পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

دنيانه ' ভাগে না আনিয়া ছায়া-ভাগে রাথিয়া দিলেন। খৃষ্টও কি ঐরূপ ধরণে কাজ করেন নাই ? খৃষ্টধৰ্ম্মের মধ্যে যে কতকগুলি জ্ঞেয় রহস্ত আছে, তাহ শুধু ভক্তদিগের জীবনে ব্যবহার করিবার জন্যই রহিয়াছে, তাহা চিন্তাআলোচনার বিষয় নহে । যাই হোক, বুদ্ধদেব যে করুণ-হৃদয় ছিলেন, সে বিষয়ে কোন সংশয় থাকিতে পারে না। তিনি বলিয়াছেন, “আমার এই মুক্তির ধৰ্ম্ম সকলেরই জন্য", এবং বিশ্বমানবের হুঃখ নিবারণের জন্ত, তিনি একটি উপায় আবিষ্কার করিয়াছেন ; মনকে সমাহিত করিয়া, যোগে নিমগ্ন হইয়া, মন্ত্রাদি আবৃত্তি করিয়া, সংসারের দুঃখ সমূহকে অতিক্রম করিতে হইবে ;–ইহাই তাহার উপদেশ । যোগসাধন অপেক্ষা দুঃখ নিবারণের প্রকৃষ্ট উপায় আর কি হইতে পারে ? অবশু, শাক্যমুনি,—বুদ্ধিমান, মুপণ্ডিত অনেক ব্রাহ্মণকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করিতে কোনরূপ অনিচ্ছা কিংবা অবজ্ঞা প্রকাশ করেন নাই ; কিন্তু সেইরূপ সমান ভাবে, তিনি দরিদ্র অজ্ঞ ও দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকেও সাদরে গ্রহণ করিতেন। অনেকগুলি বচনের দ্বারা আমাদের এই কথা সপ্রমাণ হয় ; এবং এই কারণেই, তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্ত সন্ন্যাসীরা র্তাহার বিদ্বেষী ছিল। পূর্ণ নামক এক ব্যক্তির কাহিনী দৃষ্টান্ত-স্বরূপ এইখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে। কোন বণিকের ঔরসজাত দাসীপুত্র পূর্ণ, দেশ বিদেশে ভ্রমণ করিয়া প্রভূত অর্থসঞ্চয় করে। তাহার জ্যেষ্ঠভ্রাতা তাহার বিবাহ দিতে ইচ্ছুক হইয় তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তুমি কাহাকে বিবাহ করিতে চাও? কিন্তু পূর্ণ উত্তর করিল “আমি ইন্দ্রির মুখের অভিলাষী নই। আপনার অনুমতি পাইলে, আমি ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করিব।” তাহার ভ্রাতা যার-পর-নাই বিস্মিত হইরা বলিল ;–“কি ! যখন আমরা দরিদ্র ছিলাম তখন ভিক্ষুবৃত্তি অবলম্বন করিবার কথা তোমার মনে আসে নাই ; আর এখন আমরা ধনশালী হইয়াছি—এখন তুমি কিনা ধৰ্ম্মত্রত গ্রহণ করিবে ?” অতএব ইহা হইতে সপ্রমাণ হয়, যাহারা দীন দরিদ্র নিরুপায় তাহারাও বুদ্ধের ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে প্রবাসী । - [ ৮ম ভাগ । পারিত। তাই ব্রাহ্মণের বুদ্ধকে যখন-তখন উপহাস x করিত। কোন অজাত-শিশু সম্বন্ধে উপদেশ দিবার সময় তিনি তাহার মনোভাব এইরূপ প্রকাশ করিয়াছিলেন –“যখন গৌতম বলিয়াছিলেন, ঐ গর্ভস্থ শিশু আমার ধৰ্ম্মই অবলম্বন করিবে, তখন তিনি সত্য কথাই । | রূপান্তরিত হইয়াছে। বলিয়াছিলেন। যখন তোমার পুত্রের অশন বসনের কোন উপায় থাকিবে না, তখন সে নিশ্চয়ই ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করিবার জন্য, শ্রমণ গৌতমের নিকট আসিবে।” (৪৪) একজন দুর্দশাগ্রস্ত দ্যুতকার, সংসারে বিরাগী হইয়া, ভিক্ষুব্রত অবলম্বন করিবার উদ্দেশে এই কথা বলে—“তখন আমি উন্নত মস্তকে রাজপথে চলিব।” আবার, কোশলরাজের ভ্রাতা কাল নামক একটি যুবাপুরুষ, কোশলরাজের আদেশক্রমে ছিন্নাঙ্গ হওয়ায়, বুদ্ধের শিষ্য আনন্দ যখন তাহার ক্ষত সারাইয় দেন তখন সে বুদ্ধের ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করে। গত শতাব্দীতে একজন • ভিক্ষু, Rhodia জাতের নিকট বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচার করার সিংহলরাজ যখন তাহাকে অপমানিত করেন, তখন সে এইরূপ উত্তর করে ; “ধৰ্ম্ম সকলেরই সাধারণ সম্পত্তি হওয়া উচিত।” আমার মতে প্রচার কার্য্যটাই বুদ্ধদেবের উদার লোকহিতৈষণার একটা জলস্ত প্রমাণ। র্তাহার পূৰ্ব্বে, প্রচার বলিয়া কোন পদ্ধতি কোন" মধ্যেই ছিল না ; সকল ধৰ্ম্মেরই নিকট উহা অজ্ঞাত ছিল। পুরাকালে দীক্ষিত ব্যক্তিরাই ধৰ্ম্মমতগুলি জানিতে পারিত, সাধারণ লোকের নিকট উহার আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল । আবার ভারতবর্ষে, পুরোহিত-জাতি ব্রাহ্মণেরাই ঐ সকল গুহ ধৰ্ম্মমতের একমাত্র রক্ষক ছিল, এবং একমাত্র উহারাই শাস্ত্রীয় গ্রন্থ সকল অধ্যয়ন করিতে পারিত। শাক্যমুনির আগমনে সমস্তই পরিবর্ধিত হইল ; বিশেষা ধিকারসম্পন্ন বর্ণের যে সকল সত্যকে অতি সাবধানে নিজের হাতে রাখিয়া দিয়াছিল, শাক্যমুনি সেই সমস্ত সত্য প্রচার করিয়া সৰ্ব্বসাধারণের নিকট উদঘাটত করিলেন। ইহা হইতেই, বৌদ্ধধর্মের মধ্যে খুব এক সাধাস ভাব আসিয়া পড়িয়াছে। এই গ্য",ণী সরলতা—উহাদের সাক্ষর মধ্যে পৰিলক্ষিত হন। ভা,--এই ১২শ সংখ্যা । ] বাহাতে নিৰ্ব্বোধ লোকেরাও অনাস্বাসে বুঝিতে পারে এই জন্য কোন বিষয় সম্বন্ধে যুক্তি প্রদর্শন করিতে হইলে, অসংখ্যবার পুনরাবৃত্তি করিয়া তাঙ্গ বিবৃত করা হইত। আমি বৌদ্ধধর্মের আদিম মতগুলির কথা বলিতেছি। পরে, অন্য সকল ধৰ্ম্মের ন্যায় বৌদ্ধধর্ক্সের মতগুলিও ক্রমশ প্রজ্ঞা-পারমিতার দ্যায় গ্রন্থগুলি দর্শনগ্রন্থ বই আর কিছুই নহে,—তাছাতে বৌদ্ধধর্মের মূলভাবটি নষ্ট হইয়াছে। বৌদ্ধ-সাহিত্য, সাহিত্যের হিসাবে যে খুব উচ্চদরের নহে—মধ্যম শ্রেণীর সাহিত্য,— এই সরলতাই তাহার মূল কারণ। সৎধৰ্ম্মের দ্বারা, সত্যের দ্বারা যাহাতে সমস্ত জগৎ উপকৃত হয়, বিশেষত নিম্ন শ্রেণীর লোকের উপকৃত হয়, এই উদ্দেশেই তিনি প্রচার-পদ্ধতি প্রবর্ধিত করেন। এবং তাহার ধৰ্ম্ম প্রচার করিবার জন্য তিনি তাহার কতকগুলি শিষ্যকে প্রচারক-পদে বরণ করিয়াছিলেন— । তাছারাই দেশ বিদেশে ধৰ্ম্ম প্রচার করিয়া বেড়াইত। ফলত, বৌদ্ধ ভিক্ষু শুধু নিজে কঠোর তপশ্চরণ করিয়া, নিষ্কলঙ্ক জীবন যাপন করিয়াই সিদ্ধিলাভের চেষ্টা করিতেন না, পরস্তু কঠোর পরীক্ষার মধ্যে থাকিয়া যাহাতে র্তাহার শুভচেষ্টায় ফলভাগী অল্প লোকেও হইতে পারে—এইরূপ সিদ্ধিলাভই তিনি আকাঙ্ক্ষা করিতেন। ধৰ্ম্ম যে এত শীঘ্ৰ দেশবিদেশে ব্যাপ্ত হইয়া ছল, প্রচার-পদ্ধতিই তাহার নিগৃঢ় কারণ। বুদ্ধদেব শান্তিময় প্রচাৰকাৰ্য্যের দ্বারাই হার ধৰ্ম্ম চতুর্দিকে প্রসারিত করিয়াছিলেন ; তাহার দিগবিজয়ের মধ্যে একটুও রক্তের দাগ দেথা যায় না । তাই আমরা দেখিতে পাই, যাহারা ভিক্ষুসম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবেশ কুরিতে পায় না, তাহাদের উল্লেখ করিয়া এইরূপ লিখিত হইয়াছে —“যাহার রক্তপাত করিয়াছে তাহারা ভিক্ষু হইতে পরিবে না।” পাতিমোক্ষ সংহিতায়, মহাপাপী, ঋণগ্রস্ত ও সৈনিকপুরুষদিগকে ভিক্ষুশ্রেণীর মধ্যে গ্রহণ করিতে নিষেধ আছে (৪৫)। শাক্যমুনির প্রকৃত উদ্দেশু কি ছিল তাহা বোধ হয় যথেষ্টরূপে বৰ্শিত হইয়াছে :--তিনি মানুষকে সংসার হইতে বিচ্ছিন্ন ক", ও ধাৱে শিক্ষা দিয়া, মানুষকে o איי বুদ্ধ সমাজ-সংস্কারক, না যুক্তি-প্রচারক । - \'Noტა) মুক্তিদান করিবার জন্তই ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। তাই, দার্শনিকের আসন ত্যাগ করিয়া তিনি ধৰ্ম্মপ্রচারক হইয় দাড়াইলেন ; এবং যে সত্য তিনি পাইয়াছিলেন, তাহ ৪• বৎসর ধরিয়া জনসমাজে প্রচার করেন। অবদান-শতক হইতে একটা বাক্য আমি নিয়ে উদ্ধৃত করিতেছি । তাছায় সত্যত “সংযুক্ত-নিকার” নামক পালী ভাষার বৃহৎ সঙ্কলন-গ্রন্থে, ও ধৰ্ম্মপদের পালী-ভায্যেও সমর্থিত হইয়াছে। উহা হইতে বুদ্ধের দয়া ও জ্ঞানের পরিচয় এবং ভারতীয় আর্য্যদিগের কোমল স্বভাবের বিলক্ষণ পরিচয় পাওয়া যায় ; ইহা যুদ্ধসম্বন্ধে গৌতমের छेद्धि । কোশল-রাজ প্রসেনজিৎ ও মগধ-রাজ অজাত শক্ৰ— এই উভয়ের মধ্যে শক্রতা ছিল। প্রসেনজিৎ যুদ্ধে তিনবার পরাজিত হইয়া, তাহার পর তিনি অজাতশত্রুকে পরাভূত করিয়া বন্দী করেন। অজাতশত্রুকে বুদ্ধের নিকট আনিয়া প্রসেনজিৎ বুদ্ধকে এই কথাগুলি বলেনঃ—“আৰ্য্য! এই অজাতশত্র অনেকদিন হইতে আমার প্রতি শক্ৰতাচৰণ করিতেছেন, আমি কিন্তু ইহার কোন অনিষ্ট করি নাই। বিনা কারণে ইনি আমাকে আক্রমণ করিয়াছিলেন। আমি ইষ্ঠার প্রাণ বধ করিতে চাহি না,-আমার মিত্রের পুত্র বলিয়া ইহাকে আমি ছাড়িয়া দিব।” বুদ্ধ উত্তর করিলেনঃ– “ছ, উহাকে ছাড়িয়া দেও।” তাহার পর ভগবান এই কথাগুলি বলিলেন :–“বিজয় হইতে শক্রতা উৎপন্ন হয়, বিজিত ছঃখসাগরে নিমগ্ন হয়। যে ব্যক্তি শাস্তিপ্রিয়, সে জয় পরাজয় পরিত্যাগ করিয়া কল্যাণপথে বিচরণ করে।” “সংযুক্ত নিকারে এই বিষয়টি আরও স্পষ্টরূপে বিবৃত ৷ হইয়াছে। - * ~ “তথন ভগবান এই বিষয় অবগত হইয়া, এই গাথাগুলি আবৃত্তি করিলেন –কোন বিশেষ কারণে উত্তেজিত হইয়া মানুষ মানুষকে কষ্ট দেয়, কোন ব্যক্তি অন্তের নিকট হইতে কষ্ট পাইলে, সে আবার অন্তকে কষ্ট দেয়। যতক্ষণ, ন ছবিপাক উপস্থিত হয়, অর্থাৎ যতক্ষণ না পাপের ফল পাকিস্থা উঠে, ততক্ষণ মানুষ মোহে মুগ্ধ থাকে, ছবিপাক উপস্থিত হইলে মূঢ় ব্যক্তিরা কষ্ট পায়। হত্যাকারী