পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سيارتيريا সে ধীরমন্থর গতিতে চলিয়। যাইতেই দেখিলাম, কয়েক জন নিবিষ্টচিত্তে আমাকে লক্ষ্য করিতেছে। বলিলাম, “আপদ গেল ত ?” আমার সম্পাদক খুল্লতাত তাস রাখিয়া বলিলেন, . “গেল ? গেল মানে ও ত সবে এল ।” “আহা এ রকম আসা ত রোজই আসে । আনাকয়েক পয়সা দিয়ে দেবখন বিকেলে, চুকে যাবে।” রাঙাদা বলিলেন, “চুকে যাবে ?” “ঘাবেই ত তোমাদের রসগোল্লা-সন্দেশের দিকে ও যতই নজর দিক, তাতে আমার হজমের বfঘাত ঘটবে না। আমাকে আর না জালালেই হ’ল।” মনে হইল, আমি কথাটাকে যত সহজে উড়াইয়। দিলাম, আর কেহ তাহ পারিলেন না। বড়দা খুলনা কোর্টে ওকালতি করেন, তিনি বলিলেন, “ওকে বেশী আস্বারা দিও না । চেনো না ত, শহরে থাকো—” আশ্বাস দিয়া বলিলাম, “নিৰ্ভয়ে থাকুন, আমি ওকে আস্বারা দিয়ে মাথায় তুলব না।” ক্রিয়াকৰ্ম্মের বাড়ীতে সানাহার করিতে দুইটা বাজিল । খানিকটা ঘুমাইয়া লওয়া চলিত, কিন্তু ভাবিলাম ডাক্তারের বৈঠকখানায় আডড দিয়া দুপুরট। কাটাইয়া দেওয়া যাক । ডাক্তার গ্রামেরই লোক, দূরসম্পর্কে জ্ঞাতি। বয়সে আমাদের চেয়ে কিছু বড় ; যশোহর মেডিক্যাল স্কুল হইতে পাস করিয়া নিজের বাড়ীতেই ডাক্তারখানা খুলিয়াছে। ছুটির দিনে দ্বিপ্রহরে যাহারা নিদ্রার শরণ লইতে ভালবাসে ন, তাহারা এইখানে আসিয়া বসে । ডাক্তার গালগল্প করিতে পারে ভালই, এবং তাস থেলিতে জানে না। আমার কাছে সবচেয়ে বড় কথা ইহাই । ডাক্তারের ঘরে আসিয়া দেখি ডাক্তার লুকি হাতে লইয়া চেয়ারে বসিয়া ঝিমাইতেছে। পায়ের শব্দে চক্ষু অৰ্দ্ধ-উন্মীলিত করিয়৷ একবার দেখিল, কিন্তু গল্পগুজব সম্বন্ধে কোন উৎসাহ দেখাইল না । সম্ভবত: মধ্যাহভোজনট একটু গুরু হইয়া গিয়াছিল । ডাক্তারের ঘরের পাশে তিনটি ভাঙা আলমারি সম্বল করিয়া গ্রামের লাইব্রেরি। অগত্যা একখানি বই লইয়। 前 ১৩৪৬ পড়িয়া দুপুরট কাটানোর চেষ্টা করিলাম। ঘুম আসিল না । কারণ দুপুরে আমার ঘুম আসে না । বইটার দুই-তিন পৃষ্ঠা উন্টাইয়া বুঝিলাম পড়া বই, এবং আমিই এক কালে বইখানি লাইব্রেরিকে দান করিয়াছিলাম। তবু পাতা উন্টাইতে লাগিলাম এবং একই সঙ্গে পল্লীপ্রকৃতির মধ্যাহ-উৎসব দেখিতে লাগিলাম । শরৎকালের পল্লী-প্রত্যুষ খুব সুন্দর নিঃসন্দেহ । কিন্তু আমার মনে হইল, দুপুর ও বিকালের মধ্যের সময়টুকু এই যোগেশ্বর ঔষধালয়ের বারাণ্ডায় ভাঙা চেয়ারে বসিয়া উপভোগ করার মত শান্ত আনন্দ আর নাই। চোখের সামনে প্রখর রৌদ্র ও নিবিড় ছায়ার মধ্যে লুকোচুরি চলিয়াছে। পানীপুকুরের পাশে রাস্ত জনবিরল, কচিৎ দুই-একটি লোক, একটা কুকুর, অথবা একটা গরু ছাড়া অপর কোন প্রাণীর অস্তিত্ব সেখানে নাই ৷ পাশের আমবাগানে কি যেন একটা পাখী ডাকিতেছে, নাম জানি ন ; গলার সুর মিষ্টি নহে, কিন্তু মনে হইল শাস্ত প্রকৃতির নিস্তব্ধতার নিবিড়ত্বের পরিচয় দিতে ঐ পার্থীটিই পারিতেছে, সুকণ্ঠ কোন পার্থী পারিত না । গোটাকয়েক পাতিই সি কোথা হইতে আসিয়া পানাপুকুরের উপর সাতার দিতে আরম্ভ করিল। আমি নিবিষ্টচিত্তে বসিয়া দেখিতে লাগিলাম, রৌদ্র ও ছায়া, অসীম শান্তি ও ক্ষণিক অশান্ত পার্থীর ডাক, ইণসের ডানাঝাড়ার শব্দ । আর কিছু মনে রহিল না, কিছুক্ষণ আগে পর্যান্ত সুলেখা নামক যে একটি তরুণী সমস্ত মন জুড়িয়া বসিয়া ছিল, তাহার কথাও না । ডাক্তার ইতিমধ্যে চেয়ারে-বসা অবস্থাতেই ঘুমাইয়া পড়িয়াছে । হু কাট মাটিতে পড়িয়া, জল গড়াইয়া মাটির মেঝের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে । ঠিক এমনি ভাবেই ঘণ্টা-তিনেক কাটিয়া গেল। অন্য দিন দুপুরবেলা ডাক্তারের বাড়ী আড়াপ্রয়াসী অনেকের সমাগম হয়, আজ আর কেহ আসিল না । দেখিলাম তাহাতে ডাক্তার ও আমার কাহারও অসুবিধা হয় নাই । ডাক্তার নিৰ্ব্বিঘ্নে ঘুমাইতে পারিয়াছে, আমি বিনাবাধায় মধ্যাহ্ন-প্রকৃতির রূপস্থধা পান করিয়াছি। যাহার না