পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్చిరిచి আমাদের অঞ্চলে গিয়া খানকয়েক প্রতিমা চিত্র করিয়া আসিত । অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলি প্রতিমায় রং করিতে হইত বলিয়া তাহার ব্যস্ততার পরিসীমা ছিল না । আমি যখন তাহাকে দেখিয়াছি, তখন সে অতি বৃদ্ধ । বহুদিন হইতে আমাদের বাড়ীতে প্রতিবৎসর সে আসিত এবং ক্ষিপ্ৰহস্তে কাজ শেষ করিয়া চলিয়া যাইত । উমেশ প্লান্ত্রি জাগিয়া “চালচিত্তির’ শেষ করিত । কেরোসিনের ডিবা বাম হাতে ধরিয়া, মাকের উপর চশমা চড়াইয়। সে ছবির পর ছবি অ’াকিয়া যাইত। উমেশ এবারে কি জাকবে ? আমি নাম ধরিয়াই ডাকিতাম। উমেশ বলিত, ‘শুম্ভনিশুম্ভের যুদ্ধ নিখ চি " 'লেখা' কথাটি আমাদের দেশে ঐ অর্থে অপ্রচলিত । ‘এবারে কি হচ্চে ? দশমহাবিদ্যা, রক্তবীজ বধ, ছিন্নমস্তা, রামের রাজ্যাভিষেক ইত্যাদি সে এমন নিপুণ হস্তে আঁকিত যে সেরূপ আর আমাদের বাড়ীতে হয় নাই। কি অদ্ভূত প্রতিভাবলে কেরোসিনের আলোর আবছায়ায় কেমন করিয়া সে এমন সুন্দর ছবি অ’াকিত, তাহ ভাবিলে বিস্মিত হই । কিন্তু তাহার মুখে কোনও দিন গান শুনি নাই । আমায় বোধ হয় উহাদের মধ্যে কতকগুলি লোক চিত্রব্যবসায় করিত, আর কতকগুলি লোক পট দেথাইয়া ও গান করিয়া অর্থোপাৰ্জ্জন করিত । কথা এই যে, সঙ্গীত ও চিত্রের অপুৰ্ব্ব যোগাযোগ, ইহা নিছক প্রয়োজনের প্রেরণায়, অথবা ইহার মধ্যে কোনও অহৈতুক কলাপ্রিয়তা ছিল ? এ প্রশ্নের মীমাংসা করা কঠিন । তবে ছবিগুলি দেখিলে রূপহুষ্টির সাধনলোকের প্রচুর আভাস পাওয়া যায়। কবিতা বা গীতগুলি তাহারই পরিপোধক মাত্র । হিন্দু পুরাণাদিতে এমন ঘটন। অনেক আছে, যাহা চিত্রে রূপায়িত করিতে পারিলে লোকচিত্ত রঞ্জন করিতে পায়ে । তাহারই অকুরূপ সঙ্গীত সৃষ্টি করা আবখ্যক হইয়াছিল । চিত্রের প্রয়োজনেই সঙ্গীত এবং কাব্য । যে সকল পুরাণ হইতে রামলীলা, কুষ্ণলীলা বা শিবচরিত গৃহীত হইয়াছে, সেগুলির মূলের প্রতি তাদৃশ আনুগত্য দেখা যায় না। তাতার কারণ বোধ হয় এই যে, পল্লীসঙ্গীতকে পুরাণের ছাচে ঢালিয়া রচনা করিবার চেষ্টা করিলে ভুল করা হইত। পল্লীসমাজের অবচেতনায় যে স্বরগুলি প্রচ্ছন্ন আছে, তাহারই ফুই-একটি ঝঙ্কার তুলিয়া পল্লীগায়কেরা সহজেই লোকের মনোরঞ্জন করিতে পারিতেন । সেই জন্ত পটুয়া সঙ্গীতের শিব পুরাণের মহেশ্বর নহেন, তিনি বাঙালীর ঘরের দরিদ্র স্বামী । কুষ্ণ বেউড বাশের র্যাকখানি কাধে লইয়। রাধিকার ভার বহন করিয়া বেড়াইতেছেন ইত্যাদি । যে সকল ঘটনা নিয়ত পল্লীজীবনে ঘটে, তাহাই এই সকল পৌরাণিক এবং অ-পৌরাণিক পালার ভিতর দিয়া কবির। প্রকাশ করিয়াছেন । শিব গৌরীকে শাখা পরাইতেছেন— চিত্রটি পল্পীজীবনের নিখুত ছবি । গৌরী এক বাই ( জোড়া ? ) শাখা চাহিতেছেন । শিব বলিলেন, রূপে সোন৷ পর যা আকালে বিচে খাবি রাঙ্গ উলি শাক পরে কোন স্বর্গে ৰাৰি ? প্রবাসী రిES গৌরী বলিলেন, রূপে সোনা পরতে আমার অঙ্গ বেথা করে স্বাঙ্গ উলির শঙ্খ পৰ্বতে বড় সাধ লাগে । এই লইয়া শেষে কলহ এবং অভিমানে দুর্গার পিত্রালয়ে যাত্র। । তখন শিবের ভাঙের নেশা ছুটিয়া গেল ; নারদকে দেখিয়া বলিলেন, “ভায়ে, এক বার তাকে ফিরাইয়া অান । নারদ কলহপ্রিয় দেবতা, কাঠিতে কাঠিতে ঠুকিয়া দুর্গাকে বলিলেন, ‘কৈলাসে যাস নে ; বাপের বাড়ী গিয়া শাখা পর গে । শিবকে আসিয়া বলিলেন, ‘মামীকে কাৰ্ত্তিক গণেশেয় দিব্য দিয়া ফিরিয়া আসিতে বলিলাম, মামী কিছুতেই আসিল না । যাক শেষ পৰ্য্যস্ত শিব গরুড়কে ডাকিয় শাখ আনিলেন সমুদ্র সেচন করিয়া ; বিশ্বকৰ্ম্মাকে বলিলেন, শাখা তৈয়াবু করিতে । সেক্ট শাখা লইয়। শিব শাখারী সাজিয়া গিয়া শ্বশুরবাড়ীতে উপস্থিত হইলেন । মহাদেব বিপদে পড়িলেন, তিনি ত শাখা পরাইতে জালেন না | এক দুয়োর হুই হ্রয়োর পেরিয়ে মহাদেব ভাবে মনে মনে আমি ন জানি শঙ্খ পরাইতে শঙ্খ পরাব কেমলে ! দুর্গ আসিলেন, সোনার খাটে বসে তুর্গা রূপার খাটে পা, শঙ্খ পরতে বসিল কাৰ্ত্তিক গণেশের মা । শাখারীর যে সকল বোল বলিয়। আজও শাখা পরায়, শিব সেই সব বুলি অাওডাইলেন । শেষে শিবদুর্গবি মিলন হইল । এই সকল গল্পের মধ্যে হিন্দুর দেবদেবার মানহানি কর। হয় নাই । বরং স্বাভাবিক, অকপট, প্রাণবস্তু বর্ণনায় ঠাহারা আমাদের আঙিনায় আসিয়া দাড়াইয়াছেন । রাধাকৃষ্ণলীলায় যে-সব ঘটনা বর্ণনা করা হইয়াছে, তাহার মধ্যে যথেষ্ট আদিরসের আমদানি করা যাইত । কিন্তু কবি বস্তুতরণ প্রভৃতি পালায় সুরুচির সীমা লঙ্ঘন না করিয়াও বেশ আনন্দের উপাদান যোগাইয়াছেন । ‘পটুয়া সঙ্গীতে ইহা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিবার বিষয় । এই সঙ্গীতগুলি দত্ত মহাশয় ভিন্ন ভিন্ন গায়কের মুখে শুনিয়া সংগ্ৰহ করিয়াছেন । কাজেই পুনরাবৃত্তি অপরিহার্য্য হইয়াছে । তাহা হইলেও সঙ্গীতগুলির মধ্য দিয়া একটি স্বচ্ছ রসধারা প্রবাহিত হইয়াছে যাহা অনেক স্থলে উপভোগ্য । ছবি ও সুরের সাহায্যে ইহাদের উপভোগ্যতা যে অনেক বঞ্চিত হয়, তাহা অকুমান করা যাইতে পারে । সঙ্গীত, কাব্য ও চিত্রকলা এখানে পরস্পরকে সাহায্য করিতেছে । গ্রন্থকার সুন্দর ভাবে এই কথাটি ব্যক্ত করিয়াছেন, “গীতিকায় যাহা উহ, তাহার অভিব্যঞ্জনা দেওয়া হইয়াছে চিত্রে ; আবার চিত্রে যাই। উহ, তাহার অভিব্যঞ্জন দেওয়া হইয়াছে গীতিকায় ।” বস্তুত: আমাদের দেশে সঙ্গীত ও চিত্রকলার এরূপ সংযোগ জার কোথায়ও দেখিতে পাই না ।