পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ নৌকা এবং কত রকমের সাম্পান প্রস্তুত করিতেছে । এখনও এ-দেশের উপকূলভাগ হইতে হাজার হাজার নৌজীবী সমুদ্রযাত্রা করিয়া থাকে । চট্টগ্রামের শঙ্খনদের মোহানাস্থিত তৈলাদ্বীপে এবং তার আশেপাশে ‘গদু’ নামক এক প্রকার স্ববৃহৎ নৌকা দৃষ্টিগোচর হয়। এই গুলির গঠন-প্রণালীতে প্রাচীন নৌ-শিল্পের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। গছু নৌকা তৈয়ার করিবার সময় বর্তমান দিনের শিল্পীরাও কোন রকম লৌহনিৰ্ম্মি- পেরেক ব্যবহার করে না । ইহারা নৌকার তলদেশের সহিত ক্রমশ: এক একটি সুদীর্ঘ কাঠের ছাপ * যোড়াইয়া দুই দিকে ছিদ্র করিয়া গল্লাকণ বেতের দ্বারা সুদৃঢ়রূপে বাধিয়া লয়। তৎপর ‘তামা' অর্থাৎ ছিদ্রপথগুলি কাঠের ছিপি দ্বারা বুজাইয়া দিয়া থাকে । চট্টগ্রামের পাতাড়ে এক রকম বনজ কাঠ পাওয়া যায়, সমুদ্রের লোনা জলের স্পশে ঐ কাঠ ক্রমে ক্রমে ফুলিয়া উঠে । ইহার দ্বারাই ছিপি প্রস্তুত হয় । সুতরা গছু নৌকার ঐ ছিপি কিছুতেই ছুটিয়া যাইতে পারে না, এবং ইহার স্বারা ছিদ্রপথগুলি এমনভাবে রুদ্ধ হয় যে বাহিরের এক বিন্দু জলও নৌকার অভ্যস্তরে প্রবেশ করে না । এক সময় চট্টগ্রাম বন্দর হইতে এই জাতীয় নৌকাগুলি ভারত মহাসাগরের সুমাত্রা ও খবদ্বীপ পৰ্য্যস্ত গমনাগমন করিত । গছু নৌকার অগ্রপশ্চাদিকের নানা স্থান এবং উপরিভাগ হইতে তলদেশ পৰ্য্যন্ত বিভিন্ন অংশ ক'ত নামেই না পরিচিত হইয় থাকে । আমরা ঐ গুলির সর্বসমেত আশী রকম নাম পাইয়াছি । ঐ নামগুলির কোন কোন শব্দ দেশজ, কোন-কোনটা আরাকানী ; কোন-কোনটি পর্তুগীজদের নিকট হইতে গৃহীত শক বলিয়াই মনে হয় । স্ববৃহৎ বঙ্গসমূদ্র বাংলার সমুদয় দক্ষিণ সীমা জুড়িয়া রহিয়াছে। দশম শতাব্দীর পর হইতে বহুকাল ধরিয়৷ আরাকানের মগের এখানে প্রভুত্ব বিস্তার করিয়াছিল । ইহাদের শত-দাড়-বিশিষ্ট নৌকাগুলি এই সমুদ্রের বুকে

  • ছাপ—কাঠের সুদীর্ঘ তত্তল । একটার পর একটা এরূপ বহুসংখ্যক ছাপ একত্র জুড়িয়া সুবৃহৎ গছু নৌকা তৈয়াব হয়।

র্ণ গল্লাক—এক রকম শক্ত বেঙ্ক । চট্টগ্রামের পাৰ্ব্বত অঞ্চলে পাওয়া যায় । বাংলা সাহিত্যে আহরণ f ২২৭ রিচরণ করিত। ময়ূরপন্থী নৌকার হস্তীদস্তনিৰ্ম্মিত প্রকোষ্ঠে বসিয়া তখনকার মগ রাজারা সমুদ্রবিহার করিতেন। ভারতের দক্ষিণ-পূৰ্ব্বোপকুলে মগেরা তখন নৌ-যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠিয়াছিল। দিল্লীর কি বাংলার কোন রাজশক্তি ইহাদিগকে বাধা প্রদান করিতে পারে নাই। চট্টগ্রাম হইতে গঙ্গার মোহানা পর্য্যন্ত সমুদয় উপকূলভাগ এবং সামুদ্রিক দ্বীপমালা ইহারা অবলীলাক্রমে অধিকার করিয়া লইয়াছিল। এখনও মগের মুল্লক' কথাটি বাঙালীর কাছে সুপরিচিত । সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই মগের মুম্বুকে পর্তুগীজ বণিকেরা উপস্থিত হইয়া দেখিল যে, এই অঞ্চলে বাণিজ্য অপেক্ষ লুণ্ঠনেই লাভ বেশী। তখন গঞ্জালীস প্রভৃতি জলদসু্যর আবির্ভাবে কয়েক বৎসর যাবৎ বঙ্গসমুদ্রের লবণ-সলিলে রক্তলীলার অভিনয় চলিয়াছিল। কোন কোন ঐতিহাসিক এদিকে অনেক প্রকারের তত্ত্বাতুসন্ধান করিয়া গিয়াছেন, কিন্তু ব্যাপক আলোচনার অভাবে ঐগুলি এ যাবৎ সুসম্পূর্ণ রূপ গ্রহণ করে নাই । ংলার কল্পবিহারী কবি কি চিত্রশিল্পী এই সমুদ্রের দিকে তেমন সুদূরপ্রসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন নাই। কেবল প্রাচীন কোছা-রচয়িতাদের মধ্যে কেহ কেহ ডিঙ্গি সাজাইতে গিয়া ইহার অফুট ছবি আঁকিয়াছেন মাত্র। ংলা সাহিত্যে বঙ্গসমুদ্রের পরিচয় খুবই কম। মেদিনীপুর হইতে আরাকানের সীমা পর্য্যস্ত ইহার স্ববৃহৎ উপকূল ভাগে মাঝিমাল্লার যে-সব সারি এবং ভাটিয়ালী গান গায়, তাহার মধ্যে আতঙ্কের স্বর আছে। ইহাদের কোন কোন পালাগানে জলদসু্যর অত্যাচার এবং নানাবিধ মৰ্ম্মস্তুদ কাহিনীর আভাস পাওয়া যায়। এখন পর্য্যস্ত ঐগুলি সম্যক সংগৃহীত হয় নাই । বাংলার দক্ষিণ-পূর্বে সুবিস্তৃত পাৰ্ব্বত্য ভূমি। এখানে বছর বছর ‘হাতীখেদা হয় । খেদাগুলি হাতী ধরিবার কেল্লাবিশেষ। গভীর অরণ্যভূমি হইতে খেদাইয়া আনার পর ভীষণ বন্যহস্তীসমূহ কৌশলক্রমে এই কেল্লায় আটকা পড়িয়! যায় ; এই জন্য ঐ কেল্লাগুলির নাম খেদ । কোন কোন সময় এরূপ এক একটি খেদায় শতাধিক পয্যন্ত বন্যহস্তী ধুত হইতে দেখা যায় । হাতী-শিকারীদের মধ্যে