পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ণ শিবায়ম } f వSe কিন্তু স্বজনগণের অত্যাচারে তিনি আর বেশী দিন গ্রামে বাস করিতে পারেন নাই। যোংজমি বিক্রয় করিয়া যাহা কিছু নগদ সংগ্ৰহ করিতে পারিলেন তাহাই লইয়া অপরিচিত স্থানে বাস করিবার উদ্দেশ্যে বাকীপুরে আসিয়া ছোট একটি বাট ও সামান্য জমি ক্রয় করেন । সে আঞ্জ প্রায় বার-তের বৎসরের কথা । প্রায় তিন বৎসর হয় নিতাইচরণ ইহধাম ত্যাগ করিয়াছেন। নিতাইয়ের পত্নী কন্যাটিকে লইয়া কষ্টে দিনাতিপাত করেন । এখন সমস্যা হইয়াছে কন্যাটিকে লঙ্গয় । ষোল বৎসর বয়স অবধি ব্রাহ্মণের কন্যা অবিবাহিত আছে ইত বর- বাংলার বাহিরে একরকম করিয়া কাটানো যায়, কিন্তু মুক্ষিল হইয়াছে এই যে দুলালী যথার্থই সুন্দরী এবং পাড়াটাও ভাল নয়। অর্থাং-বলিয়া সে চুপ করিয়া গেল। তারপর বলিল— অথচ মেযেটিকে হিন্দুর ঘরে বিবাহ দেওয়াও অসম্ভব এবং মুসলমানের ঘরেও বিবাহ সে কিছুতেই করিবে না। বলিয়া সে আবার চুপ করিয়া রহিল। ইঙ্গিতটা বুঝিলাম । ইতিমধ্যে সব স্তব্ধ হইয়। আসিয়াছিল। বিস্তীর্ণ ভাগীরথীর অদৃশ্ববিস্তার বহুদূর হইতে হিন্দুস্থানী মাঝির গান সন্ধ্যার ছায়ার অন্তরালে স্বপ্নের তুলি বুলাইতেছিল। ধীরে ধীরে বলিলাম— তুমি যদি বল তবে আমি বিয়ে করতে পারি। কুতকার্ষ্য হওয়ার আনন্দেই বোধ করি একটু জোরের সঙ্গেই হাসিয়া দীনেশ বলিল—পাগলা । সে-কথা থাক, বরং চল এক দিন তোকে সেখানে নিয়ে যাই, কি বলিস ? দীনেশ আমার যৌবনোচিত ঔদায্যের দুৰ্ব্বলতার সন্ধান পাইয়াছিল সন্দেহ নাই। কিন্তু চট করিয়া সে আমাকে দুলালীদের বাড়ী লইয়া গেল না । ইহার পর আরও দু-তিন দিন সে কলেজ কামাই করিল। প্রথমে সে বলিয়াছিল দুলালীর মায়ের অস্থখ ; জিজ্ঞাসা করাতে এবার বলিল,—অমুখ মায়ের নয় দুলালীর । তারপর একটু উদাসীন ভাবেই যেন বলিল—তুই ছেলেমানুষ, গিয়েই বা কি করবি। তা ছাড়া, তোর পড়াশুনোর ক্ষতি এবার আমি জিদ করিলাম-ছাই ক্ষতি হবে। কিছু হবে না । অদৃষ্ট –গেলাম দুলালীদের বাড়ী। বাকীপুরের প্রান্তে গঙ্গার ধারে সেট প্রায় একটা পল্লীগ্রামের মত। বাড়ীঘরদোর মন্দ নয়, অন্তত কষ্টে চলিবার মত অভাবের চিহ্ন বড় একটা দেখিলাম না। কিন্তু তখন এ-সব তত আমার চোখে পড়ে নাই। গল্পের প্রধান নায়িকা যে, তাহাকেই দেখিবার জন্য আমার সমস্ত মন তখন চকিত হইয়া আছে। ঘরের ভিতর দুলালীর মাকে গিয়া প্রণাম করিলাম। বয়স পয়তাল্লিশের কাছে এবং এই বয়সেও তাহার যৌবনের নিঃসংশয় রূপ একেবারে নিশ্চিহ্ন হইয়া মুছিয়া যায় নাই । দেখিলাম আমার আগমনের জন্য তিনি প্রস্তুত হইয়াই ছিলেন । বলিলেন, এই যে বাবা, এস, বস । সেদিন তিনি অনেক কথা বলিয়াছিলেন, মাথামুণ্ড তাহার কিছুই প্রায় আমার মনে নাই । দুলালীকে দেখিয়াছিলাম। সুন্দরী বলা যায় বটে। সদ্য কঠিন পীড়াজনিত রক্তশূন্ততার সহিত একটা উদ্ধত বিদ্রোহীর ভঙ্গী মিশিয়া সেই সৌন্দৰ্য্য যেন আমার নিকটে আরও মনোরম অথচ অনধিগম্য বলিয়া প্রতিভীত হইল । দুলালীর মা দুলালীকে বলিলেন—দীনেশের বন্ধু শিবনাথ। প্রণাম কর। দুলালী প্রণাম করিল না, একটা নমস্কারও করিল না, শক্ত হইয় দাড়াইয়া রহিল। দুলালীর ভাবগতিক দেখিয়া কৌতুক অনুভব করিলাম। বলিলাম— থাকৃ আর প্রণাম করতে হবে না । দুলালী কিছুমাত্র অপ্রতিভ না হইয়া আমার দিকে চাহিয়া একটু অবজ্ঞার হাসি হাসিল । এই প্রথম হাসিতেই প্রায় মুগ্ধ হইয়া গেলাম । পরোপকার-প্রবৃত্তি উদ্ধাম হইয়া উঠিল। কিছু দিন যাতায়াত করিতে কবিতে এইটুকু বুঝিলাম যে এ-বাড়ীতে আর যেই যাক দীনেশ যাওয়া বন্ধ করিয়াছে, এবং আমার আসা কায়েম হইয়াছে। পরীক্ষার দিন ঘনাইয়া আসিতেছিল। কলেজের