পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8¢९ প্রবাসী و غیره করিতেছে। ধৰ্ম্মপদে লিখিত আছে যে, বৈর দ্বারা কখনও বৈর দূর করা যায় না । প্রশ্ন হইতেছে এই যে, এই উভয় জাতীয় শাস্ত্রমতের সঙ্গতি কোথায় ? উভয় মতের সামঞ্জস্য করিতে গেলে স্বভাবতঃই মনে হয়, কোনও ব্যক্তি যখন তাহার চরম আদর্শকে লাভ করিতে চায়, তখন অহিংসাই তাহার যাত্রপথের একমাত্র সহায়। এই অহিংসা কেবলমাত্র বাহহিংসাবারণ নহে। কিন্তু এই অহিংসা একটি হিংসাবিরোধী মনোবৃত্তি। ইহা কেবলমাত্র হিংসার অভাব নহে। হিংসাবিরোধী মনোবৃত্তি বলিলে যেমন এক দিকে শান্তি বুঝায় অপর দিকে তেমনই মৈত্রী বুঝায়। মন যখন কোনও বাহ প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে বা কোনও প্রাণিবিশেষের কোনও ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিকূল হইয় দাড়ায় তখনই তাহাকে হিংসাত্মক মনোবৃত্তি বলা যায় । এমন কি যখন শীতে, উত্তাপে, পীড়ায় মন ক্ষুব্ধ হইয়া উঠে, এবং ঐ জাতীয় বাহ অভিঘাতের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু হইয়া উঠে, তখন তাহাও এক প্রকারের হিংসা । সেই জন্য বাহ প্রতিকূলতাকে বিনা বিক্ষোভে গ্রহণ করাকে তপস্যা বলে। আরিষ্টটল যে বলিয়াছেন কেবল মাত্র যুদ্ধে আততায়ী বধের মধ্যেই বীরত্বব্যঞ্জক ক্রিয়াশীলতা ও মহত্ত্ব আছে, তাহ আমার ঠিক বলির মনে হয় না, বরং ইহাই মনে হয় অনেক দুৰ্ব্বল ব্যক্তিগু যুদ্ধের উন্মাদনায় বাহিক শৌর্য্য দেখাইতে পারে ; কিন্তু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চিত্তের বিদ্বেষ ও অক্রোশকে যিনি অনায়াসেই দমন করিতে পারেন র্তাহার বীরত্বই যথার্থ বীরত্ব। এই আন্তরিক আত্মসংযম শক্তির প্রাবলো সৰ্ব্বদাই সক্রিয় হইয়া রহিয়াছে । মানুষ যখন আততায়ীর বা অপকারীর সমস্ত আক্রমণকে কেবল ষে অগ্রাহ করে তাহা নহে, পরস্তু সেই আততায়ীর প্রতি নিজের চিত্তকে স্নেহাভিষিক্ত করে তখনই সে যথার্থ অহিংসাত্ৰতে সিদ্ধিলাভ করে । এই অহিংসার দ্বারা যাহাদের প্রতি অহিংসাত্ৰত আচরিত হইল তাহাদের মনোভাবের যে পরিবর্তন হইবেই হইবে একথা নি:সংশয়রূপে বলা যায় না ; কিন্তু যিনি এই অহিংসাবৃত্তি আচরণ করিলেন, তাহার চিত্ত যে বাহিরের সৰ্ব্ববিধ আক্রমণকে ব্যর্থ করিল, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই । অহিংসার যথার্থ উদ্দেশ্য আপন অন্তবৃত্তির, আপন চিত্তের স্বাতন্ত্র্য, ব্যাপকতা ও মহিমাকে উপলব্ধি করা এবং সমস্ত দ্বন্দ্বের মধ্যে আপনাকে জয়ী করা। অহিংসা কোনও ক1র্যাসিদ্ধির উপায় নহে । অহিংসা এক দিকে যেমন হননবিরোধী শাস্তি, অপর দিকে তেমন চিত্তধাতুর ব্যাপকতায় মৈত্রীর উপলব্ধি । সেই জন্য ইহা আমাদের অস্তরের ধৰ্ম্ম । ইহা কোনও বাহ উপায় নহে। কেহ কেহ মনে করিয়া থাকেন, ধে অহিংসার দ্বারা অপরকে কোন কাৰ্য্য করাইতে বাধ্য করা যায়। কোন কোন স্থলে অহিংসা বৃত্তির দ্বারা অপর লোকের চিত্তের ধে পরিবর্তন হইতে পারে তাহ অস্বীকার করি না । কিন্তু সে সমস্ত স্থলে যাঙ্গদের চিওে তাদৃশ পরিবর্তন ঘটে, তাহারা অনেক পরিমাণে প্রেমপ্রবণ হইয়াই ছিল । কেবলমাত্র বাহ আবরণের দ্বারা তাহা ঢাকা ছিল মাত্র, কোন মহাপুরুষের অহিংসাবৃত্তি দেখিয়া তাহাদের পক্ষে সেই বাহ কুঙ্কটিকা দূর হইয়া যায়। যদি কোন স্থলে মহাত্মা গান্ধীর অহিংসাবৃত্তির দ্বারা কোন কোন লোকের ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটিয়া থাকে, তবে তাহার প্রধান কারণ এই যে, সেই সমস্ত লোকেরা কম বা বেশী স্বভাবতঃই অহিংস ছিল এবং তাঙ্গকে পূৰ্ব্ব হইতেই ভালবাসিত ও শ্রদ্ধা করিত । কিন্তু যখনই অহিংসাকে কোনও কার্য্যসিদ্ধির উপায়রপে প্রয়োগ করা হয় এবং এই অহিংসার পশ্চাতে উপবাসাদি কুচ্ছ সাধনের দ্বারা অপরের মনে সামাজিক ভীতি উৎপাদন করা হয়, তখন তাহ হিংসারই নামান্তর। অহিংসার সহিত উপবাসাদির সম্পর্ক নাই । এই জন্য উপবাসাদির সহিত অহিংসাকে কোনও উপায়ুরূপে প্রয়োগ করিলে তাহাকে যথার্থ অহিংসধৰ্ম্ম বলিয়া বর্ণনা করা যায় না । যে কোনও বহিরঙ্গ কার্য্যসিদ্ধির জন্য অহিংসাকে উপায়রূপে প্রয়োগ করিলে সেই বহিরঙ্গ কার্য্যটি —তাহা স্বদেশোদ্ধারই হোক বা স্বকার্য্যোদ্ধারক্ট হোক—এৰান হইয়া দাড়ায়, এবং আত্মার সাৰ্ব্বভৌম ধৰ্ম্মটি তাহার উপায় হইয়া দাড়ায় । আমরা পূৰ্ব্বে অহিংসার বিচার করিতে গিয়া বলিয়াছি, যে এই বৃত্তিদ্বারা আমাদের অন্তরাত্মা বাহিরের কোনও