পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> -op নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করিয়াছিলাম। ‘অ’ ‘আ’ হইতে আরম্ভ করিয়া স্বর ও ব্যঞ্জনের সমস্ত বর্ণগুলি ঠিক পরে পরে আবৃত্তি করিয়া যাইতাম, যে বর্ণ উচ্চারণ করিবা- মাত্রই টেবিলের প্রথম শব্দ পাওয়া যাইত তাহাই আমাদের প্রশ্নের উত্তরের আদ্য অক্ষর বুঝিয়া লইতাম, আবার ‘অ’ আ হইতে আরম্ভ করিয়া যে বর্ণ উচ্চারণে পুনরায় শব্দ হইত তাহ দ্বিতীয় অক্ষর বুঝিতাম, এই ভাবে সমস্ত কথাটা ঠিক হইত। পুরা কথাটা পাওয়া গেলে সেই কথাটা উচ্চারণ করিয়া তাহা ঠিক হইয়াছে কি না জিজ্ঞাসা করা হইত। ঠিক না হইলে প্রথম অক্ষর ভুল, কি দ্বিতীয় অক্ষর ভুল ইত্যাদি জিজ্ঞস করিয়া তাহা সংশোধন করিয়া লওয়া হইত। এই ভাবে কত প্রেতাত্মা আমাদের নিকট তাহদের পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছে। অনেক রকমের ভূত আসিত, ইংরাজ, হিন্দুস্থানী প্রভৃতি। প্রথমে বাংলা ভাষার প্রশ্ন করিয়া জবাব না পাইলে ইংরাজীতে বা হিন্দুস্থানীতে প্রশ্ন করিতাম। ইংরাজ ভূতকে ইংরাজীতে প্রশ্ন না করিলে জবাব পাওয়া যাইত না। একবার একটা ঘটনা ঘটিয়াছিল, সে দিন প্রেতাত্মাকে যতই প্রশ্ন করি তার একটারও ঠিক জবাব পাই না। বলিলাম এ প্রশ্নের জবাব ‘ই’ হইলে একবার শব্দ করিও, ‘না হইলে দুইবার করিও, কিন্তু টেবিল আমাদের সে নিয়মে বাধ্য রহিল না, অনবরত ঠক্ ঠক্‌ করিয়া শব্দ করিয়া যাইতে লাগিল। প্রশ্নের উত্তর কি তাহ কিছুতেই বুঝিতে পারিলাম না। নাম জনিবার জন্য ইংরাজী ও বাংলা ভাষার সকল অক্ষরগুলি আবৃত্তি করিয়া গেলাম কিন্তু • কোন অক্ষরেরই উপর টেবিল কোন শব্দ করিল না। আমরা তখন এই বুঝিয়া নিরস্ত হইলাম যে প্রেতাত্মা যে দেশীয় লোক সে দেশের ভাষা আমরা জানি না। টেবিলে ভূত আসিলে আমাদের পরিদর্শকদিগের মধ্যে ভূত ভবিষ্যৎ ও বর্তমান বিষয়ক নানা রকমের প্রশ্ন করিবার ধুম পড়িয়া যাইত। টেবিল ঠকাঠক্‌ করিয়া সব প্রশ্নের জবাব দিয়া যাইত - অনেকে অতীত ঘটনা ঠিক মিলিয়াছে বলিয়া বিস্ময় প্রকাশ করিতেন, কেহ বা ভবিষ্যদ্বাণী ধ্রুব সত্য বলিয়া জ্ঞান করিতেন ; কেহ বা আশায় উৎফুল্ল কেহ বা নৈরাঙ্গে মিয়মুন হইয়া পড়িতেন ; প্রশ্ন করিয়া উদগ্রীব প্রবাসী । ৮ম ভাগ। | ৩য় সংখ্যা । ] হইয়া সব বসিয়া আছেন—টেবিলের পারে দিকে | যাহার উত্তর না হইলে ভাল হয় তিনি একটা শব্দ শুনি৷ আর একটা শুনিবার জন্য ছট্‌ফট্‌ করিতেছেন, প্রতি মুহূর্ডে আশা করিতেছেন ঐ বুঝি টেবিল উঠিতেছে। পরিশেৰে যখন দেখিলেন টেবিল অচল, তখন তাহার মুখখানি বিব{ হইয়া যাইত। ভূতের সব কথা যে ঠিক হইত তাহা নহে, কিন্তু এক একটা ভবিষ্যদ্বাণী খুব আশ্চৰ্য্য রকমের মিলিয়া ছিল । চক্রস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যে বিষয় জানা আছে সে সম্বন্ধে প্রশ্ন উঠিলে তাহার জবাব নিভূ ল হয়। হিপনটাইজ করিয়া মিডিয়মের দেহে প্রেতাত্মার আবিভাব হইলে আমরা তাহাকে একবার প্রশ্ন করিয়াছিলাম“আপনার ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান সব বলিতে পারেন ?" তাহাতে জবাব পাই,—“ভবিষ্যৎ বলিবার ক্ষমতা আমাদের নাই, মানুষের কাছে ভবিষ্যৎ যেমন অন্ধকারময় আমাদের কাছেও তেমনি,—আমাদের এমন কোন শক্তি নাই যাহার । সাহায্যে সেই অন্ধকারের মধ্যে দৃষ্টি চালাইয় তাহার রহস্ত ভেদ করিতে পারি। তবে আমাদের দেহ জড়বস্তু বিবর্জিত বলিয়া আমরা মুহূৰ্ত্ত মধ্যে সব স্থানে গিয়া—সে যত দূরদেশই হউক—বৰ্ত্তমান ঘটনা জানিয়া আসিতে পারি। আপনাদিগকে কোন প্রেতাত্মা যদি ভবিষ্যতের কোন কথা বলে, বুঝিবেন সে মিথ্যা বলিতেছে, না জানিয়া আন্দাজে বলিতেছে। মানুষের মনের কথা আমরা জানিতে পারি, জড় দেহ হইতে মুক্ত বলিয়া আমরা মানুষের অন্তরট চোখের সামনে বেশ স্পষ্ট দেখিতে পাই—তাহাদের মনের মধ্যে যে ভাব উঠতেছে, লয় পাইতেছে একটু মনোযোগ করিলেই তাহ আমাদের দৃষ্টিপথে পতিত হয় ; এই জন্ত অতীত ঘটনা অনেক সময় আমরা ঠিক বলিতে পারিযখন আপনাবা আমাদিগকে অতীত ঘটনা সম্বন্ধীয় কোন প্রশ্ন করেন তখন তাহার জবাব আমরা আপনাদের মনমধ্যেই অন্বেষণ করি, আপনারা যাহা জানেন না, আমরা তাহার জবাব দিতে পারি না। আপনাদের যদি তাহার জবাব ভুল জানা থাকে, আমরাও ভুল বলিয়া निझे ।” বর্তমান ঘটনা প্রেতাত্মারা ঠিক বলিয়া দিত। আমরা একবার আমাদের একজন বিশেষ বন্ধু তখন কোথায় ੋਜ তাহা আমাদের মিডিয়মকে बिछान করি, তিনি উত্তরে বলেন বোম্বায়ের পথে রেলগাড়ীতে আছেন। আমরা পরে অনুসন্ধান করিয়া জানি তিনি সত্যই সে সময়ে ট্রেণে ছিলেন, বোম্বাই হইতে ফিরিতেছিলেন। একদিন টেবিল নাচিয়া উঠিলে আমরা প্রেতাত্মার নাম জিজ্ঞাসা করিলাম। পূৰ্ব্ব বর্ণিত উপায়ে নাম বাহির হইল তা-ন-সে–ন। আমরা জিজ্ঞাসা করিলাম তিনিই সেই জগদ্বিখ্যাত সঙ্গীতবিদ্যাবিশারদ তানসেন কি, না। টেবিল ঠক করিয়া কেবল একটা শব্দ করিল, জবাব कठेन স্থা। তখন তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল-আচ্ছ, আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে যদি কেহ গান করেন তবে আপনি টেবিলের পায়ের শব্দে ‘তাল দিতে পারেন কি, না। উত্তর হইল স্থা। আমাদের একজন সঙ্গী তখন গাহিতে আরম্ভ করিলেন, ঠিক তালে তালে টেবিল উঠিতে, নামিতে লাগিল—কথন ধীরে ধীরে, কখন দ্রুতভাবে, কথন জোরে, কখন আস্তে আস্তে শব্দ করিয়া নানা ভঙ্গিতে টেবিল ‘তাল দিতে লাগিল—সে শুধু একটা নীরস, কেঠো ঠক ঠক্‌ শব্দ নয়—মনে হইতেছিল সত্যই যেন কি একটা গুরু গম্ভীর বান্ত বাজিতেছে! অল্প ক্ষণের মধ্যেই এই টেবিল-বাস্কে আন গীতিমত জমিয়া উঠিল। আমাদের মধ্যে একজন ৰাষ্ট্ৰনিপুণ ছিলেন। তিনি বলিলেন আমি বরাবর লক্ষ্য করিয়াছি কোথাও তালের ভূল হয় নাই। টেবিলে একদিন ভূত আসিলে আমরা তাহাকে বলিলাম, আচ্ছা আপনি এমন কোন ব্যাপার আমাদিগকে দেখাইতে পারেন যাহাতে আপনার অস্তিত্বের প্রমাণ হয়,— যেমন ধরুন আমরা এই ঘরের দরজা অর্গলবদ্ধ করিব, আর আপনি তাহা খুলিয়া দিবেন। উত্তর হইল-ই। আমরা অর্গল বদ্ধ করিয়া দিলাম, সকলেই উৎকষ্ঠিত হইয়া অপেক্ষ করিতে লাগিলাম দেখা যাউক কি হয়,-দুই মিনিট, পাচ মিনিট, দশ মিনিট কাটিয়া গেল, দ্বার যেমন অর্গলবদ্ধ তেমনই। আমরা প্রশ্ন করিলাম–কি হ’ল ? কোন সাড়া পাওয়া গেল না, তখন টেবিলের ঘাড় হইতে ভূত নামিয়া গিয়াছে। ইহার পরে আর একজন ভূতকে ঠিক ঐন্ধপ করিতে বলা হইয়াছিল, সে জবাব দিয়াছিল—“পারিব না।” ভূতনামাবার টেবিলে একদিন একটা নূতন রকমের باستانی است নেপালে বৌদ্ধধৰ্ম্ম । Y5న ঘটন ঘটল । সে দিন চক্র করিয়া বসিবার খানিকক্ষণ পরে আমাদের দলের একজন শিথিলাঙ্গ হইয়া চুলিয়া পড়িল,—অরক্ষণ পরেই একেবারে অজ্ঞান। আমরা ধরাধরি করিয়া চেয়ার হইতে নামাইয়া এক খাটের উপর তাহাকে শোয়াইয়া দিলাম। সে অনেকক্ষণ নিশ্চল হইয় পড়িয়া রছিল, তাহার পরে দেখা গেল, তাহার দক্ষিণ হস্ত ঘন ঘন কম্পিত হইতেছে। আমরা মনে করিলাম, ভূত সেদিন টেবিলের ঘাড়ে না চাপিয়া, সেদিন দয়া করিয়া বন্ধুর ঘাড়ে চাপিয়াছে। আমরা তাহার হাতে একটা পেন্সিল গুজিয়া দিয়া, একথানা সাদা থাত এগাইয়া দিলাম। তারপর প্রশ্ন করা শুরু হইল। কাগজের উপর লিখিয়া ভূত তাহার জবাব দিতে লাগিল । ক্রমণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়। নেপালে বৌদ্ধধৰ্ম্ম । শাক্যসিংহের জীবদ্দশায় কিম্বা তাহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই নেপালে বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচারিত হয়। যে কুশীনগরে তিনি দেহত্যাগ করেন তাহ নেপালের অন্তর্গত ছিল ইহাও অনেকে প্রমাণ করিতে আয়াস করিয়াছেন। কুশীনগর নেপালের श्रखुशॉड हिल कि ना छांश नि*िफ्रेष्ठ প্রমাণীকৃত না হইলেও শুদ্ধোদনের রাজ্য যে নেপালের পাদদেশ পৰ্য্যন্ত ছিল তাহাতে আর সন্দেহ নাই। যেখানে শাক্যসিংহ ভূমিষ্ঠ হন তথা হইতে নেপাল বহুদূর নয় স্বতরাং নেওয়ারদিগের কিম্বদন্তী অনুসারে শাক্যসিংহ সে রাজ্যে পদার্পণ করিয়াছিলেন তাহা অবিশ্বাস করিবার বিশেষ কোন কারণ নাই । বর্তমান সময়ে নেপালের অধিবাসীদিগের মধ্যে দুইতৃতীয়াংশ বৌদ্ধ, অবশিষ্ট হিন্দু। হিমাচলের ক্রোড়ন্থ অধিকাংশ পাৰ্ব্বত্য রাজ্যসমূহে-যথা নেপাল, সিকিম, ভূটান প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মই লৌকিক ধৰ্ম্ম। কিন্তু নেপালের বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের ষে বিশেষত্ব দেখিতে পাওয়া যায়—তিব্বত, চীন, জাপান, সিংহল প্রভৃতি অপর কোন দেশে প্রচলিত বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের সহিত ইহার তেমন সোসাদৃশু নাই। হিন্দু ধৰ্ম্মের সহিত অপূৰ্ব্ব সংমিশ্রণে ইহা এক