পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেন এই দুঃখ ? শ্রীমনোরঞ্জন গুপ্ত, বি. এসসি. .এ-দেশে প্রধানত কৃষিজাত ধান, পাট, তিসি, গম, সরিষা, চা প্রভৃতি এবং খনি-আহৃত কয়লা, লৌহ প্রভৃতিই ধনোৎপাদনকারী বস্তু । দেশের শাসন ও উল্লিখিত বস্তু সকলের উৎপাদনে ও ক্রয়বিক্রয়ে যাহারা নিয়োজিত, মোটামুটি তাহারা ছাড়া অন্য সকলেই এদেশে বেকার । উল্লিখিত কাৰ্য্যসকলের ব্যাপ্তি এই দেশে অত্যন্ত সীমাবদ্ধ, এই হেতুষ্ট এ-দেশের অধিকাংশ অধিবাসীই বৃত্তিহীন । এই বৃত্তিহীনতা এতখানি ব্যাপক যে একমাত্র গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যই ভারতবাসী অধুনা সমাজবন্ধন, পরস্পরের আদান-প্রদান, নীতি ও সাধুতা বিসর্জন দিয়াছে । তাহার আর্থিক জীবনই সৰ্ব্ব ব্যাপারের নিয়ামক হইয়া দাড়াইয়াছে । এই দুঃখময় অবস্থা হইতে পরিত্রাণের উপায় কি ? দিন দিন লোকসংখ্যাবৃদ্ধি হেতু এবং ধনোৎপাদনের অন্য উপায় না থাকায় তো এই দুঃখ বৃদ্ধিই পাইতেছে । এই প্রশ্নের উপর নানা দিক হইতে আলোকসম্পাতের জন্যই এই ধ্রুবন্ধের অবতারণা । ধান ও পাট উৎপাদনে লাভ হয় না। উৎপাদনের খরচ ও ভূমির মূল্যের অনুপাত কষিলে ধান ও পাটের মূল্য আরও বৃদ্ধি হওয়া আবশ্বক। কিন্তু ধানের দাম চাহিদার অনুপাতে বৃদ্ধি হইবার তেমন কোন উপায় দেখা যাইতেছে না। পাটের মূল্যবৃদ্ধির জন্য চাদপুরে সমবায়বিভাগের উদ্যম লক্ষ লক্ষ টাকা লইয়া ডুবিয়া যাইবার কথাও মনে পড়িতেছে। পাটের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বৰ্ত্তমান গবর্ণমেণ্টের আইন কিরূপে ইংরেজ-পরিচালিত পাটকলওয়ালাদের সমবেত চেষ্টায় প্রতিহত হইল তাহাও দেখিতেছি । এই অবস্থায় কৃষিজাত দ্রব্যমাত্রই কি ক্ষতিজনক হইবে ? কিন্তু চ কৃষিজাত শ্রব্য, তাহাতে লাভ হয় । عb -محموي 8 পূৰ্ব্বে কয়েক বৎসর হইতে লাভ তেমন ছিল না। কিন্তু সে ক্রটি সংশোধিত হইয়া স্বদিন ফিরিয়া আসিয়াছে। এবং ইহারই সঙ্গে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, দেশের চা-বাগানগুলির মূলধনের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগের মালিক হইল ইংরেজ । এ-দেশের শতকরা ৮৭ জন চাষব্যবসায়ে লিপ্ত । কিন্তু দেখা যাইতেছে তাহাদের বৃত্তি যথেষ্ট ধন উৎপাদন করিতেছে না । ইহারই সূত্র ধরিয়া আমরা এই কথা বলিতে চাই যে, উৎপাদিত বস্তুকে আরও অর্থপ্রস্থ করার উপায় না করিতে পারিলে ভারতের এই দুঃখ দূর হইবার উপায় নাই। কারণ এই শতকরা ৮৭ জন লোকের জীবনের রক্ষণ, সেবা ও শিক্ষাদানের বৃত্তি ধারণ করিয়াই বাকী ১৩ জন জীবন ধারণ করিয়া থাকে । এ-দেশের কুষিজাত দ্রব্য যখন আমাদের জীবনযাত্রার সহিত এত ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত তখন কি ভাবে প্রতি বৎসরের অর্জিত শস্ত্যাদি বায়িত হয় তাহ যাচাই করিয়া দেখা যাক। পাট দিয়া স্বতলি, চট, আসন, থলিয়া ভূতি তৈরি হয়। ধানে আহাৰ্য্য চাউল, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আবশ্ব্যক ষ্টার্চ ও বীজতৈল স্বষ্টি হয় । তিসি হইতে যে তৈল হয় তাহাই সেতু, বাড়ীঘর, টিন, নৌক, জাহাজ প্রভৃতি রং করিতে ব্যবহৃত রঙের দেহ । ছাপার কালির দেহও তিসির তৈল। সরিষার তৈল কোটি কোটি লোকের আহার। অধিকাংশ তৈলবীজের খৈল দুগ্ধদানকারী গরুর পরম পুষ্টিকর আহার । চা দেশবিদেশের লোকের প্রিয় পানীয়। এতদ্ব্যতীত আরও বহু কৃষিজাত দ্রব্য আছে। প্রসঙ্গত হরীতকীর নাম করা যাইতে পারে, উহা দ্বারা টানিক এসিড প্রস্তুত হয়। আমাদের ধারণা জন্মিতে পারে যে, উল্লিখিত বস্তুগুলি সব এ-দেশেই তৈয়ারী হইতেছে এবং বহু লোক এই সকল