহার এইভাবে কতকটা কাজ করিয়াছিলেন ; কিন্তু ইংরাজ| সরকারের প্রতিবিধানের ব্যবস্থা শুধু একটা চোখ ভুলানো উদাসীন : একি কথন কল্পনা করা যায় যে, আপনাআপনিী সব ছুরস্ত হইয়া আসিবে ? যখন উহারা প্রতিবিধানকার কোন কাজে হাত দেন, তখন কি ভাবে কাজ করেন। এখানে একটা গর্তের মুখ বুজাইয় দেন, ওখানে একটু ফাটার মুখে কাঠ গুজিয়া দেন, যেখানে একটু চীন ! খাইয়াছে, যেখানে একটু ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, উপস্থিতদন্ত সেই সেই স্থানে টুকি টাকি মেরামং করেন। এ সমস্তু টুকরোটাক্রা মেরামং না করিয়া, শুধু প্রশমনকারী ঔষধের ব্যবস্থা না করিয়া, একটা সৰ্ব্বত-প্রসারিত দৃষ্টির দ্বার অনিষ্টের সমস্ত কারণ নিরীক্ষণ করিয়া, উহাদিগকে সমূলে উৎপাটন করা আবশ্যক...ইহাদের এই শাসন যন্ত্রটা অত্যন্ত গুরুভার ও মন্থরগামী ; কমিসন বসে, পরামর্শ সভা বায়, রিপোর্ট গাদ করা হয়, কিন্তু কাজে কিছুই হয় না। এই কথাটা আমার কানে বাজিল ; ইহার পূৰ্ব্বেও এই কথা আমি অন্যত্র শুনিয়াছি। অসন্তুষ্ট লোকেরা আমাদের সরকারী ক চারীবর্গের কার্য্যসম্বন্ধেও এইরূপ কথা বলিয়া থাকেন । কিন্তু ইংরাজের এমন নিয়ম-পদ্ধতি, এমন চমৎকার সিভিল সার্ভিস্,—যাহারা সমস্ত উক্তি জনক কাৰ্য্যের স্বতঃপ্রবর্তক,—এমন “বাদশাই-জাতি" - এ সমস্তই আকাশ-কুমুম! দুই তিনটি সুবিধাজনক অলস কুসংস্কার-এই জড়বৎ" রাজপুরুষবর্গের দুইটি কাণ। উহাদের মধ্যে কেহ কেন্থ বলেন, “দুর্ভিক্ষ অনিবাৰ্য্য, কেন না ফসল জন্মায় না, বৃষ্টি হয় না” পূৰ্ব্বাপেক্ষা কম বৃষ্টি হয়, এ কথা কে বিশ্বাস । করিবে ? M. De Buelowর ন্যায় কেহ কেহ আবার বলেনঃ-ইহা হিন্দুদেরই দোষ, উহারা “খৰ্গোসের স্থা বংশবৃদ্ধি করে।” আরও একটা বলবৎ কারণ,—উহার উৎসবে, ভোজে, বিবাহে আপনাদিগকে সৰ্ব্বস্বাস্ত করি। জিনিস। এটা বেশ জেনে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে -চাষ আত্মরক্ষা করিতে না পারে সে বিষয়ে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আছে,—সরকার মহাজন অপেক্ষাও অধিক লোলুপ! এদিকে চাষা, এত বেশী খাজনা দিতে o না বলিয়া চীৎকার করিতেছে, ওদিকে রাজস্বের চারী খাজনা আদায়ের জন্ত ঘাটদিয়া বসিয়া আছেন। নে কর, কোন চাষা-স্বজন্মার দরূণই হউক, খালকাটার দরুণই হউক, রেল আসার দরুণই হউক—ফসলের কিছু বৃদ্ধি করিতে পারিয়াছে ; আমনি · রাজস্ব-কৰ্ম্মচারী স্বাক্ষার খাজনার হার বৃদ্ধি করিলেন। উৎসাহ দিবার লংকার পদ্ধতি আর একটা দৃষ্টান্ত –লর্ড মেয়ে কৃষিসচিবের পদ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন—সে পদটা তাহার সঙ্গে সঙ্গেই লোপ পাইল । একদিন তাহাদের মনে হইল, ভারতের মহারাষ্ট্রীয় সভা । স্থবিধাজনক, সেই সকল অযুক্তিপূর্ণ কারণের উল্লেখ কলি উইরা চোখ বুজিয়া থাকেন ; চোখে আঙুল দিয়া দেখাইলেণ্ড উইরা দেখেন না যে, দুর্ভিক্ষের দারুণত ও ব্যাপকতাক্রমশী বুদ্ধি পাইতেছে, কারণ সৰ্ব্বস্বাস্তু চাষা অর্থ সঞ্চয় করিত্বে পারে না, তাই অগত্য প্লেগের কবলে পতিত হয়। ইহা প্রকৃত কথা, এবং পাছে নিজের উৎসব-আমোদের ব্যাঘাত । o ফেলে..চন্দাবকার বলেন, যে সকল কথা উহঁদের পক্ষে |

| शडिझे ठेिद् ।। গীত হইয়াছে, উহাদিগকে নূতন শিক্ষা দিবার কিছুই চামাদের কার্যাপতি সমস্ত উল্টাইতে হইবে ;–এই মনে করিয়া যাহারা আপনাব ব্যবসাই বোঝেন না তাহারা iাষাকে চাষার ব্যবসায় সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে উষ্ঠত হইলেন। স্বাবার পরদিনই তাহীদের হঠাৎ মনে হইল,—না, পুরাতন চাষীদের কাজে চাষার পূর্ণতায় ునను নাই। ফলত, এতদিনের মধ্যে আসল কাজ কিছুই হয় নাই। তাহার পর বাগনী, সরকারের শিল্পসম্বন্ধীয় নীতির কথা উপস্থিত করিলেন। এই রাজভক্ত ইংরাজের মিত্র,—যে বিষয়ে বলিতে খুবই সঙ্কোচ হয় সেই বিষয় সম্বন্ধেও কতকগুলা স্পষ্ট স্পষ্ট কথা তাহার মিত্রদিগকে শুনাইয় দিয়াছেন। আরও কতকগুলা বলবত্তর স্বার্থ যদি তাহার মিত্রদিগকে অন্ধ করিয়া না রাখিত, তাছা হইলে তাহার ঐ উত্তেজনা-বাক্য র্তাহাদের ধৰ্ম্মবুদ্ধিকে নিশ্চয়ই উদ্বোধিত করিতে পারিত। প্রথমে,--যাহা সৰ্ব্বসাধাণের মনোগত ভাব তাহাই বাক্যে ব্যক্ত করিয়া তিনি বলিলেন, যাহাতে আমাদের যুবকেরা হাতের কাজ কিছু শিক্ষা করিতে পারে এই উদ্দেশে কতকগুলি ব্যবহারিক-শিল্প বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা নিতান্তই আবশুক। আমি ভারতে আসিয়া অবধি সংবাদপত্রে সভাসমিতিতে, এই বিষয়েরই কথা সৰ্ব্বত্র শুনিতেছি। একথা খুবই ঠিক, যে দেশে ধ্যানের দিকেই লোকের বেশী ঝোক সে দেশে মিস্ত্ৰিকৰ্ম্মের শিক্ষানবীসী নিতান্তই আবশ্যক। পর বৎসরে, যখন আবার চন্দ্রাবকরের সহিত ফ্রানসে আমার সাক্ষাৎ হইল, তাকে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এই বিষয়টা কতদূর অগ্রসর হইয়াছে। "একই ভাবে আছে, কিছুই অগ্রসর হয় নাই। এবিষয়ের কথা অনেক হইয়াছে। কিন্তু ইংরাজ সরকার এই বিষয়ে কোন সাহায্য করিলেন না, কোন ভারই গ্রহণ করিলেন না। তাহারা ব্যক্তিবিশেষের চেষ্টা ও যত্নের উপরেই নির্ভর করিয়া আছেন।” এই সমস্তার আর এক দিক্‌ আছে, বাগ্‌নী সেটি বেশ বিষদ করিয়া দেখাইয়া দিয়াছেন। সাদা কথাটা এই :-ভারত ব্যবসা-বাণিয্যের উন্নতি করিবে, ইহা ইংলও মোটেই চাহে না ; ম্যাঞ্চেষ্টারের কাপড়ের কার্টুতির জন্তই ভারত রহিয়াছে। ইংলণ্ডের বড় বড় কারখানাওয়ালারা বড়লাটের হাত আট্‌কাইয়া রাথিয়াছে। এই উদ্দেশু সাধনাৰ্থ ইংরাজের বিধিব্যবস্থা যতই স্বার্থপর ও গর্হিত হউক না কেন, কোন প্রতিবাদই সেই সকল বিধিব্যবস্থাকে ঠেলিয়া রাখিতে পারে না। প্রথমত, ম্যাঞ্চেষ্টারের কাপড়ের শতকরা ৫ টাকা যে প্রবেশ শুল্ক ছিল তাহ রহিত হইল। তাহাতেও যখন প্রকৃত অভিপ্রায়