পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t ساده কেহ ‘চৈঙ্কাল’, কেহ ‘পাঞ্জালী’ কেহ শিকদার’ ইত্যাদি আধ্যায় পরিচিত হইয়া থাকে। চৈক্কালেরা গভীর বনভূমিতে হাতীর সন্ধান লয়, পাঞ্জালীর হাতীকে খেদার দিকে তাড়াইয়া আনে এবং শিকদারের লৌহ-শিকের সাহায্যে কেল্লা রক্ষা করে। বাংলার পূর্বপ্রত্যন্তশায়ী পৰ্ব্বত্তরাঞ্জির পাদদেশে কত রকমের শিকারী আছে— তাহারা কি কি কৌশলে ফঁাদ পাতিয়া বন্যজন্তুকে আটকাইয়া রাখে, তাহাদের অস্ত্রশস্ত্রগুলির আকার অবয়ব কিরূপ এ-সব সম্বন্ধে কোন আলোচনা বাংলায় হয় নাই । আমরা শস্যশ্রামলা বলিয়া মাতৃভূমির বন্দনা করি। আমাদের কবি ধানের ক্ষেতে ঢেউয়ের খেলা দেখিয়া মোহিত হইয়াছেন। ধান লইয়াই বাঙালীর ধনদৌলত ; কিন্তু এদেশের মাটিতে কত রকমের ধান জন্মে, তাহার যথার্থ খবর আমরা রাখি না। চট্টগ্রামে যাহাকে 'লেইঙ্গ্যা-চিয়ন ধান বলা হয় ; বীরভূমের পল্লী-অঞ্চলে উত। অন্য নাম পরিগ্রহ করিয়াছে। ত্রিপুরার ‘চাপলাশ’ ধানের নাম উলটপালট হইয়া হয়ত অন্য কোন দূরবর্তী জেলার পল্লীতে শিলাপচা" এই আখ্যাও গ্রহণ করিতে পারে। শূন্য-পুরাণে ত্রিশ রকম ধানের নাম দেখা যায়। আমরা এক চট্টগ্রাম জেলা হইতে ১৫৫ রকম ধানের নাম পাইয়াছি। সমগ্র বাংলার মাঠে মাঠে ঘুরিয়া ধানের স্থানীয় নাম সংগ্রহ করা আবশ্যক। আমাদের পল্লীরমণীরা কৃষ্ণের শত নামের পুথি মুখস্থ করে, তাহাদিগকে ধানের সহস্ৰ নামের বইও পড়িতে দিতে হইবে। এখনও চাষীরা ‘ধানবনের অনেক রকম গান গায় । বহু বংসর পূৰ্ব্বে কাৰ্ত্তিক মাসে প্রবল তুফান এবং বন্যায় ধানের ক্ষেত একবারে নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। তখন এ অঞ্চলের চাষীরা ধানের নাম লইয়া থেদের গান গাহিয়াছিল। যথা— ভাসাই নিল যত ক্ষেতি—“ফেইন্যাবের্তী'w বীজমালী ‘বালাম’ । “চিন্নাল’ ‘গিরিং' আর কত কইব নাম । দেশের মাঝে হৈল কহরণ পরাণ রাখা ভার। দারুণ তুফান হায় কৈল্প রে উজাড় । • “ফেইন্যাবেতী’, ‘বাজমালী ‘বালাম’, ‘চিয়াল’, ‘গিরিং ইত্যাদি ধানেরই নাম । * কস্থর - ভূক্তিক্ষ । প্রবাসী

  • Sogy

এ-সকল ধানের নাম এবং চাষবাস-সংক্রান্ত পারিভাষিক শব্দসমূহ আমদানি করিয়া আমাদের অভিধান ভক্তি কৰিয়া তুলিতে হইবে। বাংলা সাহিত্যের আদি যুগে চাষবাসের কথা তখনকার ভাষার উপর যে প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল,—ডাক ও খনার বচন ইত্যাদিতে তাহার আভাস পাওয়া যায়। এখন আবার ঐগুলি নূতন ভাবে গ্রহণ করিবার সময় আসিয়াছে। চাহবাসের নিম্নোক্ত পৰ্য্যায়গুলিতে বহু প্রাকৃত শব্যের প্রচলন দেখা যায়। (১) ভূমির প্রকারভেদ (২) কৃষকের যন্ত্রপাতি (৩) ভূমিকৰ্ষণ ও চাষের প্রণালী (৪) বীজ বপন ও চারা রোপণ (৫) কুষিরক্ষার উপায় (৬) জলসিঞ্চন ও সার প্রয়োগ (৭) আগাছা ও পোকা নাশ (৮) শস্য আহরণ (৯) বীজ, শস্য ও খড় রক্ষা (১০) গোমতিষাদির ব্যাধি ও প্রতিকার । এতদ্ব্যতীত চাষীদের খেলাধূলা এবং আমোদ-উৎসব হইতেও সাহিত্যের বহু উপাদান গ্রহণ করা ধাইতে পারে। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে যখন ধান পাকিয় উঠে তখন তাহারা মনের আনন্দে পালাগান শায় । এইগুলি মাধুর্য্যে পরিপূর্ণ। এরূপ বহু পল্লীগীতি এখনও শিক্ষিত সম্প্রদায়ের চক্ষুর অগোচরে রহিয়া গিয়াছে। এ-দেশে পূর্বে অনেক প্রকার কুটারশিল্প ছিল ; ঐ শিল্পীদের নানা রকম যন্ত্রপাতি ছিল, যন্ত্রগুলির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত হইত। ঢাকার ভুবনবিখ্যাত মসলিন-শিল্পী কি মুর্শিদাবাদের রেশমশিল্পীর পরিভাষাসমূহ আমাদের পক্ষে অপরিহার্য্য শব্দসম্পদ। প্রাচীন পুথিপত্রগুলি হরিতালী’ কাগজে লিখিত হইয়াছে। এক জাতীয় গ্রাম্য-শিল্পীরাই এ কাগজ তৈয়ার করিত। উহাদের উপাধি ছিল "কাগজী । এখনও বাংলার অনেক জায়গায় সেই কাগজীদের বংশধর রহিয়া গিয়াছে। কি কি উপকরণ লইয়া সে-সময় কাগজের মণ্ড তৈয়ার করা হইত, কিরূপ পাত্রাধারে উহা ঢালাই করা হহঁত, ঐ পাত্র এবং মণ্ডের কত রকম নাম ছিল, তাহা আমাদের কাগজের পৃষ্ঠায় বিশেষ ভাবে লিখিত হয় নাই। বৰ্ত্তমানে গ্রাম্য শিল্পীদের মধ্যে