পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯০ সঙ্গে জ্ঞান প্রেম কৰ্ম্মের নানা পরিবদ্ধমান সম্বন্ধে, নানা উদ্ভাবনে, নানা প্রবর্তনায় জাগ্রত থাকিবে ও জাগরিত করিবে, আমাদের মধ্যে সেই উদ্যম সঞ্চার করিবার জন্য ইংরেজ জগতের যজ্ঞেশ্বরের দূতের মত জীর্ণদ্বার ভাঙিয়া আমাদের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে। তাহদের আগমন যে পর্যন্ত না সফল হইবে, জগৎ-যজ্ঞের নিমন্ত্রণে তাহাদের সঙ্গে যে পর্যন্ত না যাত্রা করিতে পারিব, সে পৰ্য্যন্ত তাহার আমাদিগকে পীড়া দিবে, তাহারা আমাদিগকে আরামে নিদ্রা যাইতে দিবে না। ইংরেজের আহবান যে পর্যন্ত আমরা গ্রহণ না করিব, তাহাদের সঙ্গে মিলন যে পর্যন্ত না সার্থক হইবে, সে পর্যন্ত তাহাদিগকে বলপূৰ্ব্বক বিদায় করিব, এমন শক্তি আমাদের নাই। যে ভারতবর্ষ অতীতে অঙ্কুরিত হইয়া ভবিষ্যতের অভিমুখে উদ্ভিন্ন হইয়া উঠিতেছে, ইংরেজ সেই ভারতের জন্য প্রেরিত হইয়া আসিয়াছে। সেই ভারতবর্ষ সমস্ত মানুষের ভারতবর্ষ—আমরা সেই ভারতবর্ষ হইতে অসময়ে ইংরেজকে দূর করিব, আমাদের এমন কি অধিকার আছে ? বৃহৎ ভারতবর্ষের আমরা কে ? একি আমাদেরই ভারতবর্ষ ? সেই আমরা কাহারা ? সে কি বাঙালী, ন মারাঠা, ন পাঞ্জাবী ; হিন্দু না মুসলমান ? একদিন যাহারা সম্পূর্ণ সত্যের সহিত বলিতে পরিবে, আমরাই ভারতবর্ষ, আমরাই ভারতবাসী-সেই অথও প্রকাও “আমরার” মধ্যে যে কেহই মিলিত হউক, তাহার মধ্যে হিন্দু মুসলমান ইংরেজ অথবা আরও যে কেহ আসিয়াই এক হউক না—তাহারাষ্ট হুকুম করিবার অধিকার, পাইবে এখানে কে থাকিবে আর কে না থাকিবে। ইংরেজের সঙ্গে আমাদের মিলন সার্থক করিতে হইবে। মহাভারতবর্ষ গঠন ব্যাপারে এই ভার আজ আমাদের উপরে পড়িয়াছে। বিমুখ হইব, বিচ্ছিন্ন হইব, কিছুই গ্রহণ করিব না, এ কথা বলিয়া আমরা কালের বিধানকে ঠেকাইতে পারিব না, ভুরতের ইতিহাসকে দরিদ্র ও বঞ্চিত করিতে পারিব না। অধুনাতন কালে দেশের মধ্যে যাহারা সকলের চেয়ে বড় মনীষী তাহারা পশ্চিমের সঙ্গে পূৰ্ব্বকে মিলাইয়া লইবার কাজেই জীবন যাপন করিয়াছেন। তাঙ্গর দৃষ্টান্ত রাম প্রবাসী। ................-یہ-..... جون،s-r------قمہ v মোহন রায় । তিনি মনুষ্যত্বের ভিত্তির উপরে ভারতবরে | সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে মিলিত করিবার জন্ত একদিন একারী দাড়াইয়াছিলেন। কোনো প্রথা কোনো সংস্কার তাহার দৃষ্টিকে অবরুদ্ধ করিতে পারে নাই। আচৰ্য্য উদার দ্বদ ও উদার বুদ্ধির দ্বারা তিনি পূৰ্ব্বকে পরিত্যাগ না করিয়া পশ্চিমকে গ্রহণ করিতে পারিয়াছিলেন। তিনিই একল সকল দিকেই নবাবঙ্গের পত্তন করিয়া গিয়াছিলেন। এইরূপে তিনিই স্বদেশের লোকের সকল বিরোধ স্বীকা করিয়া আমাদের জ্ঞানের ও কৰ্ম্মের ক্ষেত্র প্রশস্ত করি। দিয়াছেন, আমাদিগকে মানবের চিরন্তন অধিকার, সত্যের অবাধ অধিকার দান করিয়াছেন ;- আমাদিগকে জানিন্তে দিয়াছেন আমরা সমস্ত পৃথিবীর ; আমাদেরই জন্য বুদ্ধ । মহম্মদ জীবন গ্রহণ ও জীবন দান করিয়াছেন ; ভারতবর্ষের ঋষিদের সাধনার ফল আমাদের প্রত্যেকের জন্যই সঞ্চিত হইয়াছে ; পৃথিবীর যে দেশেই যে কহ জ্ঞানের বাধা । করিয়াছেন, জড়ত্বের শৃঙ্খল মোচন করিয়া মামুষের আবদ্ধ শক্তিকে মুক্তি দিয়াছেন তিনি আমাদেরই আপন, তাহার লইয়া আমরা প্রত্যেকে ধন্ত । রামমোহন রায় ভারতবর্ষের চিত্তকে সঙ্কুচিত ও প্রাচীরবদ্ধ করেন নাই, তাহাকে দেশে ও কালে প্রসারিত করিয়াছেন, ভারতবর্ষ ও যুরোপের মধ্যে তিনি সেতু স্থাপন করিয়াছেন ; এই কারণেই ভারত, বর্ষের সৃষ্টিকাৰ্য্যে আজও তিনি শক্তিরূপে বিরাজ করি: তেছেন। কোনো অন্ধ অভ্যাস কোনে ক্ষুদ্র অহঙ্কার বশত মহাকালের অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে মূঢ়ের মত তিনি বিদ্রোহ করেন নাই ; যে অভিপ্রায় কেবল অতীতের মধ্যে নিঃশেষিত নহে, যাহা ভবিষ্যতের দিকে উদ্যত, তাহারই জয়পতাকা সমস্ত বিয়ের বিরুদ্ধে বীরের মত বহন করিয়াছেন। দক্ষিণ ভারতে রাণাডে পূৰ্ব্বপশ্চিমের সেতু-বন্ধন কার্য্যে জীবন যাপন করিয়াছেন। যাহা মানুষকে বাধে, সমাজকে গড়ে, অসামঞ্জস্তকে দূর করে, জ্ঞান প্রেম ও ইচ্ছ। শক্তির বাধাগুলিকে নিরস্ত করে, সেই স্বজনশক্তি, সেই মিলনতত্ত্ব, রাণাডের প্রকৃতির মধ্যে ছিল ; সেইজন্ত ভারত বাসী ও ইংরেজের মধ্যে নানাপ্রকার ব্যবহার-বিরোধ ও স্বার্থ ংঘাত সত্ত্বেও তিনি সমস্ত সাময়িক ক্ষোভ ক্ষুদ্রতার উদ্ধে উঠতে পারিয়াছিলেন। ভারত ইতিহাসের যে উপকরণ [ ৮ম ভাগ। |..., --....................------------- ്ബ~. ইংরেজের মধ্যে আছে, তাহা গ্রহণের পথ যাহাতে कूिड ম, যাহাতে ভারতবর্ষের সম্পূর্ণতা সাধনের কোনো ব্যাঘাত নঘটে, তাহার প্রশস্ত হৃদয় ও উদার বুদ্ধি সেই চেষ্টায় চিরদিন প্রবৃত্ত ছিল। অয়দিন পূৰ্ব্বে বাংলাদেশে যে মহাত্মার মৃত্যু হইয়াছে সেই বিবেকানন্দও পূর্ব ও পশ্চিমকে দক্ষিণে ও বামে রাখিয়া নামখানে দাড়াইতে পারিয়াছিলেন। ভারতবর্ষের ইতিমাসের মধ্যে পাশ্চাত্যকে অস্বীকার করিয়া ভারতবর্ষকে সঙ্গীর্ণ সংস্কারের মধ্যে চিরকালের জন্ত সস্কুচিত করা তাহার জীবনের উপদেশ নহে। গ্রহণ করিবার, মিলন করিবার, স্বজন করিবার প্রতিভাই তাহার ছিল। তিনি ভারতবর্ষের সাধনাকে পশ্চিমে ও পশ্চিমের সাধনাকে ভারতবর্ষে দিবার ও লইবার পথ রচনার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করিয়া ছিলেন। একদিন বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শনে যেদিন অকস্মাৎ পূৰ্ব্বপশ্চিমের মিলনযজ্ঞ আহবান করিলেন সেইদিন হইতে বঙ্গসাহিত্যে অমরতার আবাহন হইল, সেই দিন হইতে বঙ্গসাহিত্য মহাকালের অভিপ্রায়ে যোগদান করিয়া সার্থকতার পথে দাড়াইল । বঙ্গসাহিত্য যে দেখিতে দেখিতে এমন বৃদ্ধিলাভ করিয়া উঠিতেছে, তাহার কারণ, এ সাহিত্য সেই সকল কৃত্রিম বন্ধন ছেদন করিয়াছে, যাহাতে বিশ্বসাহিত্যের সহিত ইহার ঐক্যের পথ বাধাগ্রস্ত হয় । ইহা ক্রমশই এমন করিয়া রচিত হইয়া উঠিয়াছে, যাহাতে পশ্চিমের জ্ঞান ও ভাব ইহা সহজে আপনারই করিয়া গ্রহণ করিতে পারে। বঙ্কিম যাহা রচনা করিয়াছেন কেবল তাহার জন্যই যে তিনি বড় তাহা নহে, তিনিই বাংলা সাহিত্যে পূৰ্ব্ব পশ্চিমের আদান প্রদানের রাজপথকে প্রতিভাবলে ভাল করিয়া মিলাইয়া দিতে পারিয়াছেন। এই মিলনতত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের মাঝখানে প্রতিষ্ঠিত হইয়৷ ইহার সৃষ্টিশক্তিকে জাগ্রত করিয়া তুলিয়াছে। এমনি করিয়া আমরা যেদিক হইতে দেখিব, দেখিতে পাইব আধুনিক ভারতবর্ষে যাহাদের মধ্যে মানবের মহত্ব প্রকাশ পাইবে, যাহার নবযুগ প্রবর্তন করিবেন, তাহাদের প্রকৃতিতে এমন একটি স্বাভাবিক ঔদার্য্য থাকিবে বাহাতে পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম তাহদের জীবনে বিরুদ্ধ ও পীড়িত পূর্ব ও পশ্চিম । AASAASAASAAMMMMMM MMMMMMMMS হইবে না, পূৰ্ব্ব পশ্চিম তাহাদের মধ্যে একত্রে সফলতা লাভ করিবে । - শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আজ আমরা অনেকেই মনে করি যে, ভারতবর্ষে আমরা নানাজাতি যে একত্রে মিলিত হইবার চেষ্টা করিতেছি ইহার উদ্দেশু পোলিটিকাল বল লাভ করা। এমনি করিয়া, যে জিনিষটা বড় তাহাকে আমরা ছোটর দাস করিয়া দেখিতেছি। ভারতবর্ষে আমরা সকল মানুষে মিলিব ইহা অন্ত সকল উদ্দেশ্বের চেয়ে বড়, কারণ ইহা মনুষ্যত্ব। মিলিতে যে পারিতেছি না ইহাতে আমাদের মনুষ্যত্বের মূলনীতি ক্ষুণ্ণ হইতেছে, সুতরাং সৰ্ব্বপ্রকার শক্তিই ক্ষীণ হইয়া সৰ্ব্বত্রই বাধা পাইতেছে ; ইহা আমাদের পাপ, ইহাতে আমাদের ধৰ্ম্মনষ্ট হইতেছে বলিয়া সকলই নষ্ট হইতেছে। সেই ধৰ্ম্মবুদ্ধি হইতে এই মিলন চেষ্টাকে দেখিলে তবেই এই চেষ্টা সার্থক হইবে। কিন্তু ধৰ্ম্মবুদ্ধি ত কোনো ক্ষুদ্র অহঙ্কার বা প্রয়োজনের মধ্যে বন্ধ নহে। সেই বুদ্ধির অনুগত হইলে আমাদের মিলনচেষ্টা কেবল যে ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষুদ্রজাতির মধ্যেই বদ্ধ হইবে তাহা নহে, এই চেষ্টা ইংরেজকেও ভারতবর্ষের করিয়া লইবার জন্ত নিয়ত নিযুক্ত হইবে। সম্প্রতি ইংরেজের সঙ্গে ভারতবর্ষের শিক্ষিত, এমন কি, অশিক্ষিত সাধারণের মধ্যেও যে বিরোধ জন্মিয়াছে, তাহাকে আমরা কিভাবে গ্রহণ করিব ? তাহার মধ্যে কি কোনো সত্য নাই ? কেবল তাহ কয়েকজন চক্রান্তকারীর ইন্দ্রজাল মাত্র ? ভারতবর্ষের মহাক্ষেত্রে যে নানাজাতি ও নানাশক্তির সমাগম হইয়াছে, ইহাদের সংঘাতে সম্মিলনে যে ইতিহাস গঠিত হইয়া উঠতেছে বর্তমান বিরোধের আবদ্ধ কি একেবারেই তাহার প্রতিকুল ? এই বিরোধের তাৎপৰ্য্য কি তাহা আমাদিগকে বুঝিতে হইবে। আমাদের দেশে ভক্তিতত্ত্বে বিরোধকেও মিলন সাধনার একটা অঙ্গ বলা হয় । লোকে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাবণ ভগবানের শক্রতা করিয়া মুক্তিলাভ করিয়াছিল। ইহার অর্থ এই যে, সত্যের নিকট পরাস্ত হইলে নিবিড়ভাবে সত্যের উপলব্ধি হইয়া থাকে। সত্যুকে অবিরোধে অসংশয়ে - সহজে গ্রহণ করিলে তাহাকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করা হয় না।