পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

չԵՆ হইল। পকেটে একটাও পয়সা বাকী নাই। চারপয়সায়-একটা দামের বিলাতী টফি, সে টফির মৰ্ম্ম সে বুঝিবে না। একটা-দুটা টফি থাইয়া তাহার পেটও ভরিবে না। সেই দামের মুড়ি বা ডাতে তাহার দুই বেলা চলিত, কিন্তু সে হিসাব কষিয়া লাভ নাই। তাহাকে তখন খাইতে দেওয়া সম্ভব নয় ; একমাত্র উপায় আছে তাহাকে ৰাসায় যাইতে বলা, কিন্তু সেটাও আর বলিতে ভরসা হয় না। কি করি ভাবিতেছি, এমন সময় সঙ্গিনী রক্ষা করিলেন। বড়লোকের আহ্বরে মেয়ে, হরিচরণের নোংরা চেহারা ও গায়ের গন্ধে তাহার বমি আসিল । নাকে রুমাল চাপিয়া কহিলেন–র্তা:, চল না। অকুলে কুল পাইয়া গেলাম। আমার তিনি দূরসম্পর্কের আত্মীয়া মাত্র, বান্ধবী প্রেয়সী কিছুই নন। তবু সেই বিশেষ বয়সের মেয়েদের লইয়া পথ চলিবার সময় বাধ্য হইয়াই একটু লেভৗজ-ম্যান সাজিতে হয়। হরিচরণকে কি জবাব দিব ভাবিবার সঙ্গে সঙ্গে এ চিন্তাটাও মনে উঠিতেছিল, সঙ্গিনী কি মনে করিবেন। পকেটে পয়সা নাই, অথচ তাহাকে কিছু না দিলে ইনি হয়ত কৃপণ ভাবিবেন, এই দ্বিধায় পড়িয়াছিলাম ; তাহার কথাটা দুশ্চিস্তার অবসান ঘটাইয়া দিল। প্রচণ্ড একটা ধমক দিয়া কহিলাম—যা যাঃ ! বলিয় তাহার পাশ কাটাইয়া বাহির হইয়া গেলাম। সঙ্গিনী কহিলেন—কি নোংরা ! আমি কহিলাম—যত সব ভ্যাগ্ৰাণ্ট ! ইহার কয়েক দিন পরে আবার বরিশালের বাহিরে গেলাম। মাসখানেক পরে ফিরিলাম। তখন দেখিলাম, হরিচরণকে আর দেখা যায় না । বাসায় জিজ্ঞাসা করিলাম—হরিচরণড়া নাই রে ? বোনরা বলিল—থাকৃবে না ক্যান। আছে। কহিলাম—বাসায় আয় না ? নিভা কহিল—আইবে মাইর খাইতে ? বুঝিলাম না। কহিলাম--মার্লে কেড হেরে ? নিভা কহিল—মাইনষের অভাব কি ! তোমরা বরলোক, হেরা তো তোমাগো মাইর থাইতেই জন্মিছে। প্রবাঙ্গী Yogo o বিন্মিত হইয়া কহিলাম—কি হইছে ক দেহি ? তার পর কাহিনীটা শুনিলাম । আমি চলিয়া যাইবার পর হরিচরণ আবার এক দিন আসিয়াছিল । আগের দিনের ঘটনাটা মনে ছিল, নিভা ও মা তাহাকে সেদিন ডাকিয়া ভাত দিয়াছেন, এবং বলিয়াছেন—তুই এই হানে আইয়া খাইয়া যাবি। হরিচরণ বলিয়াছিল--দাদায় বক্পে । নিভা বলিয়াছে—তোর ভয় নাই, দাদায় এহানে নাই । আমি নাই জানিয়া হরিচরণ আশ্বস্ত হইয়াছে। তার পর হইতে মধ্যে মধ্যে আসিয়া খাইয়াও গিয়াছে। ইহারই মধ্যে এক দিন কি উপলক্ষে বাসায় একটু সমারোহ ছিল। কয়েক জন আত্মীয়-বন্ধুকে খাইতে বলা হইয়াছে, একটু বিশেষ রকম রান্নাবাড়ারও আয়োজন করা হইয়াছে। বেলা তখন প্রায় বারোটা বাজে, অতিথিদের এক দল থাইতে বসিয়াছেন, এমন সময় হরিচরণ আসিয়া হাজির । বাহিরের ঘরে অভ্যাগতদের এক জন বসিয়া ছিলেন, মা’র তিনি দূরসম্পর্কে মামা হন। জমিদারি সেরেস্তায় চাকরি করেন, যেমন দুদাস্ত প্রকৃতি তেমনি অশিষ্ট । দেশে থাকেন না, আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বিশেষ নাই । বাড়ী হইতে কৰ্ম্মস্থলে যাইবার পথে আগের দিনই আসিয়া আমাদের বাসায় অতিথি হকয়াছিলেন । হরিচরণকে দেখিয়াই তিনি লাফাইয়া উঠিলেন—এই, এই ছ্যাম্রা, ওদিক যাও কই । আটজ রবিবার না। ভিক্ষা পাবি না । হরিচরণ কহিল—ভিক্ষণ না । আইছি । তিনি কহিলেন—ভাত থাইতে আইছি কিরে, ভাত লইয়া বইয় রইছে ওনার লইগ্যা ! হরিচরণ উত্তর দিল না, উঠানের কোণে জড়সড় হইয়া বসিয়া পড়িল । তিনি জলিয়া কহিলেন—আবার বইলি যে ? কথা কানে যায় না 7 বাইরা ! হরিচরণ কহিল—আমারে আইতে কক্টছে । এতক্ষণ অবাধ্যতা সহ করা মা’র মামার প্রকৃতিবহির্ভূত। গর্জন করিয়া কহিলেন-মাইনুষের তো খাষ্টয়া এউক্কা ভাত খাইতে