পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৫২ --WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)-------------------------WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি) মূলীভূত হেতু-মুখের তৃষ্ণ, জীবনের তৃষ্ণ, শক্তিসামর্থের তৃষ্ণা। বাসনার ধ্বংস হইলেই এই তৃষ্ণার ধ্বংস হয়। বাসনাকে একেবারে দূরীভূত করিতে হইবে, বাসনা হইতে একেবারে বিমুক্ত হইতে হইবে—মনের মধ্যে বাসনাকে তিলমাত্র স্থান দিবে না। হে ভিক্ষুগণ ইহাই দুঃখনিবৃত্তির প্রকৃত পন্থা।” (৩৬) ইহাই ধৰ্ম্মচক্র প্রবর্তনের উপদেশ। পঞ্চতাপস বুদ্ধদেবের উপদেশে বশীভূত হইয়া, তাহার জয়কীৰ্ত্তন করিতে লাগিল এবং তাহারাই সৰ্ব্বপ্রথমে ভিক্ষুসম্প্রদায়ভুক্ত হইবার জন্য প্রার্থনা করিল। “আইস ভ্রাতৃগণ, আমার ধৰ্ম্মমত উত্তমরূপে পরিব্যক্ত হইয়াছে ; এখন হইতে তোমরা বিশুদ্ধতার অভিমুখে অগ্রসর হও, তাহা হইলে তোমাদের সকল দুঃখ নিবৃত্তি হইবে।” কণ্ডা, ভাদ্য, ভাল্প, মহল্লাম ও অমার্জি এই পাচ শিষ্য সমভিব্যাহারে বুদ্ধদেব বিনাযুদ্ধে পৃথিবী জয় করিবার জন্ত বহির্গত হইলেন। তদনন্তর, যশ নামক সন্ত্রাস্ত বংশের একজন যুবপুরুষ বুদ্ধদেবের উপদেশে বিমুগ্ধ হইলেন। ইনি একজন ভোগবিলাসী, বারাণসী নগরে বিলাস-মুখে মগ্ন ছিলেন। বুদ্ধদেবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া ইনি ঐহিক মুথের অসারত উপলব্ধি করিলেন, এবং পূৰ্ব্বে যেমন তাহার ভোগ-বিলাসে ঐকান্তিক আসক্তি ছিল, এখন আবার তেমনি আগ্রহের সহিত তিনি ব্রহ্মচৰ্য্য অবলম্বন করিলেন। ইনি বুদ্ধদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়া ভিক্ষুর পীতবসন ধারণ করিলেন। তাহার পিতা তাহাকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য অশেষ চেষ্টা করিলেন কিন্তু সমস্ত চেষ্টাই তাহার ব্যর্থ হইল। অবশেষে তিনিও বুদ্ধের ভক্ত হইয় পড়িলেন। যশ এই নবধৰ্ম্মে সহসা দীক্ষিত হওয়ায় তাহার বন্ধুগণ বিস্ময়বিহ্বল হইয়া বলিয়া উঠিল --"যে ধৰ্ম্মের প্রভাবে আমাদের বন্ধু বশীভূত হইয়াছে, না জানি সে ধৰ্ম্মটি কি।” তাহারাও বুদ্ধদেবের সহিত সাক্ষাৎ করিল, এবং তাহার উপদেশ গ্রহণ করিয়া তাহারাও নবধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইল। এইরূপে যখন বুদ্ধদেবের ৬০ জন শিষ্য হইল, তখন তিনি তাহদিগকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রদেশে গমন করিয়া পৃথক্ভাবে মোক্ষধৰ্ম্ম প্রচার করিতে আদেশ করিলেন। “হে শিষ্যগণ ! তোমরা জগতের দুঃখে অমুকম্পান্বিত হইয়া, বিশ্বমানবের প্রবাসী । ৮ম ভাগ। হিতের জন্য, মুখের জন্য, মোক্ষের জন্ত, এখনি যাত্রা কর। দুই জন এক পথে যাইও না! যে ধৰ্ম্ম আদিণ্ঠে মহিমান্বিত, মধ্যে মহিমান্বিত, অস্তে মহিমান্বিত সেই ধৰ্ম্ম প্রচার করতাহার অক্ষরাংশ প্রচার কর—তাহার মৰ্ম্মভাব প্রচার কর। অনাড়ম্বর সরল জীবনের কথা—সম্যক ও নিৰ্ম্মল জীবনের কথা—পবিত্র জীবনের কথা প্রচার কর। এমন লোক আছে যাহাদের চক্ষু পার্থিব ধূলিতে অন্ধীভূত হয় না, কিন্তু যদি তাহারা এই ধৰ্ম্মের উপদেশ শ্রবণ না করে, তাহা হইলে তাহারা কখনই মুক্তিলাভ করিতে সমর্থ হইবে না ; তাহারা এই ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিবে” (৩৭) । আর তিনি স্বয়ং উরুবেল্লা অরণ্যে ফিরিয়া যাইবেন। সেখানে সহস্ৰসংখ্যক বাণপ্রস্থধৰ্ম্মাবলম্বী ব্রাহ্মণ বাস করে, কাশুপ নামে তিন ভ্রাতা তাহাদের অধিনায়ক । এই ব্রাহ্মণের স্বকীয় জ্ঞানের জন্ত, পুণ্যের জষ্ঠ ও তপস্তার জন্য গৰ্ব্বিত ছিল ; তাহারা ঔদ্ধত্য-মিশ্র দক্ষিণ্য সহকারে তাহাকে অভ্যর্থন করিল। কিন্তু যখন বুদ্ধদেব কতকগুলি অদ্ভূত কাৰ্য সম্পাদন করিলেন, তখন সেই ব্রাহ্মণেরা তাহার উচ্চ পদমৰ্য্যাদা অবগত হইয়া শীত কালটা তাহদের সহিত অতিবাহিত করিতে র্তাহাকে অনুনয় করিল ; তিনি সন্মত হইলেন। কেবল, কাশুপদিগের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তাহার অধীনতা স্বীকার করিতে সন্মত হইল না ; তখন বুদ্ধদেব সেই ব্রাহ্মণের মন যে নীচ চিন্তায় বিক্ষুব্ধ হইতেছিল, তাহ তাহার নিকট প্রকাশ করিলেন : “দেখ কাপ্তপ তুমি সিদ্ধপুরুষ নও, ভূমি এখনও সিদ্ধির পথে প্রবেশ কর নাই তুমি এখনও সে পথের কিছুই জান না।” কাশুপ পরাভূত হইল, তাহার চরণে সাষ্টাঙ্গে প্ৰণিপাত করিল : "হে প্রভূ যাহাতে আমি প্রত্ৰজ্যা ও উপসম্পদ ব্রত গ্রহণ করিতে পারি, আমার প্রতি এরূপ অনুগ্রহ কর।” কিন্তু এ পর্য্যন্ত বুদ্ধদেব বেশীর ভাগ, ব্রহ্মচারী ও ব্রাহ্মণদিগকেই নবধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন। তদনন্তর তিনি পথ চলিতে চলিতে মগধরাজ্যের রাজধানী রাজগৃহে আসিয়া পৌছিলেন। তাহার আগমন সমাচার পাইয়া মগধরাজ বিম্বিসার মহাপ্রভুকে সম্বৰ্দ্ধনা করিবার জন্ত অমুচরাদি সমভিব্যাহারে সবিভবে তাহার নিকট আসি৷

১০ম সংখ্যা । ] ছিলেন, রাজা বুঝিতে পারিলেন না, উহাদের মধ্যে মহা গ্রন্থ কে ; কিন্তু কাশ্যপ বুদ্ধদেবের পদতলে পড়িয়া বলিয়া উঠিল, "ইনিই মহাপ্রভু, আমি ইহঁর শিষ্য।" বিম্বিসার বিশ্বাস্তম্ভিত হইয়া, বুদ্ধের ধৰ্ম্মোপদেশ শ্রবণ করিলেন এবং ীেন্ধসমাজভূক্ত হইলেন। পরে এই বিম্বিসার বৌদ্ধধর্মের একজন পরম সহায় বলিয়া পরিচিত হন। অভিজাতবর্গের অনেকেই রাজার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিল। এইরূপে বৌদ্ধধৰ্ম্ম আরও ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল । - এই রাজগৃহে, বুদ্ধদেব দুইটি ব্রাহ্মণ যুবককে স্ব দক্ষিত করেন , তাহার শিষ্মমণ্ডলীর মধ্যে এই দুইজন কিছুকাল পরে প্রখ্যাত হইয় উঠে। এই যুবকদ্বয়ের নাম, -সারীপুত্র ও মোগল্যায়ন। তথনকার দর্শন সম্প্রদায়ের যিনি অধিনায়ক-ইহঁারা সেই সঞ্জয়ের শিষ্য ছিলেন। মজিং নামক বুদ্ধের এক শিষ্যের সহিত, ঘনিষ্ঠ সখ্যবন্ধনে আবদ্ধ এই যুবকদ্বয়ের সাক্ষাৎ হইল। অশ্বজিৎ সেই সময় ভিক্ষা করিয়া বেড়াইতেছিলেন এবং তখনকার প্রথানুসারে ধৰ্ম্মবিষয়কবাগযুদ্ধে প্রবৃত্ত ছিলেন। শিষ্টাচারসঙ্গত পরস্পরের সহিত বন্ধুভাবে অভিবাদন বিনিময়ের পর মারীপুত্র জিজ্ঞাসা করিলেন —“কাহার নামে তুমি সংসার ভ্যাগ করিয়াছ, এবং তুমি কোন ধৰ্ম্মাবলম্বী ?” অশ্বজিৎ উত্তর করিলেন –“মহাশ্রমণ সেই তথাগতের নামে সংসার ত্যাগ করিয়াছি এবং তাহারই ধৰ্ম্ম আমি অবলম্বন रुब्रिड्रांछ् ि।" —“আমাকে সেই ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে শিক্ষা দেও।” —“আমি নিজেই শিক্ষানবীস, আমি তোমাকে কি শিক্ষা দিব ? আমি তার সারমৰ্ম্ম তোমার নিকট বলতে পারি।” —“অল্পই হোক বেশীই হউক তাহাতে কি যায় আইসে ! আমি সেই ধৰ্ম্মের সারমৰ্ম্মই চাই, বচন চাইনে।” তখন অশ্বজিৎ উত্তরে এই বাক্যটি বলিলেন, যাহা বৌদ্ধধৰ্ম্মের একটি মূল স্বত্র হইয়া দাড়াইয়াছে। “যে সকল পদার্থ কোন কারণ হইতে উৎপন্ন হয়, সেই সকল পদার্থের কারণটি কি এবং কিরূপে তাহাদের অস্ত হয়— তথাগত তাঙ্গারই শিক্ষা দিয়া থাকেন। ইহাই মহাশ্রমণের ধৰ্ম্ম।” তদনন্তর, এই মানুষের চরমগতির আলোচনাতেই যাহারা বৌদ্ধধৰ্ম্ম । QQS) উঠিলেন —“ই!” আমরা মৃত্যু হইতে মুক্তিলাভের উপায় পাইয়াছি।” উহারা তখনি বুদ্ধদেবের পদতলে আসিয়া পতিত হইল। বুদ্ধদেব তাহাদিগকে দীক্ষিত করিয়া তাহার শিষ্য বর্গের মধ্যে সৰ্ব্বপ্রধান বলিয়া ব্যক্ত করিলেন। সঞ্জয়, " স্বকীয় শিষ্যগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া, এরূপ ক্রোধাবিষ্ট হইলেন যে সেই ক্রোধের আবেশে, একটি শিরা ছিন্ন হইয়া র্তাহার মৃত্যু হইল। তদনন্তর, বুদ্ধদেব স্বীয় পরিবারবর্গের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য আর একবার কপিলবস্তুতে বাইবেন বলিয়া সঙ্কল্প করিলেন । ৮ বৎসর হইল তিনি সেখান হইতে চলিয়া আসিয়াছেন—তিনি যখন চলিয় আসেন তখন কপিলবস্তু নিদ্রিত ছিল, এক্ষণে এই সমগ্র নগর তাহাকে অভ্যর্থনা করিবার নিমিত্ত জাগ্রত হইল। তাহার আগমন সংবাদ পাইয়া রাজা গুদ্ধোদন, তাহার সমস্ত পুরুষ আত্মীয় সমভিব্যাহারে, পুত্র সিদ্ধার্থকে অভিবাদন করিবার নিমিত্ত নগর হইতে বহির্গত হইলেন। পাশ্ববৰ্ত্তী কোন এক অরণ্যে পুত্রের সহিত র্তাহার সাক্ষাৎ হইল। কারণ, বৌদ্ধসংঘের নিয়মানুসারে, তাহার শিষ্যদিগের দ্যায় তিনিও কোন গৃহস্থের গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করিতে পারেন না। এই সাক্ষাৎকারের ব্যাপারটা বড়ই মৰ্ম্মস্পশী—পিতার প্রতি ভক্তি ও ভালবাসায় বুদ্ধদেবের হৃদয় ভরিয়া উঠিল। কিন্তু পুত্রকে ভিক্ষুবসন পরিহিত ছিন্নৰ্ম্মশ্র ছিন্নবেশ দেখিবেন ইহা শুদ্ধোদনের অসহ হইল। পরদিন প্রাতে বুদ্ধদেব ভিক্ষাপাত্রহস্তে দ্বারে স্বারে ভিক্ষা করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। এই কথা নগরে রাষ্ট্র হইল ; শুদ্ধোদন ইহা শুনিতে পাইয়া তৎক্ষণাৎ বুদ্ধের নিকট আসিলেন। “বৎস! দরিদ্রের ন্তায় . দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়া কেন আমার অবমাননা করিতেছ?” বুদ্ধ উত্তর করিলেন –“মহারাজ ! ইহাই আমার কুলধৰ্ম্ম।”—“আমরা ক্ষত্রিয় রাজবংশ হইতে সমুৎপন্ন, আমাদের মধ্যে এপর্য্যস্ত কেহই দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়া এতটা নীচতা স্বীকার করে নাই।” কিন্তু বুদ্ধ একটু হাসিয়া এইরূপ উত্তর করিলেন —“আপনি রাজবংশোদ্ভব বলিয়া গৰ্ব্ব করিতে পারেন, কিন্তু আমার পূৰ্ব্বপুরুষ- , উপস্থিত হইলেন। বুদ্ধদেব ও কাশ্যপ পাশাপাশি উপবিষ্ট l এতদিন ব্যাপৃত ছিলেন, সেই দুই তত্ত্বজ্ঞানী বলিয়া অতীতকালের বুদ্ধগণ এবং তাহারাও আমার ম্ভাৱ ভিক্ষ