পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ , অনুভূতি wత్రి)శ్రీ' কুড়ি জনের কাজ শেষ করিয়া নিম্পূহ ভাবে সিড়ির উপর বসিল । এক বৎসর পরে আমেজ মিঞাকে দেখিলাম । এক বৎসরে ষেন আরও অনেকখানি বৃদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে, যদিও পঞ্চাশের খুব বেশী বয়স নহে। আমাদের ধানজমি চাষ করিয়া ফসলের একটি ক্ষুদ্র অংশ লইয়া যাহারা বাচিয়া আছে, আমেজ তাহাঁদেরই এক জন । ইহারা সকলেই মোটামুটি অতি দরিদ্র । নিলোভ নহে, কিন্তু সৎ। পল্লী-অঞ্চলের ভদ্রশ্রেণীর কলহ বিবাদ ও ষড়যন্ত্রের ধার ইহার ধারে না । ধারিলে চলেও না । অপরিমিত পরিশ্রম, অৰ্দ্ধাশন ও ম্যালেরিয়া ইহাদিগকে অধিকাংশ বিষয়েই ভদ্রশ্রেণীর অনুগামী হইতে সাহায্য করে নাই। স্থখাদ্য জিনিষটি কালেভদ্রে বাবুদের বাড়ীর পূজাপাৰ্ব্বণেই ইহারা পাইয়া থাকে, কাজেই দুর্গাপূজার কয় দিন যখন এই কদন্নভোজী, স্বাস্থ্যহীন, কুঞ্চবর্ণ প্রাণী কয়টি সিড়ি হইতে ভাড়ার-ঘরের দিকে উকি দেয়, তখন বড়বাবু মেজবাবু হইতে আরম্ভ করিয়া দুই বৎসরের শিশুটি পর্যন্ত বিরক্ত হইয়া উঠিলেও, আমার একটু অস্বস্তি বোধ হয়। কিন্তু আমি বড়বাবু মেজবাবু ইহাদের কাহারও পদবী পৰ্য্যন্ত পদোন্নতি লাভ করি নাক্ট, কাজেই ভাড়ার-ঘরের জিনিযগুলি যথেচ্ছা দ্বাদশ প্রেতকে বিলাইয়া দিবার অধিকারও হয় নাই । অধিকাংশ সময়েই তাহীদের উকি মারাই সার হয়। পূজার দিনে প্রার্থী কাহাকেও ফিরানো হয় না ; কিন্তু তুমি-আমি, বড়বাবু-মেজবাবু, আমরা কষ্ট করিয়া কলিকাতা হইতে পয়সা খরচ করিয়া ম্যালেরিয়ার দেশে গিয়াছি, আমাদের জন্তু মিষ্টান্ন আসিয়াছে, তাহা অযথা খরচ করিলে চলিবে কেন ? ফিরাইয় দেওয়া হয় না কাহাকেও, চিড়া, তরল দধি, গোটাকয়েক নারিকেলের সন্দেশ, খুব বেশী হইলে একটি রসগোল্লা, ইহা দিয়াই এই রবাহুতদিগকে বিদায় করা হয়। তাহারা প্রতিমা নমস্কার করিয়া সানন্দেই চলিয়া যায় । কিন্তু এই আমেজ লোকটি নাছোড়বান্দা। বাড়ীর বর্তমান যুগের বড়বাবু-ছোটবাবুদিগকে সে শিশুকাল হইতে দেখিতেছে, কাজেই খুব বেশী আমল দেয় না । তাহার রসনাসংক্রান্ত লোভ একটু অতিরিক্ত। কাহারও চোখে না পড়িলেও সে ক্যানেস্তারা দেখিলেই বুঝিতে পারে তাহার মধ্যে কেরোসিন তেল আছে, না ঘি আছে, না বনগ্রামের কঁাচাগোল্লা আছে এবং ভাড়ার-ঘরে দধির ভাড় খাটের তলায় রাখিয়া চার-পাঁচখানি শীতলপাটি দিয়া থাটের নীচের ফাক ঢাকিয়া দিলেও তাহার শ্যেনদৃষ্টিকে ফাকি দেওয়া যায় না। আমেজ লোকটি দেখিতে অত্যস্ত কুশ্রী । খুলনা জেলার নিম্নশ্রেণীর লোকেরা স্বরূপ হয় না, কিন্তু আমেজ তাহাঁদের সকলকে হার মানাইয়াছে। তাহার গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণ, লম্বায় পাচ ফুটের বেশী নয়। উদরের পরিধি অত্যধিক। সকলের উপরে বিরলদস্ত মুখ ও খোচা খোচা পাকা দাড়ি-গোফ দেখিয়া প্রথম হইতেই বিতৃষ্ণ আসিয়া যায়। এগারটা প্রায় বাজে দেখিয়া স্নানের চেষ্টা দেখিতে থাট ছাড়িয়া উঠিয়া দঁাড়াইলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খামের আড়ালে এতক্ষণ অদৃশু আমেজও উঠিল। সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিলাম। কারণ কালেভত্রে যাহার বাড়ী যায়, তাহীদের সহিত দেখা হইলেই কুশল প্রশ্নের পরের ধাপই হইল পয়সা চাওয়া। বলিলাম, “কি হে আমেজ, খবর কি ? ভাল ত ?” আমেজ একটু বিষঃ হাসিয়া বলিল, “ভাল আর থাকি কি ক’রে বাবু, এক ভাবনা যাতি না যাতি আর এক ভাবনা আস্তে জোটে ।” বলিলাম, "সে আর নতুন কথা কি হ’ল ? তাই ।” সে মাথা নাড়িয়া বলিল, “সে কথা কলি’ কি চলে বাৰু, আমাগো ভাবনা অন্য রহম।” কথাটা অস্বীকার করিতে পারিলাম না। স্বানের বেলা হইতেছিল, বলিলাম, “তা তুমি বিকেল বেলা এস, তোমাকে কিছু দেব’খন।” পল্লীর যে-কোন কৃষাণকে সপ্তম স্বগে তুলিয়া দিবার ইহার চেয়ে ভাল ঔষধ আর নাই । কিন্তু আশ্চর্য্য হইয়া দেখিলাম, আমেজ খুব উৎসাহ দেখাইল না। শুধু স্বীকার করিল, বিকালে আসিবে। সকলেরই あ