পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌৰ , অনুভব করিতেছে, কিন্তু ঋণ ও স্বদের হিসাবের আদিঅন্ত তাহারা কোন মতেই খুজিয়া পাইতেছে না। এই তিন বৎসরের মধ্যেই তাহদের জমিগুলি প্রথম শ্রেণীর জমিতে তাহারা পরিণত করিয়া তুলিয়াছে। জমির ক্ষেত্র সুসমতল করিয়াছে, চারি দিকের আইল মুগঠিত করিয়া কালীর পলিমাটিতে গড় জমিকে চষিয়া খুড়িয়া সার দিয়া তাহাকে স্বর্ণপ্ৰসবিনী করিয়া তুলিয়াছে। চরের প্রান্তভাগে যে-জমিটা চক্রবর্তী-বাড়ী খাসে রাখিয়া তাহাদের ভাগে বিলি করিয়াছিল, সেগুলিকে পর্য্যস্ত পরিপূর্ণ জমির আকার দিয়া গড়িয়া ফেলিয়াছে । শ্রীবাসের জমিও তাহারাই ভাগে করিতেছে, সে জমিও প্রায় তৈয়ারী হইয়া আসিল । বে-বন্দোবস্তী বাকী চরটার জঙ্গল হইতে তাহারা জালানীর জন্য আগাছা ও ঘর ছাওয়াইবার উদ্দেশ্যে বেনা ঘাস কাটিয়া কাটিয়া প্রায় পরিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছে । তাহাদের নিজেদের পল্লীর পাশে পাশে আম কঁঠাল মহুয়া প্রভূতির চারাগুলি মাতুধেরও মাথা ছাড়াইয়া বাড়িয়া উঠিয়াছে, সজিনার ডালের কলমগুলিতে তো গত বৎসর হইতেই ফুল দেখা দিয়াছে। বাশের ঝাড়গুলিতে চার-পাচটি করিয়া বঁাশ গজাইয়াছে—শ্ৰীবাস হিসাব করিয়াছে এক-একটি বাশ হইতে যদি তিনটি করিয়াও নুতন বঁাশ গজায়, তবে এই বর্ষাতেই প্রত্যেক ঝাড়ে পনর-কুড়িটি করিয়া নূতন বঁাশ হইবে । জায়গাটিও আর পূর্বের মত দুৰ্গম নয়, শ্ৰীবাসের দোকানের সম্মুখ দিয়া যে-রাস্তাটা গাড়ীর দাগে দাগে চিহ্নিত হইয়া ছিল, সেটা এখন সুগঠিত পরিচ্ছন্ন রাস্তায় পরিণত হইয়াছে। রাস্তাটা সোজা সাওতাল-পল্লীর ভিতর দিয়া নদীর বুকে যেখানে নামিয়াছে সেইখানেই এখন খেয়ার নৌকা ভিড়িয়া থাকে, এইটাই এখন এপারের খেয়াঘাট। খেয়ার যাত্রীদের দল এখন এই দিকেই যায় আসে । গাড়ীগুলিও এই পথে চলে। রাস্তার এ প্রাস্তটা সেই গাড়ীর চাকার দাগে দাগে একেবারে এপারের চক-আফজলপুরের পাকা সড়কের সঙ্গে গিয়া মিলিয়াছে। ঐ পাকা সড়কে যাইতে যাইতে মধ্যে মধ্যে মুরশিদাবাদের কলাই, লঙ্কা প্রভৃতির ব্যাপারীদের গাড়ী এখানে আসিতে মুরু করিয়াছে। তাহারা কলাই লস্ক বিক্ৰী করে ধানের বিনিময়ে । কিন্তু কালিমী eశ్రీతీ এখানে কলাই, লঙ্কা বেচিবার সুবিধা তাহারা করিতে পারে না, তবে সাঁওতালদের অল্প চড়া দর দিয়া ধান কিছু কিছু কিনিয়া লইয়া যায়। গরু ছাগল কিনিবার জন্য মুসলমান পাইকারদের তো আসাযাওয়ার বিরাম নাই। দুই-চারি ঘর গৃহস্থেরও এপারে আসিয়া বাস করিবার সংকল্পের কথা শ্ৰীবাসের কানে আসিতেছে। বে-বন্দোবস্তী ও-দিকের ঐ চরটার উপর তাহাদের দৃষ্টি পড়িয়াছে। ঘাস ও কাঠ কাটিয়া সাওতালরাই ও-দিকটাকে এমন চোখ পড়িবার মত করিয়া তুলিল। আবার ইহাদের গরুর পায়ে পায়ে ঘাস ও কাঠবাহী গাড়ীর চলাচলে ঐ জঙ্গলের মধ্যেও একটা পথ গড়িয়া উঠিতে আর দেরি নাই । নবীন ও রংলালদের সহিত দাঙ্গা করার জন্ত শ্ৰীবাস এখন মনে মনে আপশোষ করে। এত টাকা খরচ করিয়া এক শত বিঘা জমি লইয়া তাহার আর কি লাভ হইয়াছে ! লাভের অপেক্ষ ক্ষতিই হইয়াছে বেশী। আজ আর চক্রবর্তী-বাড়ীতে গিয়া জমি বন্দোবস্ত লইবার পথ চিরদিনের মত রুদ্ধ হইয়া গিয়াছে। মামলার খরচে তাহার সঞ্চয় সমস্ত ব্যয়িত হইয়। অবশেষে মজুমদারের ঋণ আসিয়া তাহার ঘরে প্রবেশ করিয়াছে। মামলা না করিয়া বাকী চরটা সে যদি বন্দোবস্ত লইত— তবে সে কেমন হইত ? আর গোপনে দখল করিবারও উপায় নাঙ্গ—ছোট রায়, ইন্দ্র রায়ের শ্বেনদৃষ্টি এখানে নিবদ্ধ হইয়া আছে । ইন্দ্র রায়ই এখন চক্রবর্তীদের বিষয় বন্দোবস্তের কৰ্ত্তা ! সে দৃষ্টি, সে নখরের আঘাতের সম্মুখীন হইতে শ্ৰীবাসের সাহস নাই। সে দিনের সেই সৰ্ব্বরক্ষাতলার বলির কথা মনে করিয়া বুক এখনও হিম হইয়া যায় । এখন একমাত্র পথ আছে, এই সাওতালদের উঠাইয়া, ঐদিকে ঠেলিয়া দিয়া, এদিকটা যদি কোনরূপে গ্রাস করিতে পারা যায়। জমি-বাগান বঁাশ লইয়া এদিকটা পরিমাণে কম হইলেও এটুকু নিখাদ সোনী ! ভাবিয়া-চিন্তিয়া শ্ৰীবাস জাল রচনা স্বরু করিয়াছে । মাকড়সা যেমন জাল রচনা করে, তেমনি ভাবেই হিসাবের খাতায় কলমের ডগায় কালির সুত্র টানিয়া টানিয়া যোগ দিয়া গুণ দিয়া জালখানিকে সম্পূর্ণ করিতে আরম্ভ করিয়াছে। সে বলিয়াছে—আমার খাতায় টিপছাপ