পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ , লিঙ্গোক (eיצe\ নজরে পড়িল একটি আধ-বয়সী মেয়ে আধঘোমটা দিয়া পাশ কাটাইয়া চলিয়া যাইতেছে, তাহার হাতে একটি গামলায় কলাপাত দিয়া কি যেন ঢাকা দেওয়া রহিয়াছে । —কে তুমি ? মেয়েটি মাথার ঘোমটা আর একটু টানিয়া দিয়া মাথ৷ নীচু করিয়া বলিল—আমি বাৰু ঠাকুরের পরিবার। —হাসপাতালের শিবু ঠাকুরের ? -ई । —গামলাতে ও কি ? মেয়েটি একটু কুষ্ঠিত হইয়া পড়িল । বিমল বলিল—কি আছে ওতে, দেখি ঢাকা খোল তো । অতিশয় সঙ্কোচভরে মেয়েটি কলাপাতার ঢাকাটা খুলিয়া বলিল—হাসপাতালের রুগীদের দিয়ে যা ভাত বেঁচেছিল তাই নিয়ে যাচ্ছি বিমল দেখিল অন্ততঃ চার-পাচ জনের ভাত ডাল তরকারি গামলাতে রহিয়াছে । —এত ভাত বেঁচেছিল ? বল কি ! মোটে তে দশ-বারো জন রুগী আছে । এস আমার সঙ্গে । হাসপাতালে ঢুকিয়া অনুসন্ধান করিয়া বিমল স্তম্ভিত হইয়া গেল। শিবুঠাকুরের ভয়ে কোন রোগী প্রথমে কোন কপা বলিতেই চায় না। বিমল অভয় দেওয়াতে অবশেষে সকলেই বলিল যে তাহারা কোনদিনই পেট ভরিয়া থাইতে পায় না, তাহাদের এক-আধ মুঠ দিয়া সমস্তই শিবুঠাকুর প্রত্যহ লইয়া যায়। ভৈরব চাকরও প্রত্যহ তাহাদের অন্নে ভাগ বসায় । বিমল বলিল—আচ্ছা, ব্যবস্থা করছি । তৎক্ষণাং ভৈরব ও শিবুকে ডাকিয়া বিমল তাহাদের বেতন চুকাইয়া দিল এবং গুপিবাবুকে ডাকিয়া বলিল যে, এক জন নূতন ঠাকুর এবং নূতন চাকর অবিলম্বে চাই। ইহাদের আর রাখা চলিবে না। গুপিবাবু সহজে কোন কথা বলেন না, বলিলেও খুব কম বলেন। চশমার কাচের উপর দিয়া ঈষৎ ভ্র-কুঞ্চিত কবিয়া তিনি সমস্ত ব্যাপারটা পধ্যবেক্ষণ করিলেন ও সংক্ষেপে বলিলেন–আচ্ছা, দেখি। চট করে পাওয়া মুদ্ধিল । রুকমি আসিয়া দ্বারের বাহিরে দাড়াইয়া ছিল। সে মৃদুকণ্ঠে বলিল—মুস্কিল কিসের, নরু ঠাকুর তো বসে আছে, কেষ্টাও বসে আছে, ডাকলেই আসবে। -छूझे সব কথার মাঝখানে ফোড়ন দিস কেন বল ত । আ গেল যা ! জানুকীও তাহাকে ধমকাইয়া দিল—তুষ্ট বাড়ী যা না! রাগে গরগর করিতে করিতে রুকমি চলিয়া গেল । বিমল জানকীকে আদেশ করিল নরু ঠাকুর ও কেষ্ট চাকরকে ডাকিয়া আনিতে, আজই সে তাহাদের বাহাল করিবে । ফিমেল ওয়ার্ডে নূতন রোগিণীটির রক্ত আনিতে গিয়া বিমল দেখিল সেদিনকার সেই যক্ষ্মাগ্রস্ত ভিখারীট তাহার বিছানার পাশে মাটিতে বসিয়া একদৃষ্টে মেয়েটার মুখের পানে চাহিয়া আছে। —তুমি এখানে বসে আছ কেন ? গুপিবাবু বলিলেন—এই নিয়ে চার বার হ’ল ! এর আগে তিন বার মানা করেছি আমি। সেই থেকে কেবল এইখানে ঘুরঘুর করছে। বিমল বলিল—যাও, বেরিয়ে যাও এখান থেকে । লগুড়াহত কুকুরের ন্যায় সে তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেল এবং বটগাছতলাটায়ু গিয়া বসিল। একটু পরে বিমল রক্ত পরীক্ষা করিয়া যখন ফিরিয়া যাইতেছে, তখন সে ধীরে ধীরে উঠিয়া আসিল এবং একটু ইতস্তত: করিয়া বলিল—বাবু! —কি ? —ও মেয়েটা কি বাচবে ? —তুমি ওখানে গেছলে কেন ? আর যেও না। —আচ্ছা বাৰু | বিমল চলিয়া যাইতেছিল, কিন্তু সে আবার জিজ্ঞাসা করিল—ও কি বাচবে বাবু ? —সে খোজে তোমার দরকার কি ? —আমার অমনি একটি মেয়ে ছিল, বিনা ওষুধে বেঘোরে জরে ছটফট করতে করতে মরে গেছে সে বাৰু ! বিমল সবিস্ময়ে লক্ষ্য করিল তাহার কোটরগত