পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిg প্রবাসী g రిgు চক্ষু দুইটি জলে ভরিয়া উঠিয়াছে। বিমল দাড়াইয়া পড়িল । —এ কি বাচবে বাৰু? একটুও তো জ্ঞান নেই। —শক্ত ব্যারাম, নিউমোনিয়া হয়েছে। —আহা, শুনলাম ওর বাপ-মা কেউ নেই ! সত্যই মেয়েটি অনাথ, ওপারের অনাথ-আশ্রম হইতে পাঠাইয়া দিয়াছে। বিমল চলিয়া যাইতেছিল, আবার সে সসস্কোচে প্রশ্ন করিল-আমি ওর কাছে ব’সে যদি একটু হাওয়া-টাওয়া করি তাতে ক্ষেতি কি বাৰু ? —না, তুমি যেও না। ফিমেল ওয়ার্ডে পুরুষদের যাওয়া মান । সে আর কিছু বলিল না, চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল । বিমল বাড়ীতে পদার্পণ করিতে-না-করিতেই শ্ৰীহৰ্ষ বাবু—পাশের বাড়ীর সেই ভদ্রলোক র্যাহার ছেলের টাইফয়েড হইয়াছে—তিনি হস্তদস্ত•হইয়া হাজির হইলেন। —পাইখানার সঙ্গে খানিকট রক্ত বেরিয়েছে যেন মনে হচ্ছে বিমলের মুখ শুকাইয়া গেল । —তাই নাকি ? চলুন তো দেখি । গিয়া যাহা দেখিল তাহাতে তাহার মুখ আরও শুকাইয়া গেল । সত্যই তো ‘হেমারেজ আরম্ভ হইয়াছে। —ভূধরবাবুকে খবর দিন । শ্ৰীহৰ্ষবাবু বলিলেন-লোক পাঠিয়েছিলাম, তিনি বাড়ীতে নেই। —জগদীশবাবুকে খবর দিন তাহলে, আর এই ইনজেকশনটি তাড়াতাড়ি আনিয়ে নিন। লোক ছুটিল । বিমল রোগীর নাড়ী ধরিয়া বসিয়া বৃছিল, নাড়ীর গতি ক্রমশঃই দ্রুত হইতে দ্রুততর হইতেছে। পেটের ভিতর আরও রক্তক্ষয় হইতেছে নিশ্চয় । অবিলম্বে একটা কিছু করা দরকার । জগদীশবাবুকে যে লোক ডাকিতে গিয়াছিল সে ফিরিয়া আসিল-জগদীশবাবুও বাড়ীতে নাই। বিমল ইনজেকশনের জন্ত যে ‘সিরামটি আনিতে দিয়াছিল তাহাও এখানে পাওয়া গেল না। বিমল শেষে নিজের ব্যাগ হইতে মর্ফিয়া বাহির করিয়া আনিল । মফিয়াও ইহার একটা ঔষধ । শ্ৰীহৰ্ষবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন-ওটা কি ইনজেকশন দেবেন ? -शै । —কি ওটা ? —মর্ফিয়া। — ওটা দিলে তো— শ্ৰীহৰ্ষবাবু বাক্যটা সম্পূর্ণ করিলেন না বটে, কিন্তু অর্থ বুঝিতে বিমলের কষ্ট হইল না। মফিয়া দেওয়াটা বিপজ্জনক কি না তাহাই শ্ৰীহৰ্ষবাবু জানিতে চাহিতেছেন। মফিয়া ঔষধটি শক্তিমান ঔষধ, শক্তিমান জিনিষ মাত্রেই নিরাপদ নয়। কিন্তু সে-কথা শ্ৰীহৰ্ষবাবুকে বলিলে তিনি আরও ঘাবড়াইয়া ধাইবেন । হেমারেজে মফিয়া বহুকালের সনাতন ঔষধ, বিমল নূতন-কিছু করিতেছে না। তা ছাড়া অবিলম্বে কিছু একটা করা দরকার। বিমল বলিল-ও ওষুধটা যখন পাওয়া গেল না এইটেই দেওয়া যাক, এটাও হেমারেজের একটা ওষুধ । ক্যালসিয়মও একটা দিচ্ছি। বিমল মফিয়া ইনজেকশন দিয়া দিল । ক্যালসিয়মও দিল। একটু পরেই ছেলেটি ঘুমাইয়া পড়িল । সে ঘুম কিন্তু আর ভাঙিল না। রাত্রি আটটা নাগাদ ভূধরবাবু আপিলেন এবং নাড়ী টিপিয়া মুখ-বিরুতি করিলেন, কিছু বলিলেন না, চলিয়া গেলেন। আর একটু পরে জগদীশবাবু আসিলেন ও মফিয়া দেওয়া হইয়াছে শুনিয়া এমন একটা মুখভাব করিলেন যাহা অবর্ণনীয়। সে মুখভাবে রোগীর জন্য আফশোষ, বিমলের অজ্ঞতার জন্য অনুকম্প, রোগীর পিতার জন্য সহানুভূতি এবং তাহাকে ইতিপূৰ্ব্বে না ডাকাতে কি কাগুটা হইল এই ধরণের একটা গৰ্ব্ব একসঙ্গে ফুটিয়া উঠিল। অপ্রস্তুত বিমল বলিল-হেমারেজে মফিয়া দিতে কেতাবে তো লেখে ।