পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N Neుం তাহাকে ছোট করা হয়। তাহার উদ্ধ দৃষ্টি অন্যত্র ছিল ; এই পৃথিবীর দুঃখ কষ্ট হইতে মানুষকে উদ্ধার করা, মুখ ও দুঃথকে, দৈন্য ও সমৃদ্ধিকে সমানরূপে অবজ্ঞা করিতে শিক্ষা দেওয়া, যাহাতে মানুষের বাহাজ্ঞান বিলুপ্ত হয় সেইরূপ ধ্যানে নিমগ্ন হইতে উপদেশ দেওয়া, ইহাই তাহার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ জীবন যাপন করিয়া, প্রতিবাসীর প্রতি দয়াদাক্ষিণ্য প্রকাশ করিয়া, মানুষ আপনার আত্মাকে উন্নত করিতে পারে, এবং এইরূপে মৃত্যুকালে সেই বিশুদ্ধ অবস্থা প্রাপ্ত হয় যাহাতে করিয়া তাহার আর পুনর্জন্ম হয় না, এবং সে নিৰ্ব্বাণ প্রাপ্ত হইয়া, সংসারচক্র অতিক্রম করিয়া, নিত্য শান্তি লাভ করে। মানুষের ঐহিক ও পারত্রিক মঙ্গলের জন্য ইহাই বুদ্ধের উপদেশ। বুদ্ধ যে সমাজ-সংস্কারক ছিলেন না তাহার প্রমাণ—বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম ও ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম অবিরোধে পাশাপাশি একত্র বাস করিত ; লোকসংখ্যা ও আচার ব্যবহারে বিভিন্ন হইলেও, তিব্বং, চীন, ব্রহ্মদেশ হইতে সিংহল পর্য্যস্ত বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রসারিত হইয়াছিল ; কেবল পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ শতাব্দীতে, অর্থাৎ বুদ্ধদেবের মৃত্যুর প্রায় ১২০০ বৎসর পরে,—ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্মের উৎপীড়নে বৌদ্ধধৰ্ম্ম ভারত হইতে তিরোহিত হয়। তাছাড়া, বুদ্ধ যে সমাজ-সংস্কারক ছিলেন না, তাহার আর এক প্রমাণ,—যেখানে আজিও বৌদ্ধধৰ্ম্ম রহিয়াছে—সেই সিংহলে ক্ষত্রিয়বর্ণ রহিত হয় নাই (৪১)। অতএব, জাতিভেদ উঠাষ্টয়া দেওয়া তাহার ধৰ্ম্মপ্রচারের মুখ্য উদ্দেশু ছিল না, পরস্তু তাহার উপদেশের ফলে কাৰ্য্যতঃ জাতিভেদ উঠিয়া যায়। তিনি পৌরোহিত্যপদ সকলের জন্তই-উন্মুক্ত রাখিয়াছিলেন ও মঠের ভিক্ষুদের জনু চিরব্রহ্মচর্য্যের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন ;–এই কারণেই ব্রাহ্মণ-বর্ণ রহিত হইয়া যায়। কেন না, ব্রাহ্মণের অপর বর্ণকে আপনাদের মধ্যে প্রবেশ করিতে দিত না ; পাছে ভিন্ন বর্ণের লোক তাহদের মধ্যে মিশিয়া যায় এই জন্য ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীকেই বিবাহ করিত, অপর বর্ণের সহিত -বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। কিরূপ চিন্তাপ্রণালী অনুসরণ করিয়া বুদ্ধদেব তাহার —ধৰ্ম্ম ব্যবস্থা সকল প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন, যদিও ইহা খুব প্রবাসী । - নিশ্চিতরূপে এখন বলা ੋ ੋਜ, কিন্তু উদার ੋਜ [ ৮ম ভাগ । চরিত ও তাহার উপদেশাদি হইতে এই সম্বন্ধে কতকটা আভাস পাওয়া যায়। শাক্যমুনি শৈশব হইতেই ধ্যানপ্রবণ ছিলেন ; তাহার বয়স-সুলভ ও তাহার উচ্চপদসুলভ আমোদ-প্রমোদে তিনি কথন যোগ দিতেন না। অস্তদৃষ্টি ও আত্মচিন্তার আবির্ভাব হইলে, মানুষ বাহবিষয়ে আর মুখ পায় না, সংসার তাহার নিকট আর রমণীয় বলিয়া মনে হয় না। শাক্যমুনি শীঘ্রই সংসারের অসারত হৃদয়ঙ্গম করিলেন ; তাহার যেরূপ স্বকুমার হৃদয়, তাহার যেরূপ প্রথর বৃদ্ধি, তাহাতে তিনি রাজদরবারের অসার ও কলুষিত জীবন-প্রণালী গ্রহণ করিতে পারিলেন না এবং যদিও তিনি এমন একটি স্বপত্নী পাইয়াছিলেন যে তাহাকে দেবতার স্থায় পূজা করিত, যাহা হইতে তিনি একটি পুত্ররত্ন লাভ করিয়াছিলেন—তবু তিনি স্ত্রী, পুত্র, রাজত্ব সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া তাপসব্রত অবলম্বন করিলেন। এই সময়ে গৌতম, শুধু নিজের মুক্তি চিন্তা করিতেছিলেন, শুধু পরম সত্যের অন্বেষণ করিতেছিলেন। ইহার জন্য তিনি সকল প্রকার ক্লেশস্বীকার করিতে প্রস্তুত ছিলেন। যে সন্ন্যাসীদিগের দ্বারা ভারত তথন পরিব্যাপ্ত ছিল, সেই সন্ন্যাসীদিগের দৃষ্টান্ত অনুসারে তিনি একজন প্রসিদ্ধ বিদ্বান ও শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করিলেন এবং স্বগ্নতত্বালোচনার সঙ্গে সঙ্গে, যার-পর-নাই ", তপশ্চরণে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি যে সত্যের অন্বেষণ করিতেছিলেন তাহা প্রাপ্ত হওয়া দূরে থাকুক, তপশ্চরণে তাহার শরীর ক্ষীণ ও অবসন্ন হইয়া পড়িল ; তখন তিনি একাকী একটা অরণ্যে গিয়া ধ্যানে নিমগ্ন হইলেন। অবশেষে সেই খানেই তিনি দুঃখের মূল কারণ ও দুঃখ নিবারণের উপায় আবিষ্কার করিলেন । যে জ্ঞানের জন্ত তাহার একটা জলন্ত আকাঙ্ক্ষা ছিল, অবশেষে সেই জ্ঞান তিনি লাভ করিলেন। কিন্তু সেই জ্ঞান লাভ করিয়া এখন তিনি কি করিবেন ? এই সময়ে হয় ত প্রচারের কথা তাহার মনে আসিয়াছিল, কিন্তু যখন ভাবিলেন এই ; প্রচারকার্য কি বিশাল ব্যাপার, তখন ইয়া গে সঙ্কল্প আবার পরিত্যাগ করিলেন । সন বলিলেন,--- ‘বাহার এখানকুর সংস্থা বর্কে দিয়া বেড়া, ষ্ট্রে ১২শ সংখ্যা । ] তৃষ্ণ ও বাসনার ক্ষয়, নিৰ্ব্বাণ–এই সমস্ত বিষয় মনে ধারণ করা বড়ই কঠিন। অনেক কষ্টকর সংগ্রামের পর যাহা আমি লাভ করিয়াছি, তাহা জগতের নিকট প্রকাশ করায় কি ফল ? যাহার মন রাগ ও দ্বেষে পূর্ণ, সত্য তাহার নিকট চিরকালই প্রচ্ছন্ন থাকে।” এই সময়ে গৌতম, ধৰ্ম্মপ্রচারের সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিতে প্রায় উষ্ঠত হইয়াছিলেন, তিনি বিজন বনে শান্তভাবে তাপসের জীবন যাপন করিবেন এবং শাস্তচিত্তে নিৰ্মাণ-প্রাপ্তির জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকিবেন, এইরূপ স্থির করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার মহৎ অন্ত:করণ এই স্বার্থপর ও কাপুরুষোচিত সঙ্কল্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইয়া উঠিল। তিনি যে সত্য লাভ করিয়াছেন, তাহা জগতের নিকট প্রচার করিতে হইবে ; যে সকল হতভাগ্য লোক, দুঃখকষ্টের মধ্যে জীবন • যাপন করিতেছে, যাহাদের জীবনে সুথের আশামাত্র নাই, তাহাদের উদ্ধারের চেষ্টা করিতে হইবে । অবশেষে তাহার ধৰ্ম্ম তিনি প্রচার করিবেন বলিয়া স্থির সঙ্কল্প হইলেন। তিনি বলিয়া উঠিলেন :–“নিত্যধামের দ্বার সকলের প্রতিই উদঘাটিত হউক, যাহাঁদের কাণ আছে তাহার এই কথা শুমুক ও শুনিয়া বিশ্বাস করুক।” শাক্যসিংহ অরণ্য পরিত্যাগ করিয়া পুণ্যনগরী বারাণসীর yf যাত্রা করিলেন ; এই থানেই তিনি তাহার প্রথম উপদেশ বিবৃত করিলেন,—সেই উপদেশের মধ্যেই বৌদ্ধধৰ্ম্মের মুখ্য তত্ত্বগুলি সন্নিবিষ্ট আছে ; এবং এই খানেই ৪০ বৎসর ধরিয়া তিনি তাহার ধৰ্ম্ম প্রচার করেন। তিনি তাহার উপদেশের মধ্যে ঈশ্বরেরও উল্লেখ করিলেন না, জগতেরও উল্লেখ করিলেন না ; বৌদ্ধধৰ্ম্মের বাহা একমাত্র জ্ঞাতব্য বিষয়, সেই মুক্তি ও মুক্তিলাভের উপায় সম্বন্ধেই উপদেশ দিলেন। এই ধানেই বুদ্ধের মনোগত চিন্তা ও হৃদয়ের তাত্র অনুভবশালতা স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায়। মানুষ দুঃখভোগ করিতেছে, কিন্তু মানুষের দুঃখভোগ করা উচিত নহে। মানুষ অজ্ঞ হউক বা জ্ঞানী হউক, জগন্ধর উৎপত্তি ও পরিণাম জামুক বা নাই জামুক, এই জগৎ সস কি অসীম, মৃত্যুর পরেও সাধুপুরুষের মস্তিত্ব থাকে কি ধ" না—এ ক্ষে মানুষের জ্ঞান থাকুক - y বুদ্ধ সমাজ-সংস্কারক, না মুক্তি-প্রচারক ? সব মনুষ্যের পক্ষে কাৰ্য্যকারণতত্ত্ব, লয়ুতত্ত্ব, বিয়োগতত্ব -- --- - WikitanvirBot (আলাপ)് বা নাই থাকুক তাহাতে কিছুই আসিয়া যায় না। এসমস্ত বিষয়ের উপর মানুষের শাস্তি ও পরমতত্বের জ্ঞান নির্ভর করে না, অতএব এ সমস্ত নিরর্থক। কিন্তু দুঃখ, দুঃখের মূল কারণ, দুঃখ নিবারণ ও দুঃখ নিবারণের উপায়,— এই চারিটি মুখ্যতত্ত্ব মানুষের জানা নিতান্তই আবশ্বক। যদি বুদ্ধ ঈশ্বরের কোন উল্লেখ করিয়া না থাকেন তবে zlei *Iazt2stg at* ( "fel Barthelemy–SaintHilaireএর বিশ্বাস) পরস্তু তাহার মূল লক্ষ্য যে মুক্তি তাহার সহিত উহার কোন সংশ্রব নাই বলিয়াই উল্লেখ করেন নাই। তাছাড়া, যে সকল বচনে ঈশ্বরের উল্লেখ আছে সেই সকল বচন সহজেই খুজিয়া পাওয়া যায়। ইহার প্রমাণ—তিনি একস্থলে বলিয়াছেন :–“যে গৃহে সস্তানেরা পিতামাতাকে ভক্তি করে, সেই গৃহে ব্ৰহ্ম বাস করেন।” “অভিধৰ্ম্ম-কোষ” গ্রন্থের একস্থলে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে একটি বচন আছে, যাহা পাঠ করিলে এবিষয়ে আর কোন সংশয় থাকিতে পারে না :–“জীবের ঈশ্বরের দ্বারাও স্বল্প হয় নাই, আত্মার দ্বারাও স্বৰ্ষ্ট হয় নাই, পঞ্চভূতের দ্বারাও স্পষ্ট হয় নাই।” এখানে এই বিষয়ের আলোচনা আর অধিক করিব না-যে অধ্যায়ে বৌদ্ধ মতবাদ সমূহের ব্যাখ্যা করিব, সেই খানে আবার এই বিষয়ের আলোচনা করা যাইবে। এখন আমি শুধু এইটুকু দেখাইব যে, তাহার সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎযুগের দার্শনিক পণ্ডিতদিগের অবজ্ঞার পাত্র হইবার আশঙ্কাসত্ত্বেও, বুদ্ধদেব, ইতর সাধারণের—অর্থাৎ অজ্ঞ, দুৰ্ব্বলচিত্ত ও দরিদ্রদিগের . মুক্তির জন্ত বদ্ধপরিকর হইয়াছিলেন। সে সময়ে ভারতে । যে সকল দৰ্শনতন্ত্র বিদ্যমান ছিল, তাহাদের অপেক্ষাউচ্চতর না হউক, তাহদের সমান কোন এক দৰ্শনতন্ত্র তিনি স্থাপন করিলেও করিতে পারিতেন ; কিন্তু তাঁহ না করিয়া, স্বশ্রেণীর লোকের নিন্দার ভাজন হইয়াও তিনি তাহার ধৰ্ম্মকে. শুধু নৈতিক ভিত্ত্বির উপর সংস্থাপন করিলেন, সকলকেই তংগ্রহণের অধিকারী করিলেন এবং ষে সকল বিষয়ের মীমাংসা করা অতীব দুরূহ, যে সকল সমস্তার সহিত আধ্যাত্মিক মুক্তির কোন সংস্রব নাই, সে সমস্ত এক পাশে সরাইয়া রাখলেন –চিত্রপটের আলোক