পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©Qዜሙ প্রবাঙ্গী , ১৩৪৬ কিছু কিছু বিধি-নিষেধের স্বষ্টি হইয়াছে। ইহার সহিত প্রাদেশিকতার যে ইন্ধন প্রতিনিয়ত সঞ্চারিত হইতেছে তাহাতে প্রদেশে প্রদেশে পণ্য আদান-প্রদান কঠিন হইয়া ব্যবসায়ে বিঘ্ন উপস্থিত হইতেছে। বিস্ময়ের বিষয় এই যে, বিদেশী বস্তু বিদেশ হইতে আসিয়া কোন প্রদেশে প্রবেশের আইনের যে বাধা নাই, এক প্রদেশের পণ্য অন্য প্রদেশে যাইতে সে-বাধা আছে । লৌহ, চিনি প্রভৃতির কারখানার উন্নতির জন্য গবর্ণমেণ্ট আইনদ্বারা কিছু সহায়তা করিতেছেন সত্য কিন্তু ঐ সকল ব্যবসায়ের প্রসারের সঙ্গে বিদেশীর স্বার্থ কি ভাবে জড়িত তাহার আভাস উহাদের কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিদেশী যন্ত্রাদির প্রতি দৃষ্টি করিলেই উপলব্ধি হয় । ইউরোপের এই যুদ্ধকালে বহুতর রাসায়নিক দ্রব্যের আমদানি রুদ্ধ হইয়াছে। ইহার ফলে এই সকল দ্রব্যব্যবহারকারী কারখানাগুলি উঠিয়া যাইবার উপক্রম হইয়াছে। এ জন্য দেশের শিল্প-বিশেষজ্ঞগণ নূতন রাসায়নিক শিল্প প্রতিষ্ঠার্থ গবর্ণমেণ্টের সহায়ত চাহিয়৷ এই উত্তর পাইয়াছেন যে র্তাহাদের চাহিদা যেন তাহারা ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল ইণ্ডাষ্টিজকে জানান এবং গবর্ণমেণ্ট কোন সাহায্য করিবেন না। গবর্ণমেণ্ট আরও সাবধান করিয়া দিয়াছেন যে যুদ্ধবিরতিকালে পাছে বিদেশী প্রতিযোগিতায় কারখানা উঠিয়া যায় ইঙ্গ বিবেচনা করিয়া যেন নূতন কারখানা গড়া হয়। গবর্ণমেণ্টের এই মনোভাব এই পরাধীন ভারতেই সম্ভব হইল । এই ভাবে বহুতর উদাহরণ একত্র করিয়া আর লাভ নাই এবং ইহাতে অস্বাভাবিকতাও কিছু নাই। এখন প্রশ্ন দাড়াইতেছে যে, গবর্ণমেণ্টের স্নেহ ন পাইয়াও জাতীয় শিল্প-পরিকল্পনা কি কৃতকার্য্য হইতে পারিবে ? জাপান অতি অল্প দিনে শিল্পবাণিজ্যের উন্নতি করিয়াছে। কিন্তু জাপান স্বাধীন। তাহাদের দেশীয় গবর্ণমেণ্টই তাহাদের দেশের শিল্পবাণিজ্যের আদি প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক ও নিয়ন্তা। রাশিয়াও অতি অল্প কয়েক বৎসরে শিল্পবাণিজ্যে দেশ গুছাইয়া লইয়াছে। কিন্তু রাশিয়াও স্বাধীন। আমেরিকার ন্যাশনাল রিকভারী প্ল্যানও এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়। দেখা যায় এই সকল দেশের স্বাধীন গবর্ণমেণ্ট দেশীয় শিল্পের উন্নয়ন জন্ত, সৰ্ব্বদা আত্মরক্ষামূলক আইনের ও ব্যবস্থার আশ্রয় লইয়াছে। ইহাতে দেশীয় লোকের যে সাময়িক কষ্ট সহিতে হইয়াছে আইন দ্বারা তাহার জন্য জনগণের কণ্ঠরোধ করিয়া রাখা হইয়াছে । এই ভাবে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য সাময়িক দুঃখ গবর্ণমেণ্ট জোর করিয়া চাপাইয়া দিয়াছে। একটি উদাহরণ দিতেছি। রাশিয়া দেখিল প্রতিযোগিতায় পৃথিবীতে টিকিতে হইলে দেশে মোটর গাড়ী চাই। পাচ বৎসরে কত মোটর গাড়ী তৈয়ারী করিতে হইবে তাহার একটা সংখ্যা স্থির হইল। প্রভূত অর্থের বিনিময়ে রাশিয়া আমেরিকার ফোর্ড কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি করিল যে তাহাদের বিখ্যাত কারখানার অতুরূপ যন্ত্ৰ দিয়া রাশিয়াতে উপরোক্ত সংখ্যক মোটর তৈয়ারীর যোগ্যতাসম্পন্ন বৃহৎ একটি কারখানা ফোর্ড গঠন করিয়া দিবেন এবং কয়েক জন রাশিয়ান এঞ্জিনীয়ারকে আমেরিকার নিজ কারখানায় এমন করিয়া কাঞ্জ শিখাইয়া দিতে হইবে যাহাতে র্তাহারা রাশিয়ায় আসিয়া ফোর্ডের এঞ্জিনীয়ারদের সঙ্গে নিজেদের কারখানায় কাজ করিয়া পরে নিজেরাই উহা পরিচালন করিতে পারেন। বিবিধ পণ্য ও সামগ্রীর জন্যই রাশিয়া তখন নানা দেশের সঙ্গে অহরূপ চুক্তি করিয়াছিল। কিন্তু একযোগে চুক্তির টাকা দিবার সাধা তখন রাশিয়ার ছিল না। রাশিয়া টাকার বদলে কয়েক জাহাজ গম আমেরিকায় পাঠাইয়া সে-দেনা শোধ করিয়াছিল। কিন্তু তজ্জন্য স্বদেশে গমের অভাব হওয়ায় গবর্ণমেণ্টের অনুশাসনে স্বল্পাহারই রাশিয়ানদের সহ করিতে হইয়াছিল । কেবল আলস্য, অকৰ্ম্মণ্যতা ও বাণিজ্যে অমনোযোগিতা হেতুই এ-দেশে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ও বৃত্তিহীনের বৃত্তি হইতেছে না, এই অভিযোগ যে মিথ্যা তাহা প্রদর্শনের জন্যই আমরা এই আলোচনা করিলাম । শিল্প-বাণিজ্য সহজ নহে, উহাতে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ও অসাধারণ বিধিনিষেধ রহিয়াছে। শিল্প-বাণিজ্যের এক অতীব প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী হইল মূলধন। কিন্তু স্থায়ী ও নিশ্চিত আয় অভিলাষী,