পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিশুশিক্ষা শ্রীমায়া সোম শিশু সম্বন্ধে অধিকাংশ পিতামাতা সম্পূর্ণ উদাসীন, তাই তাহারা শিশুপ্রকৃতি পর্য্যালোচনা করা প্রয়োজন মনে করেন না, আবার অনেকে এ-বিষয়ে কিছু জানেনও না। র্তাহারা মনে করেন মুক্ত বায়ু, উত্তম আহার ও পোষাকই শিশুদের পক্ষে যথেষ্ট। সময়ে সময়ে সামর্থ্যাচুসারে তাহারা প্রচুর খেলনা কিনিয়া দেন, কখনও বা গল্প কিংবা ছড়া বলিয়া, আবার কখনও বা তাহাদের পাকামে কথায় সায় দিয়া আনন্দ দিতে চেষ্টা করেন, কখনও বা তাহার অমুসন্ধিৎসাকে দমন করিতে, আবার কখনও বা মিথ্যা স্তোক দিয়া ফুসলাইয় রাথিতে চেষ্টা করেন । ইহার ফলে শিশুদিগের মনোভাব কিরূপ হয়, তাহা বড় চিন্তা করেন না। অনেক সময় তাহারা মনে করেন যে, শিশু সব বুঝে না, আমি যাহা ভাল বুঝি তাহাই করিব ; এবং নিজেদের ইচ্ছা নিজেদের কর্তৃত্ব ও শাসনের দ্বারা জোর করিয়া তাহাকে বশ করিতে প্রয়াস পান। শিশুর মধ্যে ত্রুটি বা অন্যায় দেখিলে তাহারা তাহাকে কখনও বা গালিমন্দ দেন, কখনও বা কড়া শাসন করেন, আবার কখনও বা কিছু বলেন না। এগুলিতে শিশু ক্ষুব্ধ হয়, তাহার মনে আলোড়নের স্বষ্টি হয়, সে তাহার ক্ষুদ্র বুদ্ধি দ্বারা চালিত হইয়া অন্য পথ লইতে চেষ্টা করে। শিশুর জন্য মুক্ত বায়ু, স্বাস্থ্যামুকুল আহার ও পোষাক ছাড়া আর একটি জিনিষের অত্যন্ত দরকার, তাহা হইতেছে মনের আনন্দ । শিশুর পারিপাশ্বিক তাহার মনোমত হইলে সে তখন নিজকে প্রকাশ করিবার জন্য ব্যস্ত হয়। শিশু যাহার নিকট ভালবাসা ও সহানুভূতি পায়, তাহাকে সে ভালবাসে, বিশ্বাস করে এবং তাহার নিকট অকপটে মনোভাব ব্যক্ত করে। এই প্রত্যয়ের বীজ শিশু-মনে বপন করিতে পারিলে তাহার নিকট হইতে কাজ আদায় করা কিংবা তাহার দোষ সংশোধন করা কঠিন হয় না । শিশুরা তাহাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা বা সরাসরি আদেশ দেওয়া বড় পছন্দ করে না বটে, কিন্তু কৌশলে তাহাকে কোন আদেশ দেওয়া হইলে সে তখনই স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তাহ করে । সময়ে সময়ে শিশু কাজ করিতে ভালবাসে, আবার কখনও বা সে চুপ করিয়া থাকা পছন্দ করে। সেই সময় সে যাহা জানিতে চায় নিজের বিচারবুদ্ধির দ্বারা সে-সম্বন্ধে সিদ্ধাস্ত করিয়া লয়। শিশু ভূমিষ্ঠ হইবার পর হইতেই তাহার শিক্ষা আরম্ভ হয়। সে মাতৃক্রোড়ে খেলাধুলার মধ্য দিয়াই শিক্ষালাভ করে, সঙ্গে সঙ্গে তাহার অভ্যাসগুলি ধীরে ধীরে গঠিত হয়। শৈশবই অভ্যাস-গঠনের উপযুক্ত সময়, কেন না এই বয়সে শিশু যাহা শিক্ষা করে তাহার ফল কিয়ুৎপরিমাণে স্থায়ী হয়, এই জন্য শৈশবে উত্তম শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। শিশুদের সাত-আট বৎসর পর্যান্ত বিচারবুদ্ধির পরিচয় বিশেষ পাওয়া যায় না, কোন বিষয়ের কার্য্য-কারণ নির্ণয়ে তখনও তাহারা অক্ষম । এই জন্য এই বয়স পৰ্য্যস্ত তাহারা যাহাতে নিজেদের পঞ্চেঞ্জিয়ের চালনা করিয়া বহির্জগতের সকল প্রকার জ্ঞানলাভ করিতে পারে, তাহার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । শিশুরা যাহাতে নিজেরা দেখিয়া শুনিয়া ও স্পর্শ করিয়া বস্তুর গুণাগুণ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করিতে পারে, তাহার আয়োজন কর। অবশ্যক । ডা: মারিয়া মস্তেসরি বলেন, “শিশু কৰ্ম্মী, শ্রমী এবং ভবিষ্যৎ জগতের স্রষ্ট, শিশু কালে নিজেকে পূর্ণমানবরূপে বুঝিতে পারিবে, তাই এখন হইতে সে নিজের মধ্যে নিজেই সেই মানুষটিকে গড়িতেছে। কিন্তু পৃথিবী স্বষ্টি হইয়াছে পূৰ্ণবয়স্ক মানবের সকল প্রকার অভাব পূর্ণ করিতে, শিশুই কালে সেই সকল অভাব পূর্ণ করিবার একমাত্র উপায়। দুর্ভাগ্যবশতঃ পূৰ্ণবয়স্ক মানব না বুঝিয়া সেই শিশুকে অবহেলা করে এবং নিজের মূৰ্ত্তিতে তাহাকে গড়িতে চেষ্টা,