পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯২


WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২০, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)

লড়াই করিয়া তবেই বৈজ্ঞানিকতত্ত্ব প্রতিষ্ঠালাভ করে। আমরা একদিন মুগ্ধভাবে জড়ভাবে যুরোপের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিয়াছিলাম ; আমাদের বিচারবুদ্ধি একেবারে অভিভূত হইয়া গিয়াছিল ; এমন করিয়া যথার্থভাবে লাভ করা যায় না। জ্ঞানই বল আর রাষ্ট্ৰীয় অধিকারই বল, তাহা উপার্জনের অপেক্ষ রাখে—অর্থাৎ বিরোধ ও ব্যাঘাতের ভিতর দিয়া আত্মশক্তির দ্বারা লাভ করিলেই তবে তাহার উপলব্ধি ঘটে—কেহ তাহ আমাদের হাতে তুলিয়া দিলে তাহ আমাদের হস্তগত হয় না। যেভাবে গ্রহণে আমাদের অবমাননা হয়, সেভাবে গ্রহণ করিলে ক্ষতিই হইতে থাকে। এইজন্যই কিছুদিন হইতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবের বিরুদ্ধে আমাদের মনে একটা বিদ্রোহ উপস্থিত হইয়াছে। একটা আত্মাভিমান জন্মিয়া আমাদিগকে ধাক্কা দিয়া নিজের দিকে ঠেলিয়া দিতেছে। যে মহাকালের অভিপ্রায়ের কথা বলিয়াছি, সেই অভিপ্রায়ের অনুগত হইয়াই এই আত্মাভিমানের প্রয়োজন ঘটিয়াছিল। আমরা নিৰ্ব্বিচারে নিৰ্ব্বিরোধে দুৰ্ব্বলভাবে দীনভাবে যাহা লইতেছিলাম, তাহা যাচাই করিয়া তাহার মূল্য বুঝিয় তাহাকে আপন করিতে পারিতেছিলাম না, তাহ বাহিরের জিনিষ পোষাকী জিনিষ হইয়া উঠিতেছিল বলিয়াই আমাদের মধ্যে একটা পশ্চাদ্বর্তনের তাড়না আসিয়াছে। রামমোহন রায় যে পশ্চিমের ভাবকে আত্মসাৎ করিতে পারিয়াছিলেন, তাহার প্রধান কারণ, পশ্চিম তীহাকে অভিভূত করে নাই ; তাহার আপনার দিকে দুৰ্ব্বলতা ছিল -না। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠাভূমির উপরে দাড়াইয়া বাহিরের সামগ্ৰী আহরণ করিয়াছিলেন। ভারতবর্ষের ঐশ্বৰ্য্য কোথায় তাহা তাহার অগোচর ছিল না এবং তাহাকে তিনি নিজস্ব করিয়া লইয়াছিলেন ; এইজন্যই যেখান হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহ বিচার করিবার নিক্তি ও মানদণ্ড র্তাহার হাতে ছিল ; কোনো মূল্য না বুঝিয়া তিনি মুগ্ধের মত আপনাকে বিকাইয়া দিয়া অঞ্জলিপুরণ করেন নাই। যে শঙ্কুি নব্য-ভারতের আদি অধিনায়কের প্রকৃতির মধ্যে সহজেই ছিল, আমাদের মধ্যে তাহ নানা ঘাত প্রবাসী। এইজন্ত সন্দেহ এবং প্রতিবাদের সঙ্গে बडाल ਾਂ अत्याण्ड ੇ। સક્રિનિઃ वक्त्र बश ત્તિ श्रउिवाड़ হইবার চেষ্টা করিতেছে। এই কারণে সেই চেষ্টা পৰ্য্যা ক্রমে বিপরীত সীমার চূড়ান্তে গিয়া ঠেকিতেছে। একান্ত । অভিমুখতা এবং একান্ত বিমুখতায় আমাদের গতিকে আন্ধান্ত করিতে করিতে আমাদিগকে লক্ষ্যপথে লইয়া চলিয়াছে। বর্তমানে ইংরেজ ভারতবাসীর যে বিরোধ জাগিয়৷ উঠিয়াছে, তাহার একটা কারণ এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব;-- ইংরেজের জ্ঞান ও শক্তিকে ক্রমাগত নিশ্চেষ্টভাবে মাধ পাতিয়া গ্রহণ করিতে করিতে আমাদের অন্তরাত্মা পীড়িত হইয় উঠতেছিল। সেই পীড়ার মাত্রা অলক্ষিতভাবে জমিতে জমিতে আজ হঠাৎ দেশের অন্ত:করণ প্রবলবেগে বাকিয়া দাড়াইয়াছে। কিন্তু কারণ শুধু এই একটিমাত্র নহে। ভারতবর্ষের গৃহের মধ্যে পশ্চিম আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে ; তাহাকে গ্রহণ করিতেই হইবে, তাহাকে আপনার শক্তিতে আপনার করিয়া লইতে হইবে। আমাদের তরফে সেই আপন করিয়া লইবার আত্মশক্তির যদি অভাব ঘটে, তবে তাহাড়ে কালের অভিপ্রায়বেগ ব্যাঘাত পাইয়া বিপ্লব উপস্থিত করে। আবার অন্তপক্ষেও পশ্চিম যদি নিজেকে সত্যভাবে প্রকাশ করিতে কৃপণতা করে, তবে তাহাতেও বিক্ষোভ উপস্থিত ठ्म्न । ইংরেজের যাহা শ্রেষ্ঠ যাহা সত্য তাহার সহিত আমাদের যদি সংস্রব না ঘটে, ইংরেজের মধ্যে যদি প্রধানতঃ আমরা সৈনিকের বা বণিকের পরিচয় পাই, অথবা যদি কেবল শাসনতন্ত্রচালকরূপে তাহাকে আপিসের মধ্যে যন্ত্রারূঢ় দেখিতে থাকি ; যে ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে মানুষ আত্মীয় ভাবে মিশিয়া পরম্পরকে অন্তরে গ্রহণ করিতে পারে, সে ক্ষেত্রে যদি তাহার সঙ্গে আমাদের সংস্পর্শ না থাকে, যদি পরম্পর ব্যবহিত হইয়া পৃথক হইয়া থাকি, তবে আমরা পরস্পরের পক্ষে পরম নিরানন্দের বিষয় হইয়া উঠিবই। এরূপ স্থলে প্রবল পক্ষ সিডিশনের আইন করিয়া দুৰ্ব্বল পক্ষের অসন্তোষকে লোহার শৃঙ্খল দিয়া বাধিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতে পারে, কিন্তু তাহাতে অসন্তোষকে বাধিয়াই রাখা হইবে, তাহাকে দূর করা হইবে না। অথচ এই অসন্তোষ কেবল এক পক্ষের নহে। ভারতবাসীর মধ্যে ... "..., | মরেজের কোনোই আনন্দ নাই। ভারতবাসীর অস্তিত্বকে মরেজ ক্লেশকর বলিয়া সৰ্ব্বতোভাবে পরিহার করিবারই কল্পে করে। একদা ডেভিড় হেয়ারের মত মহাত্মা অত্যন্ত নিকটে আসিয়া ইংরেজচরিত্রের মহত্ব আমাদের হৃদয়ের থে আনিয়া ধরিতে পারিয়াছিলেন—তখনকার ছাত্রগণ | তাই ইংরেজ জাতির নিকট হৃদয় সমর্পণ করিয়াছিল। এখন ইংরেজ অধ্যাপক স্বজাতির যাহা শ্রেষ্ঠ তাহা কেবল বে আমাদের নিকটে আনিয়া দিতে পারেন না তাহা নহে, ক্টায়ারা ইংরেজের আদর্শকে আমাদের কাছে পৰ্ব্ব করিয়া েৈরজের দিক হইতে বাল্যকাল হইতে আমাদের মনকে বিমুখ করিয়া দেন। তাহার ফল এই হইয়াছে, পূৰ্ব্বকালের ছাত্রগণ ইংরেজের সাহিত্য ইংরেজের শিক্ষা যেমন সমস্ত ন দিয়া গ্রহণ করিত, এখনকার ছাত্ররা তাহ করে না ; তাছারা গ্রাস করে তাহারা ভোগ করে না । সেকালের ছাত্রগণ যেরূপ আন্তরিক অনুরাগের সহিত শেক্স্পীয়র বাস্করণের কাব্যরসে চিত্তকে অভিষিক্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন, এখন তাহ দেখিতে পাই না। সাহিত্যের ভিতর দিয়া ইংরেজ জাতির সঙ্গে যে প্রেমের সম্বন্ধ সহজে ঘটতে পারে, তাহা এখন বাধা পাইয়াছে। অধ্যাপক বল, ম্যাজিষ্ট্রেট বল, সদাগর বল, পুলিসের কর্তা বল, সকল প্রকার সম্পর্কেই ইংরেজ তাহার ইংরেজি সভ্যতার চরম অভিব্যক্তির | পরিচয় অবাধে আমাদের নিকট স্থাপিত করিতেছে না— সুতরাং ভারতবর্ষে ইংরেজ-আগমনের যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ লাভ, তাহা হইতে ইংরেজ আমাদিগকে বঞ্চিত করিতেছে ; আমাদের আত্মশক্তিকে বাধাগ্রস্ত এবং অীষ্মসম্মানকে পৰ্ব্ব করিতেছে। স্বশাসন এবং ভাল আইনই যে মানুষের পক্ষে সকলের চেয়ে বড় লাভ তাহা নহে। আপিস আদালত আইন এবং শাসন ত মানুষ নয় । মানুষ যে মানুষকে চায়—তাহাকে যদি পায় তবে অনেক দুঃখ অনেক অভাব সহিতেও সে রাজি আছে। মানুষের পরিবর্তে বিচার এবং আইন রুটির পরিবর্তে পাথরেরই মত । সে পাথর দুর্লভ এবং মূল্যবান হইতে পারে কিন্তু তাহাতে ক্ষুধা দূর হয় না। - এইরূপেই পূৰ্ব্ব ও পশ্চিমের সম্যক মিলনের বাধা ঘটতেছে বলিয়াই আজ যত কিছু উৎপাত জাগিয়া উঠিতেছে। পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম। কাছে থাকিব অথচ মিলিব না, এ অবস্থা মানুষের পক্ষে

వరి

অসহ এবং অনিষ্টকর। সুতরাং একদিন না একদিন ইহার প্রতিকারের চেষ্টা দুৰ্দ্দাম হইয়া উঠিবেই। এ বিদ্রোহ নাকি হৃদয়ের বিদ্রোহ, সেই জন্ত ইহা ফলাফলের হিসাব বিচার করে না, ইহা আত্মহত্যা স্বীকার করিতেও প্রস্তুত হয় । তৎসত্ত্বেও ইহা সত্য যে এ সকল বিদ্রোহ ক্ষণিক। কারণ পশ্চিমের সঙ্গে আমাদিগকে সত্য ভাবেই মিলিতে হইবে এবং তাছার যাহা কিছু গ্রহণ করিবার তাহা গ্রহণ না করিয়া ভারতবর্ষের অব্যাহতি নাই। যতক্ষণ পৰ্য্যস্ত ফল পরিণত হইয়া না উঠিবে, ততক্ষণ তাহাকে বোটার বাধা থাকিতে হইবেই—এবং বোটায় বাধা না থাকিলেও তাহার পরিণতি হইবে না । এইবার একটি কথা বলিয়া প্রবন্ধ শেষ করিব। ইংরেজের যাহা কিছু শ্রেষ্ঠ, ইংরেজ তাহা যে সম্পূর্ণভাবে ভারতবর্ষে প্রকাশ করিতে পারিতেছে না, সে জন্ত আমরা দায়ী আছি। আমাদের দৈস্য ঘুচাইলে তবেই তাহদেরও কৃপণতা ঘুচিবে। বাইবেলে লিখিত আছে, যাহার আছে, তাহাকেই দেওয়া হইবে। সকল দিকেই আমাদিগকে শক্তিশালী হইতে হইবে ; তবেই ভারতবর্ষকে ইংরেজ যাহা দিতে আসিয়াছে, তাহা দিতে পরিবে। যতদিন তাহারা আমাদিগকে অবজ্ঞা কৱিণে, ততদিন ইংরেজের সঙ্গে আমাদের মিলন হইতে পরিবে না। আমরা রিক্তহস্তে তাহাদের দ্বারে দাড়াইলে বার বার ফিরিয়া আসিতে হইবে। ইংরেজের মধ্যে যাহা সকলের চেয়ে বড় এবং সকলের চেয়ে ভাল তাহ আরামে গ্রহণ করিবার নহে, তাহা আমাদিগকে জয় করিয়া লইতে হইবে। আমাদের মধ্যে যাহারা উপাধি বা সম্মান বা চাকুরীর লোভে হাত জোড় করিয়া মাথা হেঁট করিয়া ইংরেজের দরবারে উপস্থিত হয়, তাহারা ইংরেজের ক্ষুদ্রতাকেই আকর্ষণ করে, তাহার, ভারতবর্ষের নিকট ইংরেজের প্রকাশকে বিকৃত করিয়া দেয়। অন্তপক্ষে যাহারা কাণ্ডজ্ঞানবিহীন অসংযত ক্রোধের দ্বারা ইংরেজকে উন্মত্তভাবে আঘাত করিতে চায়, তাহারা ইংরেজের পাপপ্রকৃতিকেই জাগরিত করিয়া তোলে। ভারতবর্ষ অত্যন্ত