পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yషి লোলুপতা বাড়িবার কথা। ওদিকে হাসপাতালেরও দোষ নাই । সেখানে সে চিকিৎসাধীন রোগী, রোগের তীব্রতা কমিবার আগে তাহাকে ভরপেট মুস্থ লোকের খাদ্য খাইতে দেওয়ার কথা নয় । তাহারা দিয়াছে নিয়ম-মত মাপা খাদ্য ; হরিচরণ হয়ত ভাবিয়াছে মরিবই যদি, না খাইয়া শুকাইয়া মরি কেন। ক্ষুধা যখন অসহ হইয়াছে সে হাসপাতাল ছাড়িয়া চলিয়া আসিয়াছে—হয়ত বলিয়া, হয়ত না-বলিয়াই । কিন্তু বলিয়াই আমুক আর না-বলিয়াই আসুক, ফিরিবার রাস্তাটা খোলা রাখিয়া আসে নাই । সেই কথাই তাহাকে বলিলাম। শুনিয়া সে একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল—ত আর করমু কি । আমার আছে মরণ কপালে, হেরে ঠেকাইবে কেডা।

  • . o, 赛 秦 栋

কপালে মরণ তাহার হয়ত ছিল। হয়ত ছিল না। কিন্তু এমন করিয়া চলিলে তাহাকে আর বেশী দিন বাচিয় থাকিভে হইবে না, ইহাও জানিতাম । তাহার জন্য আমার মাথাব্যথা খুব ছিল না। পৃথিবীতে মানুষ জন্মে এবং মপ্লে ; কত লক্ষ কত্ত কোটি কত জায়গায় ইহারই মত ধীর শাস্ত গতিতে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হইয়। চলিয়ছে তাহার হিসাব কেহ রাখে না । সেই শতলক্ষকোটি মানবের মধ্যে কত বুকভরা কত আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং হয়ত কত মহান ব্যক্তিত্বের মুকুল অকালে বিনষ্ট হইতেছে তাহার কথা নাই তুলিলাম—শতলক্ষের মধ্যে এক জনকে বিশেষ করিয়া আমি সেদিন দেখি নাই। কোনদিনই দেখিতে পারি না । হরিচরণ মরিবে, এ চিন্তায় আমি আহত ই নাই । কিন্তু তাহার নিশ্চিত মৃত্যুর ছায়ার চেয়েও তীক্ষু হইয়া আমার চোখে পড়িয়াছিল তাহার আত্মার, তাহার মনুষ্যত্বের মৃত্যু-বিক্ষোভ । সেইটা আমি সহিতে পারিতেছিলাম না । প্রথম দিন সে আমার কাছে থাইতে চাহে নাই । বলিয়াছিল ক্ষুধায় কাদিতেছে, সেটা শুধুই আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে । সেই হরিচরণ এখন প্রতাঙ্ক আমার কাছেই খাদ্য প্রার্থনা করিতেছে—পাইবে না এই কথা প্রকারাস্তরে শুনিয়াও আবার প্রার্থনা করিতে লজ্জা পাইতেছে না। ভৰালী ჯN`8\ყ অপমান-চেতনার এই অভাবে প্রমাণ পাইতেছিলাম, তাহার মনে অভিমানবোধ কমিয়া আসিতেছে । আমার মতে সেইটাই আত্মার মৃত্যু, আত্মচেতনার মৃত্যু। কিসের জন্য এই অবমাননাকে সে গায়ে মাথিত না, আমি আজও বুঝি না। ইহার ব্যাখ্যা একটা আমার বুদ্ধিমত আন্দাজ করিতে পারি, এই মাত্র । এক হইতে পারে, অন্ত কোথাও করুণা চাহিয় তাহার উত্তরে লাঞ্ছন পাইয়া, তার পর যেখানে সে করুণ পাইয়াছে সেইখানেই মাটি অঁাকড়াইয়া সে পড়িয়া থাকিতে চাহিয়াছে, বন্ধুহীন পৃথিবীতে পরিচিত আশ্রয় ছাড়িয়া আবার নূতন আশ্রয়ের সন্ধানে বাহির হইতে সাহস করে নাই । অন্যত্র ভাত না পাইলে এইখানে আসিবার নিমন্ত্রণ তাহাকে করা হইয়াছিল। তাই অন্যত্র পায় কিনা সেটা যাচাই করার চেষ্টাও সে আর করে নাই। আর তাহা না হইলে তাহার এই অহৈতুক পীতির মূলে ছিল তাহার আলস্ত— যেখানে এক দিন ভাত পাইল সেইখানেই আর এক দিনও যখন পাওয়া যাইতেছে, তখন কষ্ট করিয়া নূতন আশ্রয় খুজিবার কথা তাহার মনেই হয় নাই । এইটাকেই আমি আত্মার মৃত্যু বলি। তখন ইহাই ভাবিয়াছিলাম । এখন কিছু দিন ধরিয়া আমি নিজে বেকার বসিয়া আছি। উপার্জনক্ষম হইয়াও উপার্জন করি না, তাহার জন্য চেষ্টাও যে খুব প্রাণপণে করিতেছি এমন নয় ; সংসারের টাকায় অক্লেশে থাইয়া এবং ঘুমাষ্টয় বেড়াইয়৷ অমায়িক আনন্দে দিন কাটাইতেছি । নিজে আয় না করিয়া এই অপরের আয়ে থা ৪য়ার মধ্যে আমি লজ্জার হেতু পাই না, কারণ আমি জানি যাতাদের আয়ু তাতাদের সহিত আমার ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্ক আছে ; আমি আয় করিলেও আমার এবং তাহাদের আলাদা তহবিল হঠত না । এখন ভাবি, এই সংসারের অন্নে আমার যে-নিঃসঙ্কোচ দাবি আমি দেখিতেছি, ঠিক এই দাবিই কি হরিচরণও বসাইতে চাহিয়াছিল ? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি পারিব না । আমি জানি না। জানিত এক হরিচরণ নিজে । কিংবা হয়ত সেও স্পষ্ট জানিত না ।