পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ প্রবাঙ্গী g Soeg's সুন্ম ওড়নাটি তাহার মস্তকের অৰ্দ্ধাংশমাত্র আসিয়াই ক্ষাস্ত হইয়াছে। মেয়েটির বয়স সতের-আঠার হইবে। অর্থাৎ বালিকা-বয়স অতিক্রাস্ত হইয়াছে অথচ পরিপূর্ণ যৌবনের মন্থরতা যখন দেহকে ভারাক্রাস্ত করে নাই সেই বয়স । ভদ্রলোক হাসিমুখে অগ্রসর হইয়া পরিচয় করাইয়া দিলেন—আমার বোন সেলিনা । আর ইনিই সেই ভদ্রলোক যিনি তোমার দলিলটিকে উদ্ধার করিয়াছেন। এই দেখুন, আমি কি রকম স্বার্থপর। নিজের সৌভাগ্যে কাগুজ্ঞানহীন হইয়া মহাশয়ের নামটি পর্য্যন্ত জিজ্ঞাসা করিতে ভুলিয়াছি । যথাসম্ভব অবনত হইয়া ইংরেজীতে অভিবাদন করিয়া নাম বলিলাম । —মহাশয় ত ভারতবাসী ? —ই, আমি ইংরেজের ফৌজের সহিত আসিয়াছি। মেয়েটি এতক্ষণ কথা কহে নাই । এইবারে ভাইয়ের দিকে ফিরিয়া স্বন্দর উচ্চারণে, পরিষ্কার ইংরেজীতে অকুযোগের স্বরে বলিল-আচ্ছা, উনি কি দাড়াইয়া থাকিবেন নাকি ? তারপর অত্যস্ত সপ্রতিভ সহজ ভদ্রতার সহিত অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া আমাকে বলিল—দয়া করিয়া এইখানে বহন । বলিয়া নিজেও অদূরে আর একটি আসনে বসিল । মখমলের একটা তাকিয়া আমার দিকে অগ্রসর করিয়া দিয়া এবং নিজে একটি অধিকার করিয়া ভদ্রলোক বসিয়া হাসিমুখে বলিলেন—আমার ভীটি ভারতবাসীদের একজন ভক্ত। ইংরেজের স্কুলে পড়িয়াও ভারতবর্ষের প্রতি আগ্রহ উহার কমে নাই। লড়াইট শেষ হইলেই উহাকে লইয়া ভারতবর্ষে বেড়াইতে যাইব । তাই না ? —দেখিও, ভদ্রলোকের সম্মুখে প্রতিজ্ঞা করিয়া তারপর ভুলিয়া যাইও না যেন । তখন কিন্তু তোমার কোন রাজনৈতিক অজুহাত খাটিবে না, তাহ বলিয়া রাখিতেছি। আমি তখনও ঠিক সামলাইয়া উঠিতে পারি নাই । চমৎকার করিয়া একটা প্রিয়ভাষণের উদ্দেশ্যে বলিলাম— আপনাদের ভারত-প্রীতিতে আমি সত্যই অত্যস্ত সম্মানিত বোধ করিতেছি । সে কথায় কান না দিয়! সেলিন বলিল—জাপনি বোধ হয় বাঙালী, না ? তাহার দাদা ও আমি দুই জনেই একটু আশ্চৰ্য্য হইলাম। বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিলাম—চমৎকার ! কেমন করিয়া বুঝিলেন ? —আমি বইয়ে পড়িয়াছি ধে বাঙালীরা শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করেন না। আপনার শিরস্ত্রাণ নাই দেখিয়াই বুঝিয়াছিলাম আপনি ভারতবাসী বাঙালী । তাহাদের সরল সহজ আচরণে এতক্ষণে আমার মনের অস্বাভাবিকতা অনেকথানি কাটিয়া গিয়াছিল । আমি চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া ভয়ের ভান দেথাইয়া বলিলাম— আপনি দেখিতেছি প্রায় এক জন ভারততত্ত্বজ্ঞ । ভারতবর্ষ সম্বন্ধে গল্প দিয়া আপনাকে ভুলাইবার উপায় নাই । কথা শুনিয়া ছোট ৰালিকার মত সেলিনা একেবারে খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। মনে হইল রৌপ্যনিৰ্ম্মিত জলতরঙ্গের পর্দায় কে যেন লঘুচ্ছন্দে দ্রুত আঘাত করিয়া গেল । —না, না, অত কিছু আমি পড়ি নাই। প্রাচ্যের ইতিহাস পড়িতে আমার ভাল লাগে, তাই অবসরমত একটু-আধটু পড়ি । আপনার দেশের গল্প শুনিতে আমার খুব ভাল লাগিবে। —আমার বোনটি একটি গ্রন্থকীট । বলিয়া স্নেহে ও গৰ্ব্বে ভদ্রলোক সেলিনার দিকে চাহিয়া হাসিতে লাগিলেন । এমন সময় দু-তিনটি স্থসজ্জিত ভৃত্য প্রকাও প্রকাও শ্বেত-পাথরের থালায় ফল, মিষ্টান্ন ও কাচপাত্রে নানা রঙের মুগন্ধি সরবং প্রভৃতি সাজাইয়া লইয়া উপস্থিত হইল । সেলিনা উঠিয়া ভৃত্যদের হাত হইতে থালাগুলি লইয়া আমার সম্মুখে সেই বিছানার উপরই রাখিতে লাগিল । আঙর, বেদান, লকেট, নাসপাতি, পেস্ত, খোবানী, আপেল এবং মিষ্টামের প্রাচুর্য্য দেখিয়া আমি নিতাৎ ক্ষীণজীবী না হইলেও ত্রস্ত হইয়া উঠিলাম। অস্তত: দশ-বার জন জোয়ান লোকের খোরাক । ভদ্রলোক সোজা হইয়া বসিয়া দুই হস্ত আমার দিকে প্রসারিত করিয়া দিয়া বিনয়ের স্বরে বলিতে লাগিলেন—