পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२०७ শাসন-তন্ত্র স্বদেশে প্রবর্ভূিত করিয়াছে, তাহারা জাতিতে ইংরাজ ; ভারত শুধু শিক্ষাবিষয়ে ইংরাজ। এইবারকার অভিজ্ঞতা নূতন, ক্ষেত্র অসীম, কাৰ্য্যপরিসর অশেষ। এইবার প্রাচ্য লোকদিগের সহিত ইংরাজের কারবার, —এমন দেশের সহিত কারবার যেখানে নানা প্রকার তাষ৷ প্রচলিত ; এক দেশের মধ্যে এত ভাষা আর কোথাও দেখা যায় না। এইবার কার্য্যক্ষেত্রে এমন সব লোক আনিতে হইবে যাহারা সাংসারিক বিষয়ে নিঃস্বাথ ; এইবার স্বাধীন আলোচনার শাসনতন্ত্র প্রবর্তিত করিয়া, যে দেশে ত্রিশকোট লোক সাগরতটের বালু-কণার মত পরিব্যাপ্ত, সেই দেশের লোকের চিত্ততুষ্টি সম্পাদন করিতে হইবে . এই সকল বালুকণা এখন জমাট বাধিতেছে। এই জাতীয় আন্দোলনটা এরূপ প্রবল ও এরূপ সংক্রামক,—একদিন হয় ত ইহা প্রান্তসীমা পার হইয়া যাইবে । লাহোরের একটি ছাত্র আমাকে বলিয়াছিলেন –“সরকার বাহাদুর চীনের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য এখান হইতে শিখসৈন্ত পাঠাইতেছেন—এ কাজটা ভাল হইতেছে না। চীনেরা যে আমাদেরই ভাই-বেরাদর, আমাদেরই লোক !” কথাটা নূতন। যদি জাপান কিংবা চীন, কোন দিন যুরোপের বিরুদ্ধে সমস্ত এসিয়ার সহিত মৈত্রীবন্ধন করে— সেই দূর-ভবিষ্যতের কথাটা একবার ভাবিয়া দেখ! শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি রামকুমার নন্দী। কবি রামকুমার নদীর জন্মভূমি শ্ৰীহট্ট জিলার অন্তর্গত বেজুরা নামক স্থানে। আজ প্রায় পাঁচ বৎসর হইল সপ্ততিবর্ষদেশীয় কবি রামকুমার নন্দী মানবলীল। সংবরণ করিয়াছেন। তাহার যখন শৈশবকাল তখন পূৰ্ব্ববঙ্গে স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয় নাই। ব্রাহ্মণের ছেলেরা চতুষ্পাঠীতে অধ্যয়ন করিত ; কায়স্থ বৈদ্যের ছেলেরাও কদাচিৎ কেচিং টোলে পড়িত কিন্তু অধিকাংশেই গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় পড়িত। দুর্ভাগ্য বশতঃ রামকুমার টোলেও পড়েন নাই—পাঠশালায়ও যে বিশেষ পড়িতে আসিয়াছিলেন তাহা বোধ হয় না। পিতার প্রবাসী । অবস্থা অতি শোচনীয় ছিল, অতি কষ্টে গ্রাসাচ্ছাদন মাত্র চলিত ; গ্রামে পাঠশালা ছিল না—পুত্রকে দূরদেশে পাঠাইয়া পড়ার নিমিত্ত অর্থব্যয় করিবার সামর্থ্য র্তাহার ছিল না। পরিবারস্থ লোকেরাই রামকুমারকে অক্ষর পরিচয়ে যৎকিঞ্চিৎ সাহায্য করিয়াছিলেন। অধ্যবসায়ুশীল বালক রামকুমার নিজচেষ্টায় যাহা কিছু তাৎকালিক বাঙ্গাল লেখা পড়া শিথিয়াছিলেন ; কিয়দিন এক মুন্সীর নিকট পারসীও কতকটা পড়িয়াছিলেন। যত্নের সহিত হস্তাক্ষরটি সুন্দর করিয়াছিলেন এবং কাশীদাসের মহাভারতথানি প্রায় কণ্ঠস্থ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। বাল্যকালেই সঙ্গীতের প্রতি র্তাহার বিশেষ অনুরাগ জন্মিয়াছিল ; গ্রামস্থ জনৈক কলাবিং ব্রাহ্মণ র্তাহাকে এতদ্বিধয়ে বিশেষ সহায়তা করিতেন। রামকুমারের যখন বয়স চতুর্দশ বৎসর মাত্র তখনই তিনি “দাতাকর্ণ” নামক একটি যাত্রার পালা রচনা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। একজন অল্পশিক্ষিত পল্লীগ্রামস্থ বালকের পক্ষে ইহা কম প্রতিভার পরিচায়ক নহে। অবস্থা ভাল না হইলেও রামকুমারের বংশীয়েরাবেজুরার নদী মজুমদারগণ, আভিজাত্যে পুৰ্ব্ববঙ্গের পূর্বাংশে বিশেষ সম্মানিত । ইহার যদিও নিজেদের কায়স্থ বলিয়া পরিচয় দেন, তথাপি উহারা মূলতঃ বৈদ্য। এই অঞ্চলে বৈদ্য-কায়স্থের স্বাতন্ত্রা নাই—উভয় সম্প্রদায় মধ্যে বিবাহাদি সম্বন্ধ অবাধে চলিয়া থাকে—এই নিমিত্তই বোধ হয় ঈদৃশ জাতি-বিভ্রম। যাহা হউক, নন্দীদের পুৰ্ব্বপুরুষেরা রাঢ় দেশ হইতে প্রথমতঃ ময়মনসিংহ গচিহাটা-বনগ্রামে আইসেন, তৎপর রামচন্দ্র নন্দী নামক তাহদের একজন বেজুরা আসিয়া উপনিবিষ্ট হন। প্রাগুক্ত বনগ্রামে এখনও এই নন্দী বংশের শাখা বিরাজমান এবং সহর সেরপুরস্থিত এই বংশেরই জমিদারগণ “নন্দীগুপ্ত” এই উপাধি গ্রহণ পূৰ্ব্বক আপনাদিগকে বৈদ্য বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। এতদঞ্চলে বেজুরার নদীদিগকে “কাউয়া” নন্দী বলে, ইহাও উহাদের বৈদ্যত্বের এক প্রমাণ ; কেননা বৈস্তের সাত শ্রেণীর মধ্যে “ছহি সেন” “ত্রিপুর গুপ্ত” “কাউ নদী” ইত্যাদি সংজ্ঞা সুপ্রসিদ্ধ। রাজকাৰ্য্যোপলক্ষে অবস্থান করিতেন। রামকুমারের | { wभ उभि । । १{ नरभा । । | এই প্রসিদ্ধ নন্দীবংশের অনেকেই কাছাড় শিলচরে l ਆਿਸ਼ হইলেও দারিদ্র্যের তাড়নায় তাহাকে সত্বরই কাজকর্মের চেষ্টা দেখিতে হইল এবং আত্মীয়বহুল শিলচরের কিছু তদৰ্থে তাহার দৃষ্টি পতিত হইল। তিনি প্রথমতঃ তিনটাক মাত্র বেতনে তত্ৰত ডিপুটি কমিশনরের আফিসে কিয়, অবশেষে স্বাভাবিক উষ্মম ও অধ্যবসা সহকারে নিজে নিজে কাৰ্যোপযোগী ইংরেজী লেখাপড় শিক্ষা করিয়া ঐ আফিসের একাউণ্টেণ্ট গিরি ও সৰ্ব্বশেষে ৮০ বেতনে স্বাঞ্জাঞ্চির কার্য্য পৰ্য্যন্ত করিয়াছিলেন। আজি কালি যেমন যে সে লোকেই লেখনীধারণ করিয়া প্রবন্ধ লিখে, কবিতা করে, গল্প সাজায়, তখন অর্থাৎ অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূৰ্ব্বে যখন রামকুমার নন্দী কাৰ্য্যজীবনে প্রবিষ্ট হন, তেমনটা ছিল না। বিদ্যাসাগর মদনমোহন অক্ষয়কুমার প্যারিচাদ ঈশ্বর গুপ্ত মাইকেল মধুসূদন প্রভৃতি বিখ্যাত সাহিত্যসেবকগণ তখন গদ্যপন্থ রচনার নূতন নূতন আদর্শ বঙ্গজগতে প্রদর্শন করিতেছিলেন। তাহাদের অনুকরণে কেহ কেহ কিছু কিছু লিখিত বটে কিন্তু দেশে মুদ্রান্ত্রের তখন এমন প্রাচুর্ভাব ছিল না, অথবা পাঠশালায় বিষ্কারও এমন প্রচার ছিলনা যে সুলভে ও অল্পায়াসে গ্রন্থের মুদ্রাঙ্কন হইবে এবং মুদ্রিত পুস্তকের লাভজনক বিক্রয় হইবে। সুতরাং নানাকারণে সেই সময়ে কবি বা গ্রন্থকার শ্রেণীর লোকের সংখ্যা অতি অল্প ছিল। কবি বা গ্রন্থকার অল্পসংখ্যক হইলেও তখন বঙ্গদেশে কাব্যের যে অপ্রাচুর্য ছিল একথা কিন্তু বলিতে পারি না ; প্রভৃতি সঙ্গীত সহযোগে কাব্যের যে শক্তি তাহ ঐ সময়ে বঙ্গের পল্লীতে পল্লীতে, বর্তমান সময় হইতে অধিকতর পরিমাণে পরিলক্ষিত হইত। আমরাই স্বকীয় শৈশবাবস্থায় বঙ্গের প্রায় পূৰ্ব্বতম প্রান্তে গ্রামে গ্রামে যতগুলি কবির দল, যাত্রার দল প্রভৃতি দেখিয়াছিলাম এখন তাহার চতুর্থাংশও দেখিতে পাইতেছি না। এই যে কবির দল যাত্রার দল পাচালীর দল বঙ্গের স্বর পল্লীতেও দেখা যাইত ইহাদের জন্ত গান ও কবিতা বাধিয়া দ্বিত কে ? গাজনে ও কীৰ্ত্তনে যে সকল পদাবলী প্রযুক্ত হইত অথৰ। খাম পূজাদিতে যে সকল মালসী গান হইত এই সকলেরই বা রচয়িতা ছিল কে ? পাঠক কখনও মনে করিবেন না যে কেবল হরু ঠাকুর নিতাই २०१ বৈরাগী বা আন্টনী ফিরিঙ্গী, দাগুরায় বা রসিকরা, রামপ্রসাদ বা কমলাকান্ত প্রভৃতির গান ও রচনাবলী লষ্টয়াই পূৰ্ব্ববঙ্গবাসীরা নাড়াচাড়া করিত। ফলতঃ কবি বা গ্রন্থকার নামে পরিচিত হইবার স্পৃহা অথবা সুযোগ স্ববিধ না থাকিলেও ঐ সকল প্রান্তবৰ্ত্তী স্থানেও প্রতিভাশালী লোক জন্মিত, কিন্তু স্থানদোষে তাহদের কথা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান পাইতেছে না। শিলচারে অবস্থান কালে রামকুমার সঙ্গীতের সবিশেষ চর্চা করিবার অবসর পাইয়াছিলেন ; কিন্তু সাহিত্যের অনুশীলনকল্পে তৎকালপ্রচারিত পুস্তক ও পত্রিকাদির পাঠ ভিন্ন আর কিছু করিতে পারিয়াছিলেন কিনা সন্দেহ। যাহা হউক যাত্রার দলে গীত হইবার জন্ত পালা প্রস্তুত করিতেই তিনি তদানীং তদীয় ভারতী প্রয়োগ করিয়াছিলেন। পাঁচালীর পালাও তিনি কয়েকটা প্রস্তুত করিয়াছিলেন। তাহার রচিত সমস্ত যাত্রা ও পাঁচালীর পালার নাম নিম্নে লিখা হইল :– যাত্রা । ১। নিমাই সন্ন্যাস, ২। সীতার বনবাস, ৩। বিজয় বসন্ত, ৪। পদাঙ্ক দূত, ৫ । কংশ বধ, ৬। উমার আগমন, ৭ । মার্কণ্ডেয় চণ্ডী, ৮। রাসলীলা, ৯। দোল, ১৭ । কুলন, ১১ । ভগবতীর জন্ম ও বিবাহ।* পাচালী ! ১ । কলঙ্কভঞ্জন, ২। লক্ষ্মী সরস্বতীর দ্বন্দ্ব, ৩। ১৩০৫ বাঙ্গালার বোধন । বলা আবশ্যক যে এই সকল পালার অনেকগুলি শিলচার হইতে পেনশন গ্রহণপূর্বক বাট প্রত্যাবর্তনের পর রচিত হইয়াছিল। এই পালাগুলির অধিকাংশই স্থানীয় গানওয়ালাদের দল কর্তৃক গীত হইয়া প্রচারিত হইয়াছে। কিন্তু কোনটিই মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় নাই। নব্য লেখকগণের রীতিতে তিনি গ্ৰন্থরচনায়ও মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। নিম্নে তদীয় "গ্রন্থাবলীর নাম প্রদত্ত হইল ।

  • রামকুমারের বাল্য-রচিত "দাতাকর্ণ" পালার উল্লেখ এখানে করা হইল না, কেননা তাহার পাণ্ডুলিপি পৰ্য্যস্ত লোপ পাইয়াছে।