পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবায়ন শ্রীজীবনময় রায় ভুমিকা డ সকাল হইতে শিবনাথ সেদিন বড়ই পাগলামি মুরু করিয়াছে। গরমটাও পড়িয়াছে খুব, তাহাতে পূৰ্ব্ব রাত্রে বাতাসও একেবারে ছিল না ; আবার মশার উপদ্রবও যেন কলিকাতায় সেবার বাড়িয়াছিল। রাত্রে ঘুম হয় নাই ; মেজাজটা অমনিতেই ছিল তিক্ত হইয়া। এমন সময় এক হাটকোট-পরা আপিস-যাত্ৰী ভদ্রলোক আসিয়া শিবনাথকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন -এই, রাজেনবাৰু বাড়ী আছেন ? শিবনাথের মেজাজটা ত একেই ভাল ছিল না ; তাহার উপর ভদ্রলোকের এই বলিবার ধরণ ও কণ্ঠস্বরে সে ভিতরে ভিতরে ফুটিতেছিল। ভদ্রলোকেরও বড় একটা দোষ দেওয়া যায় না। শিবনাথের ছিন্ন অপরিচ্ছন্ন চীরে, তাহার আভিজাত্য ভস্মাচ্ছাদিত বহ্নির মতই সঙ্গোপন থাকিত। শিবনাথ গোজ হইয়া বসিয়াছিল, কোন উত্তর দেয় নাই । উত্তর না পাইয়া ভদ্রলোক আরও এক পা আগাইয়া আসিয়া দ্বিতীয়বার “এই”—বলিতেই সে দাউ দাউ করিয়া জলিয়া উঠিল ; এবং পাড়া ফাটাইয়া চাংকার করিয়া তাড়া দিয়া বলিল—আই উইল gে ইউ ইনটু এ লায়ন, ডেন। গুলি ক’রে উড়িয়ে দৈব। কোর্ট মাশাল ক’বুে— চমকিয়া ভদ্রলোক পিছাইয়া গেলেন এবং শিবনাথের চোখমুখের ভাব দেখিয়া দ্রুত সে-স্থান হইতে চম্পট দিলেন । শিবনাথ কিন্তু তথনই থামিল না। প্রায় আধঘণ্টা বিপুল বিক্রমে চ্যাচাইয়া মুখে গ্যাজা তুলিয়া অবশেষে নিতান্ত পরিশ্রাস্ত হইয়াই বোধ করি আমাদের রকটাতে আসিয়া বসিয়া বিড়ি ধরাইল। বোঝা গেল যে এখন বেশ খানিকক্ষণের জন্য সে শাস্ত থাকিবে । এই রকটি ছিল তার আস্তান । বার্থ, রিজার্ত করা । সে আজ প্রায় বছর বারো আগেকার কথা । কোন স্বরে যে সে প্রথম আসিয়া এখানে মোতায়েন হইল তাই ঠিক স্মরণ নাই। তবে এই দীর্ঘকাল ধরিয়া ঐ রিজার্ড-করা বার্থটিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করিয়া সে অনড় হইয়া আছে। এরূপ কিন্তু সৰ্ব্বদা হয় না। সাধারণতঃ সে শাস্ত হইয়া বলিয়া বিড়ি ফেঁাকে অথবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমাইয় কাটাইয়া দেয়। তখন কে বলিবে যে সে পাগল । তখন কথাবাৰ্ত্তাও যেমন সুসংগত তাহার আচরণও তেমন ভদ্র ও সংযত । শিবনাথ ব্রিটিশ গরমেণ্টের ভরি গোড় । লড়াইয়ের সময় সে একটা মোট মাঙ্গিনার চাকুরী লইয়া মেসোপোটেমিয়ায় গিয়াছিল। লড়াইয়ের পর ফিরিয়া আসিয়া কিছুদিন পরে তাহার মস্তিষ্কবিকার ঘটে—এবং চাকুরীটি খোয়ায় । লড়াইয়ের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ পোষাক ও মেডেলগুলি বহুদিন একটা পুটলীতে তাহার সঙ্গে সঙ্গে ছিল—তা ছাড়া কতকগুলি কাগজপত্ৰ সৰ্ব্বদাই তাহার পকেটে পকেটে ঘুরিত এবং মাঝে মাঝে পেন্সিল চাহিয়া লইয়া কি সব লিথিত । জিজ্ঞাসা করিলে বলিত মিলিটারি সেক্রেটারীর নিকট একটা জরুরী পত্র পাঠাইতে হইবে তাহারই থসড়া করিতেছে। বুদ্ধি ও রসবোধ তাহার শাস্ত্র অবস্থায় বেশ তীক্ষ থাকে। কোন ভদ্রমহিলাকে দেখিলে বিড়িটি নামাইয়া লয় । বসিয়া আছে এমন সময় অন্ধকারে কেহ সিড়ি নির্ণয় করিতে পারিতেছে না বুঝিতে পারিয়া ফস করিয়া দিয়াশলাই জালাইয়া সাহায্য করে। সব চেয়ে মজা লাগিত আমাদের, তাহার কথা শুনিতে । অতি বিশুদ্ধ বঙ্গভাষায় সে কথাবার্তা বলিত । সে বলিত-এ অামার