পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లివెళ్చి প্রবাসী ՖՎ989 ভারতবর্ষ সম্বন্ধে সাম্রাজ্যবাদনীতি অকুস্থত হয় কিনা দেখা যাকৃ। জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস ও তদনুযায়ী আচরণ সাম্রাজ্যিকতার একটি অঙ্গ। সামরিক বিভাগে ভারতীয়েরা নিকৃষ্টস্থানীয় । অল্পসংখ্যক যে ভারতীয় অফিসারেরা সৈন্যদলে আছেন, তাহাদিগকে এক জন গোরার উপরও নেতৃত্ব করিতে দেওয়া হয় না। কবে যে সব অফিসার ভারতীয় হইবে, তাহা কল্পনা করিতে ও তাহার একটা আভাস দিতে পর্য্যন্ত প্রভুজাতির প্রতিনিধিরা অসমর্থ। অ-সামরিক বিভাগে গবর্ণর-জেনার্যাল ইংরেজ, সব গবর্ণর ইংরেজ । ‘বিড়ালের ভাগ্যে’ এক বার এক লর্ড সিংহ স্থায়ী গবর্ণর হইয়াছিলেন, কিন্তু অধস্তন ও অন্য ইংরেজ রাজপুরুষদের ব্যবহার বরদাস্ত করিতে না পারিয়া তিনি কাজে ইস্তফা দেন । গবর্ণরের এক্টিনি কোন কোন প্রদেশে কোন কোন ভারতীয় অল্প কালের জন্য করিয়াছে বটে, কিন্তু ‘পুর-টিনি’ কাহারও ভাগ্যে জুটে নাই, কার্যদক্ষতায় ও কার্যকালের দৈর্ঘ্য হিসাবে যোগ্যতর ভারতীয়কে ডিঙাইয়া নিম্নস্থানীয় ইংরেজকে গবর্ণরের ও অন্য বড় কাজের এক্টিনি দেওয়া হইয়াছে, ইহার বহু দৃষ্টান্ত আছে । কি সামরিক কি অসামরিক উভয় বিভাগে অধিকাংশ উচ্চ বেতনের উচ্চ পদ ইংরেজদের অধিকৃত—যদিও ইহা মোটামুটি সত্য যে সব কাজেরই উপযুক্ত ভারতীয় আছে বা শিক্ষার হযোগ দিয়া বহু পূৰ্ব্বেই প্রস্তুত করা যাক্টত । রাষ্ট্রীয় এবং বাণিজ্য পণ্যশিল্প যানবাহনাদি আর্থিক ব্যাপারে অধীন জাতির স্বাধীনতা দাবাইয়া রাখা সাম্রাজ্যবাদের আর একটা লক্ষণ । ভারতবর্ষে এই উপসর্গের দৃষ্টাস্ত দেওয়া কি আবশ্বক ? রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা যে আমাদের নাই, তাহা ত সুস্পষ্ট। প্রধানত কংগ্রেস ত কেবল স্বাধীনতার একটু প্রতিশ্রুতি পাইবার নিমিত্ত মাথা খুড়িতেছেন। স্বাধীনতা পাওয়া ত দুরের কথা । বাণিজ্য প্রধানত কাহাদের হাতে ? যে ইস্পীরিয়্যাল কেমিক্যাল ইণ্ডাষ্ট্রিজকে বিশাল রাসায়নিক একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হইয়াছে, সেটা কোন দেশের লোকের ? এবং বৈদেশিক সামুত্রিক বাণিজ্য এবং দেশের মধ্যের জলবাহিত বাণিজ্য প্রধানত কাহাজের হাতে ? ইংরেজরা এদেশে আসিবার আগে ভারতবর্ষের রেলগাড়ী ছিল না সত্য, কিন্তু কোম্পানীর আমলের গোড়াতেও ভারতবর্ষে হাজারটা বন্দর ছিল এবং অনেক হাজার ছোট বড় জাহাজ ছিল । সেগুলা কেমন করিয়া অস্তৰ্হিত হইল তাহার ইতিহাস ডিগবী সাহেবের “ঐশ্বৰ্য্যশালী ভারত" ("Prosperous India") গ্রন্থে দ্রষ্টব্য। ভারতবর্ষের নৈসর্গিক সম্পদ ব্রিটেন যে নিজের কাজে লাগাইয়াছেন, ব্রিটেনের অসাধারণ ঐশ্বৰ্য্যই তাহার প্রমাণ । এই যে নিজের কাজে লাগাইবার ক্ষমতা, ইহা অক্ষুণ্ণ রাখিবার নিমিত্ত নূতন ( ১৯৩৫ সালের ) ভারতশাসন আইনের পঞ্চম ভাগের তৃতীয় অধ্যায়টি "( Provisions with Respect to Discriminations, &c.”) zoo হইয়াছে। পূর্ববর্তী ভারতশাসন আইনে এরূপ একটি অধ্যায় ছিল না। স্বশাসক প্রত্যেক দেশের গবন্মেটি ও লোক আপনাদের দেশ ও জাতির বাণিজ্য ও শিল্পের শ্ৰীবৃদ্ধি সাধন ও সংরক্ষণের নিমিত্ত বিদেশী অপেক্ষ স্বদেশী লোকদিগকে কোন-না-কোন সময়ে অধিকতর স্বfবধা দিয়াছে বা এখন ৪ দিতেছে । যে কোন সময়ে এরূপ করিবার ক্ষমতা ও অধিকার তাঁহাদের আছে । পাছে ভারতবর্ষের লোকেরা সামান্য কিছু স্বশাসন ক্ষমতা পাইয় ঐক্লপ কিছু করে, সেই জন্য ভারতশাসন আইনে ঐ অধ্যায়টি যুক্ত হইয়াছে । ভারতবর্ষ সম্পর্কে ব্রিটেন যে সাম্রাজ্যবাদী, তাহা নিঃসন্দেহ, এবং সে বিষয়ে স্কুল কয়েকটি প্রমাণ দিলাম । চেম্বারলেন সাহেব আপনাদের ঘাড় থেকে সাম্রাজ্যবাদের অপবাদের বোঝা নামাইয়া হিটলারের ঘাড়ে চাপাইতে চান । হিটলারের দোষ ক্ষালন বা হিটলারকে অধিকতর মসীলিপ্ত করিবার মাথাব্যথা আমাদের নাই--সে ব্যক্তি ত “স্বখাত সলিলে’ নিমজ্জমান। আমরা নিজেদের দুর্গতির বোঝাতেই অবসন্ন ও বিপন্ন ।