পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহjয়ণ শিবায়ম / వీటవీ বোধ করি তাহার প্রতি আমাদের আকর্ষণের ইহাও একটা কারণ হইবে । একদিনকার ঘটনা বলি । গলির মধ্যে একটা লোক অতি কুৎসিত অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করিতেছিল। লোকটার উপর হঠাৎ চটিয়া গিয়া তাহার গলা টিপিয়া দেয়ালে ঠাসিয়া ধরিয়াছিলাম। শিবনাথ কোথা হইতে দৌড়িয়া আসিয়া আমাকে ছাড়াইয়া লইবার উদ্দেশ্যে চীংকার করিয়া বলিতে লাগিল-আরে, কর কি রাজেন, কর কি ? বাতুল হয়েছ তুমি? নরহত্যা করতে প্রবৃত্ত হয়েছ, ছিছি, এ কী উন্মত্ততা তোমার ? ছাড়, ছড়ি । রাগ ছুটিয়া গেল এবং বলা শহুল্য লজ্জা পাইলাম। স্বদেশীর উত্তেজনায় তখন দেশ থইথই করিতেছে । অনেক বড় বড় বক্তা ব্যাঙের ছাতার মত গজাইয়া উঠিয়াছেন । সেদিন মীর্জাপুর পার্কে বিরাট সভায় বক্তৃতা চলিতেছে। মফঃস্বল লম্বশাটপটাবৃত জনৈক ভদ্রলোক রঙ্গমঞ্চের নায়ুকের ভঙ্গী ও স্বপ্নে বিলম্বিত লয়ে এক আবেগময়ী বক্তৃত ফাদিয়াছেন। এক ঘণ্টার উপর হইতে চলিল কিন্তু তাহার বচনবিন্যাস আর নিরস্ত হইতে চায় না। বিরক্ত হইয়া বাহিরে চলিয়া আসিলাম । বাহিরে আসিয়া দেখি শিবনাথ সামনেই একটা রকের উপর উবু হইয়া তাহার দুষ্ট উন্নত জানুর উপর হস্ত প্রসারিত করিয়া বসিয়া আছে। বিড়িটি পৰ্য্যন্ত টানিতেছে না। বুঝিলাম কেহ তাহাকে চটাইয়াছে। কাছে গিয়া মোলায়েম স্বরে বলিলাম--- কি শিবুদ, ব্যাপার কি ? এখানে এমন ক’রে— হাড়ির ভিতর হইতে যেন বোমা ফাটিল । হঠাৎ সোজা হইয়া দাড়াইয়ু বলিল-ব্যাপার ? ব্যাপার তোমাদের স্বদেশীর পিণ্ডদান । যত সব নেড়াবুনেকে তোমরাই মাথায় ক’রে এনে মঞ্চে চড়িয়েছ । গায়ে থাকলে এ-সব লোকের কি হ’ত ? যাত্রার দলে গিয়ে নারদ সাজতে হ’ত । বলিয়া হন হন করিয়া চলিয়া গেল । আমরা হাসিয়া উঠিলাম ; শিবনাথ ভ্ৰক্ষেপমাত্র করিল नाः । প্রভাত বলিল—না:, লোকটা সমঝদার বটে। মোট কথা, আমরা ছিলাম শিবনাথের এ্যাডমায়ারার । - হইতে তাহার রসজ্ঞান এবং তাহার অপূৰ্ব্ব বাকৃপটুতা আমাদের চিত্ত আকর্ষণ ত করিয়াছিলই ; তাহা ছাড়া যুদ্ধফেরৎ বাঙালী আমাদের কাছে একট পরম বিস্ময়ের বস্তু ছিল। শিবনাথ সম্বন্ধে আমাদের কৌতুহল ও কল্পনার অস্ত ছিল না। কেন যে উন্মাদ হইল অনেক চেষ্টা করিয়াও সে কথা বাহির করিতে পারি নাই । অবশেষে সাধ্যসাধনাতেও যাহা পাই নাই হঠাৎ এক দিন তাহা হাতে আসিল । আজ তাহা লইয়াই শিবনাথের কাহিনী লিখিত্নে বসিয়াছি । বস্তুটি একখানি ছোট খাতা-সংক্ষেপে লেখা শিবনাথের আত্মজীবনী । সম্ভবত একেবারে পাগল হইবার অব্যবহিত পূৰ্ব্বে লেখা। শিরোনাম দেওয়া আছে—শিবায়ন । ইহার পর তাহারই লেখা উদ্ধৃত করিয়া এ কাহিনী শেষ করিব । y ১২৯৭ বঙ্গাবো, মাঘ মাসের শুক্ল একাদশীতে অামার জন্ম। আমার পিতার বংশ ও পদমযাদার অহঙ্কার যেমন ছিল অপরিমিত ক্রোধও ছিল তেমনি প্রচণ্ড । সামান্য কারণেই তিনি র্তাহার সেই ক্রোধ আমাদের কয়টি ভাইবোনের পুষ্ঠে অজস্রধারে বর্ষণ করিতেন । এই কারণেই হোক বা গ্রহবৈগুণ্যেই হোক বাড়ী হইতে পলায়ন করা আমার একটা ব্যাধির মধ্যে দাড়াইয়াছিল। এইরূপে এক বার পালাইয়া মনের সুখে বিনা টিকিটে রেল-ষ্টীমার দাবড়াইয়া বেড়াইতে লাগিলাম ; এবং এক দিন এমনি করিয়া ঘুরিতে ঘুরিতে পাটনায় গাড়ী পৌছিবার পূৰ্ব্বে ধরা পড়িয়া গেলাম । কিন্তু আমার বোধ হয় অদৃষ্ট ছিল ভাল। বয়স তখন পনরো-ষোলো মাত্র ; চেহারাটাও আমার নিজের কৃতিত্বে অর্জন করিতে হয় নাই এবং গলায় একগাছি যজ্ঞোপবীত ছিল । বোধ করি এই সব মিশিয়া প্রবাসী বাঙালী রেলবাবুদের মনে করুণা ও কৌতুহলের সঞ্চার করিয়া থাকিবে ; স্বতরাং পুলিসের হাতে না দিয়া টিকেট কলেক্টরদের ঘরে লইয়া তাহারা আমাকে ভৎসনা, উপদেশ এবং প্রশ্নবাণে জর্জরিত করিয়া তুলিলেন। অমুকুল মুখোপাধ্যায় বলিয়া এক সৌম্যদর্শন প্রৌঢ়