পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wob” - " . সংসারে যা-তা বলাই হয় যে, তার আর তোদের দোষ কি বল! সাওতালের কেহ কোন উত্তর দিল না। শ্ৰীবাসই আবার বলিল—বাকী তো এক বছরের নয়, বাকী ধর গা ধেয়ে—তোর তিন বছরের। যে বছর দাঙ্গা হ'ল, সেই বছর থেকে তোরা ধান নিতে লেগেছিস । দেখ কেনে হিসেব করে, দাঙ্গা হ’ল, মামলা হ’ল, মামলাই চলেছে দু-বছর, তার পর লবীনদের ধর গা যেয়ে—এক বছর ক’রে জেল খাট হয়ে গেল। বটে কি না ? কমল সে কথা অস্বীকার করিল না, বলিল –ছ সি তো বেটে গো—ধান তো তিনটে হ’ল, ইবার তুর চারটে হবে। --তবে ? মাঝি এ “তবে”র উত্তর খুজিয়া পাইল না। আবার চুপ করিয়া ভাবিতে বসিল । সাওতালদের সহিত শ্ৰীবাসের একটা গোল বাধিয়া উঠিয়াছে। দাঙ্গার বৎসর হইতেই শ্ৰীবাস সাওতালদের ঋণ দাদন করিতে আরম্ভ করিয়াছে । বর্ষার সময় যখন তাহারা জমিতে চাষের কাজে লিপ্ত থাকে তখন তাহাদের দিনমজুরির উপার্জন থাকে না ; সেই সময় তাহারা স্থানীয় ধানের মহাজনের নিকট হইতে স্বদে ধান ধার লইয়া থাকে, এবং মাঘফাল্গুনে ধান মাড়াই করিয়া স্বদে-আসলে ধার শোধ দিয়া আসে । এবার অকস্মাৎ এই বর্ষা পড়িয়া যাওয়ায় ইহারই মধ্যে সাঁওতালদের অনটন আরম্ভ হইয়া গিয়াছে। অন্য দিক্ দিয়া চাষও আসন্ন হইয়া পড়িয়াছে। তাহারা শ্রীবাসের কাছে ধান ধার করিতে আসিয়াছে। কিন্তু শ্ৰীবাস বলিতেছে তাহাদের পূর্বের ধারই এখনও শোধ হয় নাই । সেই ধারের একটা ব্যবস্থা না করিয়া দিলে আবার নুতন ঋণ সে কেমন করিয়া দিবে! কিন্তু কথাট তাহারা বেশ বুঝিতে পারিতেছে না, ঋণ স্বীকারও করিতে পারিতেছে না, অস্বীকারও করিতে পারিতেছে না। তাহারা চুপ করিয়া বসিয়া শুধু ভাবিতেছে। কতকগুলি দশ-বারে বছরের উলঙ্গ ছেলে কলরব করিতে করিতে ছুটিয়া আসিল—মরাং গাডে, মারাং গাডো। থিকৃড়ী ! অর্থাৎ এই বড়-বড় ইঙ্কুর, খেকশিয়াল ! কথা বলিতে বলিতে উত্তেজনায় আনন্দে তাহাদের চোখ eवंबांग्रेौ )లిప్స్లో বিস্ফারিত হইয়া উঠিয়াছে ; কাল কাল মূর্তিগুলির বিস্ফারিত চোখের সাদা ক্ষেতের মধ্যে ছোট ছোট কাল তারাগুলি থর থর করিয়া কঁাপিতেছে ! কাঠের ওস্তাদ সৰ্ব্বাগ্রে ব্যগ্রতায় চঞ্চল হইয়া উঠিল, সে বলিল—কুথাকে ? ওকারে ? —বানের জলের ধারে গো ! ভূয়ের ভিতর থেকে গুলগুল করে বার হছে গো ! দুই-তিন জনে কলরব করিয়া উঠিল, গোডা ভূগ্যারেকো চো-চোয়তে ! অর্থাং গৰ্ত্তের ভিতর সব টো-চে; করছে ! এইবার সকলেই আপনাদের ভাষায় কমলের সহিত কি বলা-কওয়া করিয়া উঠিয়া পড়িল ৷ শ্ৰীবাস রুষ্ট হইয়া বলিল—লাফিয়ে উঠলি যে ইদুরের নাম শুনে ? আমার ধারের কি করবি ক’রে যা । ওস্তাদ বলিল—আমরা কি বুলব গো ? উই মোড়ল বুলবে আমাদের । আর যাব না তো খাব কি আমরা ? তু তো ধান দিবি না বুলছিস । ঘরে চাল নাই—ছেলেপিলে সব খাবে কি ? ওইগুলা সব পুড়ায়ে খাব ৷ পাড়ার ভিতর হইতে তখন সারি বাধিয়া জোয়ান ছেলে ও তরুণীর দল বর্ষণ মাথায় করিয়াই বাহির হইয়। পড়িয়াছে ইন্দুর খেকশিয়ালের সন্ধানে। ছেলের দল আরও চঞ্চল হইয়া উঠিল, সমস্বরেই বলিয়া উঠিল— দেলা-দেলা ! চল চল । বুড়ার দলও ছেলের পিছনে পিছনে ছেলেদের মতই নাচিতে নাচিতে চলিয়া গেল । শ্ৰীবাসও অকস্মাৎ লোলুপ হইয়া উঠিল, সে কমলকে বলিল—মোড়ল বল কেনে ওদের, খরগোস পেলে আমাকে যেন একটা দেয় । আসল ব্যাপারটা খুবই সোজা, সাওতালেরা সেটা বেশ বুঝিতে পারে, কিন্তু আসল সত্যের উপরে জাল বুনিয়া শ্ৰীবাস যে আবরণ রচনা করিয়াছে সেটা খুবই জটিল—তাহার জট ছাড়াইতে উহারা কিছুতেই পারিতেছে না। শ্ৰীবাস চায় সাওতালদের প্রাণস্তিকর পরিশ্রমে গড়িয়া তোলা জমিগুলি, সে-কথা তাহারা মনে মনে বেশ