পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(:\) - ভূরি দৃষ্টান্ত আছে,-বাইবেলে “যোবে"র আখ্যায়িকায় ইহার একটি স্বন্দর চিত্র অঙ্কিত। অধুনাতন আমরা "বৈরাগ্য” শব্দ যেরূপ অসদৰ্থে ব্যবহার করিতে আরম্ভ করিয়াছি, প্রকৃতই উহার অর্থ সেরূপ নহে। “রাগ" অর্থে যাহা রঙ করে, যাহা মনকে অন্তরকে মুখ দুঃথে অমুরঞ্জিত করে, যাহা আত্মার স্বাভাবিক নিৰ্ম্মল অবস্থাকে ষড়রিপুর প্রকাশে কলুষিত করে। "বিরাগ” বা “বৈরাগ্য” অর্থে যাহাতে বাহিরের কোন রঙ ফলান নাই যাহাতে আর কিছুরই ছাপ নাই, যাহা আত্মার সহজ শুভ্ৰ নিৰ্ম্মল অবস্থা। “রাগ” হইতেই সকল প্রকার ক্লেশের উৎপত্তি। ইংরাজি Passion শব্দ এবং আমাদের “রাগ” শব্দ একই ভাববাচক। ইংরাজি Passion শব্দ wttfa Passio, from Patior to suffer εὐτε ἐ<*iiii নানা কারণে অস্তরে ক্লেশানুভূতির নামই Passion। এই জন্ত ক্রুশবিদ্ধ যীশুখ্রীষ্টের শেষ যন্ত্রণাকালকে ইংরাজিতে Passion Ftz I aề xfs, si Passionzą পরিবর্জন পূৰ্ব্বক সংসারে থাকিয়া “বৈরাগ্য” অবলম্বন করিলে সংসার কখনই অচল হয় না,–বরঞ্চ সংসারের, সমাজের, সমস্ত দেশের মুখশ্ৰী ফিরিয়া যায়। এই নিমিত্তই আমাদের শাস্ত্র সংসারে থাকিয়া বৈরাগ্য অভ্যাস করিবার পুনঃ পুনঃ উপদেশ দিয়াছেন, বৈরাগ্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিয়াছেন, বৈরাগ্যকে ধৰ্ম্মের অঙ্গীভূত করিয়াছেন। বৈরাগ্য অর্থে আত্মার সহজ স্বাভাবিক অবস্থানুযায়ী কৰ্ম্ম,— আত্মার কৰ্ম্মের নাশ নহে। সকল ধৰ্ম্মশাস্ত্রের মধ্যে কি একটা আশ্চৰ্য্য ঐক্য দেখা যায়। এই যে জগতে সৎ এবং অসতের চিরন্তন দ্বন্ধ এবং পরিশেষে সং-এরই জয়লাভ, ইহাই পরিস্ফুট করা সকল ধৰ্ম্মশাস্ত্রেরই মুখ্য উদ্দেশু। আমাদের শাস্ত্র বল, খ্ৰীষ্টিয়ানদের বাইবেল বল, বৌদ্ধদের ধৰ্ম্মপদ, শিখদের গ্রন্থসাহেব, জৈনদের কল্পস্বত্র, পারসীদের আবেস্তা-সকল ধৰ্ম্মশাস্ত্রই এই “সৎ,” “শ্রেয়,” “ধৰ্ম্মের"ই জয়ঘোষণা করিতেছে। যতোধৰ্ম্মস্ততোজয়ঃ” ইহা একটি মহাসত্য না হইলে সকল ধৰ্ম্মশাস্ত্রে এই বিষয়ে এইরূপ একটা মুন্দর ঐক্যবদ্ধন থাকিত না। ধৰ্ম্মের শুভ ফল এবং অধৰ্ম্মের অশুভ ফল ধামরা সাংসারিক হিসাবে হাতে হতে পাইলাম প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। -***-*...*-*---------- না বলিয়া মনে করিতে পারি, কিন্তু কালোহয়ং নিরবধিঃকালেরও ত সীমা নাই ! আমরা আজ সহসা অতিশয় চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছি,— বিকারগ্রস্ত রোগীর আক্ষেপের দ্যায় হঠাৎ উত্তেজিত হইয়া দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্ত হইয়া পড়িয়াছি ;—আমরা গৃহদ্বারে পাপআবৰ্জ্জন স্বাধীনতার জন্য লোলুপ হইয়াছি,-—ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম বিচার করিতেছি না, স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কোন উপায় হৌক না কেন অবলম্বন করিতে বসিয়াছি,–ভাবিতেছি না যে, শুধু পরের দোষ দেখাষ্টয়া নিজের দোষ ক্ষালন হয় না-নিজ মুকুতি দ্বারাই একমাত্র পরের ছদ্ধতিকে জয় করা যায়। সত্যসত্যই যদি আমরা ভগবৎকৃপার অধিকারী হইতে চাহি, তবে ধৰ্ম্মকে সহায় করিয়া আমাদিগকে ধীরে ধীরে উঠতে হইবে,—ধৰ্ম্মের নামে যে সকল পাপাচার ঢুকিয়াছে তাহাদিগকে বহিস্কৃত করিতে হইবে—অস্তরের বাহিরের সমস্ত জঞ্জাল পরিস্কৃত করিয়া আমাদিগকে বিশুদ্ধ হইতে হইবে। যে অধৰ্ম্ম করে সে তাহার ফলভোগ ও করিবেই, তাই বলিয়া আমরা কেন অধৰ্ম্মের দ্বার আমাদের পাপের ভার আরও বন্ধিত করি! একটি সামান্ত ফুল ফুটাইতে ভগবানের কি অসীম ধৈর্য্য !—তিনি আপন মঙ্গল-নিয়মকে কখনও লঙ্ঘন করেন না,—আর আমরা আজ ধৈর্য্য হারাইয়া রাতারাতি দেশকে যেমন তেমন করিয়া ফুটাইয়া তুলিতে চাহি!—তাহাও কি সম্ভব!—ধৈর্য্য ভিন্ন আর আমদের উপায় নাই, ধৰ্ম্ম ভিন্ন আর আমাদের গতি নাই,— “ধৰ্ম্মং চর,– ধৰ্ম্মানুষ্ঠান কর, "ধৰ্ম্মাৎপরং নাস্তি,— ধৰ্ম্মের পর আর নাই, “ধৰ্ম্মঃ সৰ্ব্বেষাং ভূতানাম মধু। ধৰ্ম্মই সমস্ত জীবের মধুস্বরূপ। শিশুকে যেমন সহস্রব্যঞ্জনসংযুক্ত দিব্য রাজভোগ দিলেও তাহার মুখে রুচে না, কিন্তু মাতা যদি সামান্ত অন্নটুকুও স্বহস্তে মুথে তুলিয়া দেন তাহ তাহার নিকট রাথিয়া পরের মলিনতায় নাসিক কুঞ্চিত । করিতেছি,—অস্তরে অধীনতার শৃঙ্খল বহন করিয়া বাহিরের & I ৮ম সংখ্যা । ] কি সুমিষ্ট কি অমৃতময় বলিয়া বোধ হয়!—সেইরূপ বিনি প্রকৃত ধাৰ্ম্মিক র্তাহার নিকট পৃথিবীর আর যাবতীয় ভোগবিলাস স্বথৈশ্বৰ্য্য সমস্তই তুচ্ছ নগণ্য, কেবল ধৰ্ম্ম-মাতার স্বহস্তপরিবেশিত সামান্ত সামগ্ৰীটুকুও মধুস্বরূপ, অমৃতময়। শ্ৰীমুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ধৰ্ম্মের বলবত্ত । পরম সন্মানাস্পদ লেখকপ্রধান শ্ৰীযুক্ত রজনীকান্ত গুহ কাঞ্জিক মাসের প্রবাসীতে আমার “দেখিয়া শিথিব কি ঠেকিয়া শিথিব” প্রবন্ধের মুখ্য বিষয়টির সম্বন্ধে যেরূপ মতামত প্রকাশ করিয়াছেন তাহ পাঠ করিয়া আমার মনে হইল যে লেখকের সহিত পাঠকের সাধারণ-ভাবের একটা বোঝা পড়া না থাকিলে, লিখিত প্রবন্ধের সমালোচনা কখনই ঠিক হইতে পারে না। সমালোচক পাছে মূলের ভাবার্থ এক বুঝিতে আর বুঝিয়া তাহার ভূল ধরেন, এই ভয়ে প্রবন্ধের ছত্ৰে ছত্রে টীকা টিপ্পনী এবং ভাষ্য জুড়িয়া দিতে হইলে লেখকের পক্ষে তাহ যে কিরূপ কষ্টকর ব্যাপার তাহা বুঝিতেই পারা যাইতেছে। তাহা হইলে,— হয় একটা বিদঘুটে কাও ভয়ঙ্কর! পথ চলিবার সময় তীর্থযাত্রীকে ঘটি বাটি থালা পাথর চা’ল ডা’ল লবণ প্রভৃতি নানাবিধ উপকরণ সামগ্রী অদ্ভুত গোচের গণ্ডাদুই প্রকাও পকেটের মধ্যে পুরিয়া সঙ্গে করিয়া লইয়া চলিতে হইলে সে-বেচারীর যেরূপ দশা হয়, টপ্পনীভারগ্রস্ত প্রবন্ধের অবিকল সেইরূপ দশা হয়। তাহা হইলে পথিকের পক্ষেও যেমন-প্রবন্ধের পক্ষেও তেমি–ছয় দিনের পথ ছয় মাসেও অতিবাহন করা ছৰ্ঘট হইয় ওঠে। আমার ঐ ক্ষুদ্র প্রবন্ধটিতে আমি যে, কি ভাবে কোন কথা বলিয়াছি, তাহা বুঝিতে পারা কিছুই কঠিন নহে –অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসীস্ স্বারাজ্যপন্থীদিগের রীতি পদ্ধতির সঙ্গে মার্কিন দেশীয় স্বারাজ্যপন্থীদিগের কার্য্যকলাপের রীতিপদ্ধতির তুলনা প্রসঙ্গে বলিয়াছি “ওয়াশিংটন ধৰ্ম্মের অবতার ছিলেন বলিলেই হয়,” আর বলিয়াছি যে, উহার ধৰ্ম্মপ্রধান অধ্যবসায়ের ফল “নিষ্কণ্টক স্বারাজ্য-লাভ" ! ধৰ্ম্মের বলবত্তা ।


১৪:২৪, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~"

8《이 আমার ঐ সকল কথার সঙ্গে আমি অনায়াসে এইরূপ একটা টীকা বা টিপ্পনী সংলগ্ন করিয়া দিতে পারিতাম :– “আমার কথার ভাবার্থ এ নহে যে, ওয়াশিংটন দ্বিতীয় ধীশুখ্ৰীষ্ট ছিলেন বা দ্বিতীয় শুকদেব গোস্বামী ছিলেন। আমার কথার ভাবার্থ এই মাত্র যে, রবৃন্সপিয়র প্রভৃতি ফরাসীস স্বারাজ্যপন্থীদিগের এবং ঐ শ্রেণীর আর আর বিপ্লবকারীদিগের তুলনায় ওয়াশিংটন দেবতা ছিলেন বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। এই ভাবার্থটি এক কথায় ব্যক্ত করিতে হইলে অসঙ্কোচে বলা যাইতে পারে যে, ওয়াশিংটন যথাসম্ভব ধৰ্ম্মের অবতার ছিলেন। তেমি, যে জায়গাটিতে আমি বলিয়াছি “নিষ্কণ্টক স্বারাজ্য-লাভ,” সে জায়গায় নিষ্কণ্টক শব্দের ভাবার্থ-যথাসম্ভব নিষ্কণ্টক । যাহা আমি অনায়াসে করিতে পারিতাম তাহা যে আমি করি নাই—আমার ঐ ক্ষুদ্র প্রবন্ধটির ছত্ৰে ছত্রে ঐ রকমের টীকা এবং টিল্পনা যোজনা করিয়া আমি যে, সময়ের, পুথির পাতা'র, এবং পরিশ্রমের অপব্যয় করি নাই, সমালোচক মহাশয় যদি ভাবিয়া দেখেন তবে তিনি আপনিই বলিবেন যে, তাহা না করিয়া তাহাকে আমি বহুতর বৃথা-পরিশ্রমের দায় হইতে বাচাইয়াছি। ফল কথা এই যে, আমার ঐ ক্ষুদ্র প্রবন্ধটিতে আমি যে বিষয়টা'র প্রতি সহৃদয় সজ্জনমণ্ডলীর মনোযোগ আকর্ষণ করিবার জন্য আয়াস পাইয়াছি, বাদ-প্রতিবাদের তরঙ্গ-কোলাহলে তাহ টলিবার বস্তু নহে। “যতোধৰ্ম্ম স্ততোজয়?” এটা যদি আমরা ব্যালা থাকিতে দেখিয়া না শিখি, তবে যথাকালে আমাদিগকে তাহা ঠেকিয়া শিখিতে হইবেই হইবে, ইহা অভ্রান্ত বেদবাক্য। কিন্তু দেখিয়া শিখিবার প্রণালী পদ্ধতি আছে। আমার. ঐ প্রবন্ধটির মন্তব্য কথা ইহা নহে যে, যতো ধৰ্ম্মস্ততো জয়ের প্রামাণিক দৃষ্টান্ত পথে ঘাটে ছড়াছড়ি যাইতেছে-দশক কেবল চক্ষু মেলিয়া চাহিয়া দেখিলেই তাহা সম্মুখে বিরাজমান দেখিতে পাইতে পারে। "যতোধৰ্ম্মস্ততোজয়?” এ কথাটি মনে বোঝা যদিচ খুবই সহজ, কিন্তু উহা কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রত্যক্ষবৎ মূৰ্ত্তিমান দেখিতে হইলে বিধিমতে বুদ্ধিবিবেচনা খাটাইয়া মুখ্য মুখ্য দেশ কাল পাত্রে অনুসন্ধানচালনা ব্যতিরেকে উহা সহজে দেখিতে পাইবার বিষয়