পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু জিনিষ বিদেশী-আগাগোড়া বিদেশী ; শরীর হইতে আরম্ভ করিয়া স্বচটী পর্য্যস্ত বিদেশীর হাতে অর্পিত হইয়া গিয়াছে। ব্রহ্মদেশের খাস আমদানী লইয়া লইয়া যাহার দোকান করিয়াছে, তাহারা অতি অনাদৃতের ন্যায় একটা কোণে বসিয়া আছে। বিলাতী জিনিষের চাকচিকা অতদূরে যাইয়াও তাহাদিগকে নৈরাপ্ত বিলাইয় আসে ; কিন্তু দোকানীরা জানে যে ঘৃণার দৃষ্টি তাহাদের শির পাতিয়া সহ করিতে হইবে ; কাজেই তাহার প্রতিদানে স্বীয় কাতর দৃষ্টি টুকু নিক্ষেপ করিয়াই তাহারা নিরস্ত হয়। ' মেলায় কাপড়ের দোকানই বেশী, কাপড়ের গ্রাহকও যথেষ্ট। তাই দেশী বিদেশী নানা রকমের কাপড় দোকানে দোকানে রাশীকৃত হইতেছিল। বৰ্ম্মার বড় বর্ণপ্রিয়, যত দিন ভিতরে রঙ্গ রস থাকিবে ততদিন ইহার রঙীন কাপড় ছাড়ে না ; সুতরাং প্রত্যেক দোকানেই রক্ত পীত নীল হরিৎ প্রভৃতি নানা রঙের কাপড় গাদায় গাদায় ক্রেতাদের আগমন প্রতীক্ষা করিতেছিল। আর স্বধু কাপড়ের সমৃদ্ধি ছাড়া প্রত্যেক কাপড়ের, দোকানেই আরও একটা প্রকাও আকর্ষণের আয়োজন করা হইয়াছিল। প্রত্যেক দোকানেই একটা হুইটা করিয়া “আপিয়ো” (অধিবাস্থত। যুবতী) বিক্রেত্ৰী ; তাহাদের গা-ভরা গয়ন, মুখ-ভর হাসি, মাথা-ভরা চুল, আর আঁথি-ভরা অভিবাদন। একবার কাপড় কিনিতে গেলে ইহাদের মিষ্টিকথায় কাপড়ের মহাৰ্ঘতা পর্যান্ত ভুলিয়া যাইতে হয়, মনে হয়—“যাক দুটাে পয়সা, জিনিষটা না কিনিলে বুঝি এমন সুন্দর হৃদয়ে আঘাত লাগিবে।" সত্য সত্যই বাঙ্গল দেশ হইতে প্রথম আসিয়া এদের মুথে ঝলক ঝলক হাসি, সুচতুর বাক্যবিদ্যাস, ও বিলাসব্যঞ্জক দৃষ্টি দেখিয়া হয়ত একটু লঘুচিত্তষ্ট হইতে হয় ; কিন্তু দুই তিন দিনেই মনের সে অবস্থা চলিয়া যায় ; বাজারে বসিয়া হাসিয়া কথা কহিলেই যে স্ত্রীলোকের স্বভাব দুষ্ট হইবে সে ভাবটা তখন আর থাকে না। কারণ, আমাদিগকে মনে রাথিতে হইবে, ব্রহ্মদেশে অবরোধপ্রণা নাই ; সুতরাং সকল শ্রেণীর স্ত্রীলোকই বাহিরে চলাফির ও কাজ কৰ্ম্ম করিতে পারেন। এখানে আসিয়া এক কাপড়ওয়ালীর সহিত আমাদের চেনা পরিচয় হইয়াছিল। সেও নিয়াণ্ডুর ফায়া পোয়েতে প্রবাসী। ৮ম ভাগ। দোকান লইয়া আসিয়াছে। তাহার দোকানের নিকট দিয় । দয়া নিজের ছুতই সে আমাদিগকে ডাকিল। আমরাও পরিশ্রম্ব হইয়াছিলাম - তাহার অভ্যর্থনা সাদরে গ্রহণ কৰি৷ দোকানে প্রবেশ করিলাম। - - দোকান জুড়িয়া একখানি পাট পাতা ; তার উপর একথানি মাঝারি আকারের সুন্দর গালিচা ; আমরা স্ট্রে গালিচার উপর উপবেশন করিলাম। কাপড়ওয়ালী চকচকে ঝকঝকে একটা পানের বাক্স আমাদের সম্মুখে বসাই৷ দিয়া নম্রভাবে বলিল—“বাৰু পান খাও”। বৰ্ম্মার পানের বাক্সগুলিতে ৩৪টা করিয়া ডাল থাকে। একটাতে পান একটাতে স্বপারী ও জাতি, আর একটাতে ধরে, , ও অন্যান্য মসলাদি থাকে। আমরা বাঙ্গালী, গৃহিণী৷ হাতের সাজা গোলাপী থিলি খাওয়া আমাদের অভ্যাস আমরা বৰ্ম্মাদের মতন শিরা ফেলিয়া সুপার কাটা পান সাজিয়া থাইতে পারিব কেন ? আমি পানের বাক্সট ভট্টাচাৰ্য্য সাহেবের নিকট ঠেলিয়া দিয়া বলিলাম-"খাওঁ দাদা, পান খাও।” ভট্টাচাৰ্য সাহেবও “মহাজিন্তু থেম্বিয় বলিয়া পানের বান্ধটা অন্ত একটা বন্ধুর নিকট ঠেলি । দিলেন। তিনি কিছু গৃহস্থ কিসিমের লোক ; আজ পাচ । বৎসর যাবৎ ব্রহ্মদেশেই পড়িয়া আছেন, পরিবার দেশে বাড়ী পাহারা দিতেছেন, কাজেই দায়ে পড়িয়া তাহার সবই শিথিতে হইয়াছে। তিনি বেশ মেয়ে মানুষের মত ধীরে ধীরে গুটিকতক পান তৈয়ারী করিলেন ; তখন আদিও 1 দাদা দুই জনেই ভদ্রলোকের মত অর্থাৎ অনুরোধ উপরোধ এড়াইতে পারিব•ন বলিয়া তাতার পরিশ্রমের ফলে অংশ বসাইলাম । একটু পর আমরা মেলার অন্ত দিকে চলিলাম। সে দিকে কয়েকটা মুদী দোকানে চাল ডালের পিরামিড তুলি ! নিরূদ্বিগ্নভাবে বসিয়াছিল। সবে মাত্র পহেলা দিন, দোকান বিক্রী নাই, লোকজনের তত ভিড় নাই, দুই চার জন ক্রেতামাত্র মধুর মাছির স্তায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। এক দোকানওয়ালী আয়নাতে মুখ দেখিতেছিল। কাছে আসিতেই, সে আয়নাখানি নীচে নামাইয়া জিজ্ঞাস করিল—“বা লো জিন্দলে বাবুজি ?” উত্তরে দাদা কি একটা মাথামুণ্ডু বলিলেন, সে আবার আয়নাথানি হান্তে ৫ম সংখ্যা | } ठांमध्न l ...-l. মুখ দেখিতে লাগিল। কতকগুলি জল আবারের দোকানও মেলার পশ্চাদিকে টেবল পাতিয়া দিয়া গিয়াছিল। তাদের কিন্তু অবসর নাই, মুখে কানাথ মাখিবার জন্যও ততটা ব্যস্ততা নাই। নাকে থে কালী, কাল ময়লা লুঙ্গি, গায়ে ছাতাপড়া এঞ্জি ; সিনীগণ ঘন ঘন হস্ত সঞ্চালনে উত্তপ্ত তৈলকটাহে ত্রিশীর্ষ স্তীেছা”গুলিকে ছেচুড়া পোড়া করিতেছিলেন আর ধূম্রাস্থতিনেত্রে প্রত্যেক আগন্তকের প্রতি প্রশ্নময়ী দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছিলেন। গন্ধে প্রাণ যায়, কার সাধ্য সেখানে এক মিনিটও দাড়ায় ; তবু সে সব দোকানে ভিড় কত! পরদিন সহরের বাজার নিয়াণ্ডুতে বদলী হইল, আমরাও স্বাবার মেলায় বেড়াইতে গেলাম। দেখিলাম—সান মেয়েরা ত্ৰৈী ভরিয়া তরকারী আনিয়াছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, সালগম, নানারকম শাক, আলু, টমাটাে, সাদামূলা, লালমূল, নীলমূল, হলদে মূল, প্রভৃতি হরেক রকমের শাক সৰ্বজীতে বাজার পরিপূর্ণ। পাহাড়ের উপর জায়গার অভাব নাই, শাক সব জীরও অভাব নাই। যে পরিশ্রম করে, তারই প্রাঙ্গণে কৃষির অধিষ্ঠাত্রী দেবীর খামল সম্পদ ফল পূপে স্বশোভিত, আর তারই ঘরে লক্ষ্মী দেবীর বেতের বুড়ীটুকু টাকা পয়সায় পরিপূর্ণ। যারা অশক্ত অর্থাৎ বৃদ্ধ রোগী বা সহায়হীন তারাই গরীব ; তারা কেউবা চারিটা ক্টাচা লঙ্কা, কেউ বা কয়েকখানি আদা, কেউ বা কতকগুলি ইচ তেঁতুল, আর কেউ বা গরম গরম ভাত আর শাক পাতার ঝোল লইয়া ক্রেতাগণের অনুগ্রহের অপেক্ষা করিতেছে। ইহাদের কাছে বেশী দরদপ্তর করিতে হয় ন, এর বড় মন-খোলসা লোক ; কাউকে ঠকাইবার মতলব রাখে না, তোমার যে দামে পোষায় তুমি বলিয়া দেখ, সে দিবার হয় দিবে, না দিবার হয় “ম ইয়াবু বলিয়া চুপ করিয়া বসিয়া থাকিবে। আর যদি ঠকিতেও হয়, তবে এদের কাছেই ঠক ভাল ; এরা বড় গরীব লোক ; দু’চার পয়সা যা পায়, তাতেই এদের দিন চলে। এদের কাছে এক আধ পয়সা ঠকিলে, সে পয়সায় এদের অন্ন সংস্থান হয়। অনেক ভদ্রঘরের স্ত্রী পুরুষ—বৰ্ম্ম, জেরবাদী, ফিরিঙ্গি— সেদিন মেলায় বাজার দেখিতে আসিয়াছে । মেলার জিনিষের চেয়ে, তাদের শোভাই চমৎকার। যে দিকে চাও, 家や" পোয়ে । ই দিকেই চোক লাগিয়া থাকে। জিনিষের দাম করিতেছে, কেউ ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, কেউ হাতে সাজি, মুখে-সেলেই ঘরে ফিরিতেছে, আবার কে বা চাপা আঙ্গুলে চকচকে মনিব্যাগটা খুলিতে খুলিতে বলিতেছে—“Oh God, how dear" ! sfĦHffgolfR নিয়াণ্ডুর ফায়াপোয়েতে ফিরিঙ্গিনীদের মধ্যে প্রণয়িসম্মিলনের মাহেন্দ্রযোগ ; জোড়ায় জোড়ায় অনেক যুবক যুবতীও দেখিলাম। এরা আসাতে মেলার সমৃদ্ধি যে খুব বাড়িয়াছিল তার আর সন্দেহ নাই। বেলা দশটা এগারটা হইতে বাজার মন্দা ধরিল। বারটার পর হইতেই মন্দিরে পূজা আরম্ভ হইবে। সদ্যঃস্নাত বৰ্ম্ম ও সানরমণীগণ উজ্জ্বলবর্ণে উজ্জলবসনে উস্তানবত্ম ঝলসিত করিয়া মন্দিরাভিমুখে চলিয়াছে। গায়ে ইস্তিরীকরা সাদা এঞ্জি, তারউপর সোণার দু-লহরী স্বৰ্য্যহার, হাতে লতানে বলয়, কাণে মণিখচিত সোণার ফুল, মুখে তানাথার পাতলা প্রলেপ, পায়ে রক্ত মখমলের “কানা”, মাথায় কুণ্ডলীকৃত কেশভার, আর পরনে রেশমের রঙ্গীন লুঙ্গি। প্রায় সকলেরই বা হাতে একটা করিয়া ফুলের সাজি, তাতে একরাশি মনোমত ফুল ; আর ডান হাতে ছোট একটা নৈবেদ্য পাত্র, তাহাতে বিবিধ উপহার দ্রব্য থরে থরে মুসজ্জিত। যে যাহা ভালবাসে, সে আজ তাহা ঈশ্বরের প্রতিসম্পাদনের জন্ত লইয়া আসিয়াছে, যেন সেই টুকু দিলেই হৃদয়েশ্বর তৃপ্ত হইবেন। - মাউণ্ড লুডিনের ছয়াকাডোও আজ নিয়াণ্ডুতে পূজা frrs sfērātņR I can English Churchan দলভূক্ত ; তিনি আসেন নাই । কস্তা মা টিন ছোট একটা ফুলের সাজি হাতে করিয়া মাতার পশ্চাতে দাড়াইয়াছিল। আমি ছয়াকাডো মা মিয়াইকে অভিবাদন করিয়া ছ’চার কথার পর হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিলাম—“এ ফুল ও চিনির পুতুলে আপনার দেবতা খুলী হবেন তো ?” ছয়াকাডো হাসিয়া উত্তর করিলেন—“আপনি হিন্দু, আপনিও এমন কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন ?" - আমি বলিলাম— “তা বটে ; আমাদের ধৰ্ম্মেও এরকম ফুল নৈবেদ্ধ দিবার রীতি আছে, কিন্তু আপনাদের ধৰ্ম্মে এ সম্বন্ধে কি মত ? দেবতাকে ছেলে-ভুলানো চিনির খেলনা আর রসগোল্লা দেওয়াটা যেন কেমন কেমন !”