পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86.8 - কোথায় কোন দূরে অধিষ্ঠিত তাহা দেখিতে পাই না। একটু যদি প্রণিধান করিয়া দেখি, দেখিতে পাইব, সকল দুঃখ, সকল দারিদ্র্য সকল অমঙ্গলের মূল—সেই এক কালবৃক্ষ “অধৰ্ম্ম।" অনেকে হয় ত বলিবেন, কোনটা ধৰ্ম্ম কোনটা অধৰ্ম্ম কেমন করিয়া বুঝিব? মাপকাঠি কোথায় ?—তুমি যাহা ধৰ্ম্মসঙ্গত বলিয়া মনে করিতেছ আমি তাহ ধৰ্ম্ম-বিরুদ্ধ অধৰ্ম্ম বলিয়া মনে করি, তুমি যাহা অধৰ্ম্ম বলিয়া মনে করিতেছ আমি তাহ ধৰ্ম্মামুগত মনে করি,—দাড়াইব কোথায় ?–কথাটা কি সত্যসত্যই এইরূপ ? সত্যসত্যই কি আমি মনে করি বা তুমি মনে করার উপর ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম নির্ভর করে ; না ধৰ্ম্মাধৰ্ম্মেরই উপর তোমার আমার মনে করা, তোমার আমার অস্তিত্ব, বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব নির্ভর করে ? —ঈশ্বর যেমন এক, অদ্বিতীয়, অথও, নিরবচ্ছিন্ন পরিপূর্ণ সত্য, তাহার মঙ্গল নিয়ম ধৰ্ম্মও কি সেইরূপ নহে ? স্বয়স্থ স্বপ্রকাশ ঈশ্বরের প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কি ধৰ্ম্মের প্রকাশ নহে ? ঈশ্বরের সত্তা যেমন একইরূপে একই ভাবে সকলের নিকট প্রকাশমান, ধৰ্ম্মও কি সেইরূপ একইরূপে একই ভাবে চরাচরে বিদ্যমান নহে ?—ধৰ্ম্ম এক বই দুই নহে,-ধৰ্ম্ম তোমার নিকট একরূপ অন্তের নিকট বিভিন্নরূপ হইতেই পারে না। পুস্তকে পাঠ করা যায় চীনজাতির মধ্যে পূৰ্ব্বে এক প্রথা ছিল যে, পিতা অতিরিক্ত বৃদ্ধ হইলে তাহারা বৃদ্ধ পিতাকে হত্যা করিয়া ভবযন্ত্রণা হইতে নিস্কৃতি দান করিবার চেষ্টা করিত। তাহারা মনে করিত অনেক বয়স পর্য্যন্ত বাচিয়া থাকিয়া অনর্থক কেবল যন্ত্রণ ভোগ করিতে দেওয়া অপেক্ষ। বৃদ্ধ পিতাকে হত্যা করাই শ্রেয়। চীনজাতি এই পিতৃহত্যাকে হয়ত মনে মনে ঠিক ধৰ্ম্ম বলিয়া বিশ্বাস করিত, কিন্তু তাহদের এই মনে করা, এই বিশ্বাস, এই ধারণা সত্যসত্যই কি ধৰ্ম্মপদবাচ্য ! জ্ঞান বিচার ও বিবেকের মুখ বন্ধ করিয়া অন্ধসংস্কার বশতঃ কাজ করার নাম কি ধৰ্ম্ম ?— হত্যা যদি অধৰ্ম্ম হয়, তাহা কখনও কোন সময়ে কোন জাতির নিকট ধৰ্ম্ম হইতে পারে না,—ধৰ্ম্ম বলিয়া বিশ্বাস হইতে পারে, ধারণা হইতে পারে, সংস্কার হইতে পারে, কিন্তু তাহা ধৰ্ম্ম নহে ৮ প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। ঘড়িতে অতিরিক্ত দম দিলে প্রথমটা যেমন খটু করি। একটা শব্দ হয় এবং তাহী ক্ৰক্ষেপ না করিয়া আরও দম চালাইতে লাগিলে শেষে যেমন সমস্ত প্রিংমৃদ্ধ খুলিয়৷ আসিয়া ঘড়িকে নষ্ট করিয়া ফেলে, সেইরূপ ধৰ্ম্মের অনুশাসন অতিক্রম করিয়া চলিতে গেলে প্রথমে বুকের মধ্যে একটা । “ধড়াস" করিয়া উঠে এবং তথাপি সাবধান না হইয়া না | মানিয়া চলিতে থাকিলে অবশেষে নিশ্চিত একেবারে - বিনাশের দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইতে হয়। বুকের মধ্যে এই “ধড়াস” করাকে বিবেকের “ইসারা” বা “তাড়না" বলা যাইতে পারে।—স্থাননিৰ্ব্বিশেষে, কালনিৰ্ব্বিশেষে, জাতিনিৰ্ব্বিশেষে লোকনিৰ্ব্বিশেষে কাহারও ইহার হাত হইতে এড়াইবার যো নাই। পিতৃবধকালে পিতৃহস্থ চীনজাতির বুকের মধ্যে কোথাও না কোথাও এইরূপ একটু ধড়া করিয়া উঠিত না কি ? নিশ্চয়ই । তাহারই ফলে আজ তাহারা এই বৰ্ব্বর প্রথা উঠাইয়া দিতে বাধ্য হইয়াছে। বিচার ও তর্ক দ্বারা ধৰ্ম্মের যে অর্থ প্রতিপন্ন হয় সহজ জ্ঞানেও তাহাই হয় । যাহা শুভ, যাহা শ্রেয়স্কর, যাহা মঙ্গলময় তাহাই ধৰ্ম্ম,—ধৰ্ম্ম মঙ্গলের নামান্তর মাত্র। “অথাতো ধৰ্ম্মজিজ্ঞাসা”–এই স্বত্রের ব্যাখ্যায় শবর স্বামী লিথিয়াছেন, “য এব শ্রেয়স্কর: স এব ধৰ্ম্মশদেনোচাতে" তিনি আরও বলিয়াছেন "য পুরুষং নিঃশ্রেয়সেন সংযুক্তি স ধৰ্ম্মশন্দেনোচ্যতে।”—অমর লিথিয়াছেন—“স্তান্ধৰ্ম্মম স্থিয়াং পুণ্য শ্রেয়সী স্বকৃতং বৃষঃ।”–ভবিষ্ণুপুরাণে আছে— “ধৰ্ম্মঃ শ্রেয়ঃ সমুদ্দিষ্টং শ্রেয়োহভু্যদয় সাধনম্।”—তর্কশাস্ত্রে “অধৰ্ম্ম” শব্দের অর্থ আছে—“প্রতিষিদ্ধক্রিয়াসাধ্য স গুণোহ ধৰ্ম্ম উচ্যতে।” তবে দাড়াইতেছে যাহা শুভ, যাহা বিহিত, যাহা সঙ্গত তাহাই ধৰ্ম্ম,--যাহ অশুভ, অবিহিত, অসঙ্গত তাহাই অধৰ্ম্ম । ইংরাজি Religion শব্দ আমাদের ধৰ্ম্ম শব্দের ভাববাচক প্রতিশব্দ নহে। ধৰ্ম্ম শব্দ আমাদের শাস্ত্রে বহু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত । যাহা দ্বারা বিশ্বব্রহ্মাও ধৃত, বা ! যাহা বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডকে ধারণ করিয়া আছে, তাহাই ধৰ্ম্ম। সকল বস্তুই ইহার অন্তর্গত। ইহকাল পরকাল অনাদিকাল লইয়া ইহার স্থিতি,—পরমানন্দরূপে ইহার প্রতিষ্ঠা-ইহা । ৮ম সংখ্যা । ] অনুশাসন জীবনের প্রত্যেক পৃষ্ঠা, প্রত্যেক পংক্তি প্রত্যেক অক্ষরে সংযুক্ত। লৌকিক, ব্যবহারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ধৰ্ম্ম প্রভৃতি নামে কেবল প্রভেদ মাত্র—সকলই সেই এক চক্রবর্তী সম্রাট বৃহদ্ধৰ্ম্মেরই ছায়ামাত্র,—জল একট, কেবল আধার বিভিন্ন। ইহা আমাদের দেশ যেরূপ বুঝিয়াছিল অন্ত কোন দেশ সেরূপ ভাবে বুঝে নাই। এই জন্য আমাদের দেশে আচারে ব্যবহারে, ক্রিয়াকৰ্ম্মে জীবনের প্রত্যেক খুঁটিনাটিতে ধৰ্ম্মের এত অনুশাসন। ধৰ্ম্মের নামে যে সকল নিয়ম প্রবর্তিত হইয়াছে সকলই যে, প্রকৃত ধৰ্ম্ম তাহা নহে, ধৰ্ম্মের নামে সংযুক্ত হওয়াতেই তাহারা সৰ্ব্বথা পালনীয় হইয়াছে। ইহাতে ধর্মেরই মাহাত্ম্য বাড়ান হইয়াছে—নিয়মের দুষ্টতায় ধর্থের মূল্য হ্রাস হয় নাই । ধৰ্ম্ম শব্দে যাহা বুঝায় তাহা সাংসারিক স্থখন্থঃখের বহু উদ্ধে স্থিত। আপাত ভাল লাগা বা না লাগা, আপাত মধুর বোধ হওয়া বা না হওয়া, আপাত স্থথোৎপাদন বা দুঃথোৎপাদনের সহিত ধৰ্ম্মের কোন সম্পর্ক নাই। উষর ক্ষেত্রে বীজ উপ্ত হওয়া এবং শাখাগ্রভাগে ফল বিলম্বিত হওয়ার মধ্যে যে সকল বহিরুৎপাত, যে কালবিলম্ব বর্তমান রছে, তাহ অবশ্যম্ভাবী ফলের সহিত বীজের সম্বন্ধ কখনই বিচ্ছিন্ন করিতে পারে না। যখন একবার ফল ধরিয়াছে, স্কুল পাকিয়াছে, বীজশক্তি ফলরূপে পরিণত হইয়াছে— তখন অন্তর্বত্ত ঝঞ্জাবাত, শিলাঘাত কাটামুদংশন প্রভৃতি সহস্র উৎপাত বহিরাবরণ মাত্র,—ফল কিম্বা বীজের তি তাহদের কোন সম্পর্ক নাই। কোথা হইতে যে, রসপ্রবাহ সঞ্চারিত হইয় শুষ্কতরু মুঞ্জরিত হয় তাহা কে লিতে পারে!—ধৰ্ম্ম বীজ একবার রোপিত হইলে অবিলম্বে ীেক বা কালবিলম্বে হোক, তাহা হইতে তুমি ফল ফলিবেই ফলিবে,—সুখ দুঃখ তাহাকে কিছুতেই নষ্ট কবিতে পারে না। বুদ্ধদেব তাহার উপদেশে ধৰ্ম্মের যে আটটি চরমপন্থার উল্লেখ করিয়াছেন, তন্মধ্যে আত্মার নিৰ্ম্মল নিম্পূহ স্বাধীন অবস্থাকে অন্ততম বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। এই অবস্থায় पिछ पौत्र यथार्थ भूखैिरङ अकाबिज्र रुग्न। यहे बदश%ग्न ব্যক্তির নিকট সসাগর পৃথিবীর অধীশ্বর ও চীরবলধারা ধৰ্ম্ম । SSMSSSMSSSMSSSMSSSAAAASA SSASAS SSAS SSAS SSAS SSAS - ~ - --~~------ - 8&g: - ভিক্ষুকের কোনই প্রভেদ নাই। এই অবস্থা সম্বন্ধে বুদ্ধদে বলিতেছেন,-“সংসারাসক্ত ব্যক্তি ইহাকে একেবারে হাল ছাড়িয়া দেওয়া–নৈরাশু বলিবে, কিন্তু যিনি বুদ্ধ তিনি ইহাকে নিৰ্ম্মল পরিপূর্ণ আনন্দ বলিবেন,–সংসারাসক্ত ব্যক্তি ইহাকে বিধ্বংস’ বলিবে, কিন্তু যিনি বিশুদ্ধ তিনি ইহাকে ‘অমৱতী’ আখ্যা দিবেন,–সংসারাসক্ত ব্যক্তি ইহাকে ‘মৃত্যু বলিবে, কিন্তু যিনি আত্মজর তিনি ইহাকে ‘অনন্ত জীবন’ বলিয়া নির্দেশ করিবেন।” এই আত্মজীর নিকট সকলেই পরাস্ত। যাহার পূহ নাই, কামনা নাই, সুখ দুঃখ ভেদ নাই, তাহার নিকট পৃথিবীপতিও বিজিত,--তাহার নিকট হইতে কিই বা কাড়িয়া লইবে, তাহাকে কিই বা দিবে! নেপোলিয়ন বিশ্বজয়ী হইয়াও আপনাকে জয় করিতে পারেন নাই, সেইজন্ত তাহার এত দুঃখ, জীবনের শেষ অঙ্ক এত নিরানন্দময় ! নেপোলিয়নের মানসিক ক্লেশই সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক হইয়াছিল ;–র্তাহার তখনকার অবস্থার তুলনায় পৃথিবীর সর্বপেক্ষা পরাধীন জাতির অতি নিকৃষ্ট দীনহীন প্রজারও অবস্থা স্পৃহনীয় বলিয়া বোধ হয়। নেপোলিয়নের দুরাকাজ, নেপোলিয়নের বর্বরতা, নেপোলিয়নের অকারণে নিরপরাধিনী লক্ষ্মী স্ত্রী যোসেফাইনকে পরিত্যাগ, –এই সকল অধৰ্ম্মের ফল যাইবে কোথায়!—বাইবেলে ধৰ্ম্মহীনের এই ক্ষণিক অভু্যখান সম্বন্ধে লেখা আছে— "They are exalted for a little while, but are gone and brought low; they are taken out of the way as all other, and cut off as the tops of the ears of corn.” আত্মার স্বাধীনতা হারাইয়া বাহিরের অধীনতায় কি আসে যায়!-যাহার আত্মা স্বাধীন, তাহাকে বাহিরের সহস্রনিগড়ে আবদ্ধ রাখিলেও নিম্প্রভ নিস্তেজ হতঐ করিতে পারে না। যাহারা বলেন, সংসারে থাকিয় এইরূপ নিষ্কাম ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিলে সংসার কখনই চলিতে পারে না, তাহারা অতিশয় ভ্রান্ত। নিষ্কাম ধৰ্ম্ম অর্থে নিশ্চেষ্টতা নহে, জড়ত নহে, আলস্ত নহে,--নিষ্কাম ধৰ্ম্ম অর্থে আত্মবশে থাকিয়া ভগবদত্ত শক্তির যথার্থ প্রয়োগ, সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার। সংসারে থাকিয়া ধৰ্ম্মপথে চুলিলে কি হইতে পারে বা না পারে আমাদের পুরাণে তাহার ছুরি