পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86.8 প্রবাসী ১৩৪৬ ছাড়া আর কিছুই নহে। যদি কেহ বলেন অমুকে অমুক কার্য্য না করিলে আমি উপবাসী থাকিব এবং শেষ পর্য্যস্ত অনশনে প্রাণত্যাগ করিব, তবে এ নীতিকে অহিংস নীতি বলা যায় না। আত্মহিংসা মহাপাপ—তাহাতে কাহারও অধিকার নাই । যদি ইহা কৰ্ত্তব্যকৰ্ম্ম হয়, তবে সকলেই ইহা অনুষ্ঠান করিতে পারে। কিন্তু সকলে ইহা অনুষ্ঠান করিতে গেলেই এই নীতির ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়। কাহারও নিকট কিছু পাওয়া গেল না বলিয়া, যে পাইল না সে যদি অহিংস অনশনবৃত্তি আরম্ভ করে—এবং সঙ্গে সঙ্গে যে দিতে চাহে না, সেও যদি অনশনবৃত্তি আরম্ভ করে —এবং উভয়েই যদি শেষ পর্য্যস্ত উহা চালাইতে থাকে, তবে উভয়েই ধ্বংস পাইবে এবং সমস্ত দেনা-পাওনার ব্যাপারে ইহা চালাইলে শীঘ্রই সংসার ধ্বংস হইয়া যাইতে পারে। এক জন কিছু দাবি করিয়া অনশন আরম্ভ করিলে অপর এক জন তাহার অনশন ভঙ্গ করাইবার জন্য অনশন আরম্ভ করিতে পারেন। কাজেই দেখা যাইতেছে যে এ নীতি স্ব-বিরোধী। যদি বলা যায় যে এ নীতি কেবল মাত্র কোনও ব্যক্তিবিশেষের দ্বারাই অতুষ্ঠিত হইতে পারে কিন্তু সকলের দ্বারা নয় তবে সৰ্ব্বসাধারণের অমৃষ্ঠেয় নয় বলিয়া ইহাকে ব্যাপক নীতি বলা চলে না। আবার যাহারা এই নীতি ব্যবহার করিয়া সমাজে বা রাষ্ট্রে ফল দেখাইতে চাহেন তাহারা বলিয়া থাকেন যে, সকলেই এই নীতি ব্যবহার করিবেন নহিলে ইহার ফল পাওয়া যাইবে না। এই রূপ কথা বলিয়া সেই সঙ্গে ইহা বলা চলে না যে, কেবল মাত্র ব্যক্তিবিশেষেরই এই নীতি পালনের অধিকার আছে বা কোনও সময় এই নীতি পালন করা যায়, আবার কথনও যায় না বা সে সম্বন্ধে স্থির করিবার কোনও ব্যক্তিবিশেষেরই অলৌকিক ক্ষমতা আছে । তবেই দেখা যাইতেছে যে, যথার্থ অহিংসবুদ্ধির সহিত প্রচলিত অহিংসবুদ্ধির অনেক পার্থক্য । কিন্তু অহিংসবুদ্ধি যেমন উচ্চজীবনের আত্মপ্রাপ্তির কারণ নিম্নজীবনে সেইরূপ হিংসা বা স্বল্পহিংসা আত্মবিকাশের কারণ। সমস্ত প্রাণিজগৎ পরস্পর হিংসাবৃত্তির দ্বারা দ্বশ্বযুদ্ধে ক্রমশ: বিকাশ লাভ করিয়াছে। নিম্নস্তরের মতুষাদের মধ্যেও এইরূপ পরস্পরের হিংসাত্বারা বলবৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। এই হিংসাবৃত্তি আছে বলিয়াই মানুষেরা যৌথভাবে বাস করে এবং যৌথভাবে অপরের আক্রমণ প্রতিরোধ করে । যৌথভাবে থাকিতে হইলে পরস্পর নিরস্তর হিংসা করা চলে না, এই জন্য হিংসা স্বল্পহিংসায় পরিণত হয় এবং ক্রমশ: অহিংসার দিকে অগ্রসর হয়। এই জন্য দেখা যায় কোনও বিশিষ্ট জাতি বা সমাজের মধ্যে ব্যক্তিরা পরস্পর অহিংস থাকা ধৰ্ম্মসঙ্গত মনে করে, অথচ বিভিন্ন জাতির মধ্যে পরস্পরের যে সম্বন্ধ, তাহার মধ্যে অহিংস নীতি স্বীকার করে না । সমাজের মধ্যেও এমন অনেক স্থলে ঘটে, যখন যে ভাবেই কাজ করা যাক না কেন, হিংসা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না । শান্তিপর্বে অর্জন যুধিষ্ঠিরকে এই কথা বুঝাইতে গিয়া একটি দৃষ্টাস্ত দিয়াছিলেন। গোশালায় গরু বাধা আছে এবং এখানে বাঘকে হত্যা করিলে ব্যাঘ্রহিংস হইবে এবং হত্য না করিলে গোহিংসা হইবে । এই জন্য অহিংস নীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত সমাজের মধ্যেও হিংসার ভাব রহিয়াছে,—যেমন আততায়িনং হন্তাং । আক্রমণকারীকে হত্যা করিবে, কারণ তাহাকে আঘাত না করিলে আত্মহিংসা হইবে । কাজেই দেখা যাইতেছে যে, অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের জীবনে হিংসাকে বাদ দেওয়া যায় না এবং প্রাকৃতিক নিয়ম হিংসা নীতির স্বপক্ষে। উন্নত স্তরের ব্যক্তিবিশেষের জীবনের উচ্চপথ উন্মুক্ত করিতে একান্ত অহিংসার যেমন প্রয়োজন তেমনই নিম্নস্তরের জীবন গড়িয়া উঠিবার পক্ষে অহিংসাই প্রবল বাধা । হিংস হইতে যে অহিংসাটির উৎপত্তি ঘটে, তাহার রহস্যটি অভিনিবেশযোগ্য। নিম্নস্তরের জীবনের পক্ষে হিংসাত্বারা বলসঞ্চয় হয় সন্দেহ নাই, কিন্তু উচ্চস্তরের জীবনের পক্ষে হিংসাই মানুষকে দুর্বল ও অক্ষম করে। সমাজের মধ্যে যদি এক ব্যক্তি অপরকে প্রবলভাবে হিংসা করে, তবে সমাজ তাহার দণ্ডবিধান করে । সমাজের সংহত শক্তির নিকট ব্যক্তির শক্তি অক্ষম । কাজেই হিংসাবৃত্তির পরিচালনাম্বারা কেহ কোনও সুবিধা করিয়া দিতে পারে না । সমাজবিধানের ফলে হিংসাই আপন