পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ আমাদের ধমশাস্ত্রে কল্যাণস্বরূপ বিধাতাকে প্রশ্রয়লোলুপ শিশুর মতো দয়াময় য’লে খর্ব করে নি। বলেছে রুদ্র, যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যং । বলেছে, তিনি রুত্ৰ, সেই রুদ্রের যে দাক্ষিণ্য, সে বঁাচায় যেখানে আছে সত্য, আছে বীর্য, আছে পবিত্রত, আছে আপন মানবমহিমায় দৃঢ় বিশ্বাস। সে রুদ্র বলহীনকে ক্ষমা করেন না । মানুষের সুর চেয়ে বড়ো প্রার্থনা, অসত্য থেকে সত্যে, ‘অন্ধকার থেকে জ্যোতিতে, মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তীর্ণ হবার প্রার্থনা । এ দুর্বলের প্রার্থন নয়, এ মামুষের সব শেষের সার্থকতা, অতি কঠিন সাধনার সিদ্ধি। এ প্রার্থনায় আছে রুদ্রের প্রবর্তন মানুষের অন্তর থেকে । এ সহজ নয়। সত্যের পথ দুর্গম পথ । আমি বিস্মিত হই, লজ্জিত হই, যখন আমাদের সাহিত্যে কখনো কখনো দেখি দুর্বলের অভিমান, সাচুনাসিক ক্রোধে বিধাতাকে শাস্তি দেবার হাস্যকর ভঙ্গীতে বলা যে তুমি নেই, কেননা আমি দুঃখ পেয়েছি এবং দেখেছি অন্যকে দুঃখ পেতে। ভুলে যাই আমাদের মস্ত্রে আছে—বরেণ্যং ভর্গে দেবস্ত ধীমহি, সেই বরণীয় দেবতার তেজকে ধ্যান করি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ— যিনি আমাদের বুদ্ধি প্রেরণ করছেন । মন্ত্রগুরু কিন্তু বলেন নি যিনি কোলে ক’রে অক্ষমকে লালন করছেন। যখনি বলা হয়েছে তিনি আমাদের বুদ্ধি পাঠিয়েছেন তখনি বলা হয়েছে আমাদের নির্ভর আমাদের নিজেরই পরে। ঐখানে নিমম শাসনের নিষেধ আছে কাদতে যেতে তার দরজায়। এখানে তিনি নিজেকে সরিয়ে রেখে দেন। তিনি সদাসশস্ক মাতার মতো নিজেকে সর্বদা প্রত্যক্ষ করেন নি ব'লেই আমি তাকে প্রণাম করি । তিনি আমার মনুষ্যত্বকে শ্রদ্ধার যোগ্য ক’রে পাঠিয়েছেন, আমাকেই দায়িত্বের গৌরব দিয়েছেন, দায়িত্ব তিনি নিজের হাতে নেন নি। কাপুরুষকে তিনি হাতে ধরে চালিয়ে বেড়ান না, এমন কি, মৃত্যুর অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে তাকে নিৰ্ভয়ে বঁাচবার সাধনায় ‘প্রবৃত্ত করিয়েছেন। তাই সংসারে এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখা যায় ষে যারা স্বয়ং ঈশ্বরকেই আপন বিশ্বাসের বাইরে রাখে অথচ যথার্থ সত্যভাবে আপন বুদ্ধির সাধনা অন্তদেবত্তা ৪৬৭ করে তারাই যথার্থ আস্তিকতার ফল পেয়েছে। অর্থাৎ তারাই সকল বিষয়ে চরিতার্থ হয়েছে সংসারে, রোগতাপঃঅজ্ঞতা অপটুতার জন্তে তারা হতো দিতে যায় নি দেবতার } দ্বারে, মানত করে নি, তার মেনেছে বুদ্ধিরূপে দেবতাকে ষে দেবত। সরস্বতী নয় গণেশ নয়, ষে দেবতা মামুষের মনের মধ্যে আত্মশক্তিরূপে তাকে ধন্ত করেছে, তাকে বড়ো করেছে, তাকে নিয়ে চলেছে অমৃতের পথে। ক্যানসার রোগের এখনো তার প্রতিকার খুজে পেল না ; কিন্তু তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে আপন গুহাহিতং গহবরেষ্ঠং বুদ্ধিশক্তিকে অশ্রদ্ধা করে নি, বলছে, ধীমহি ধিয়ো যো ন প্রচোয়াং, বুদ্ধিরূপে আমার মধ্যে র্যার আবির্ভাব বুদ্ধিযোগে তারই ধ্যান ক’রে এক দিন আমি আরোগ্যের পথ খুজে পাব । কিন্তু ওদিকে কেমন শিশুর মতে কান্না ও কী স্পধর্ণ ক’রে বলা আমি মানব না ! কে বলেছে তাকে মানতে । তুমি না মানার দ্বারা তাকে থব করবে! বিশেষ নামে রূপে র্তাকে যে মানে নি তাকে তো তিনি কোনো শাস্তি দেন না। কিন্তু শাস্তি দেন তাকেই যে আপন বুদ্ধিকে না মেনে র্তার সত্য সন্ধানকে ব্যর্থ করেছে । এটা কি ভেবে দেখে নি পশুপক্ষী অযাচিত ভাবে পেয়েছে আপন গায়ের কাপড় । মামুষের নগ্নতায় বিধাতা দিয়েছেন পশুপাখির চেয়ে বড়ো সম্মান, কেননা সেই সঙ্গে সৃষ্টিকতা নিজের সঙ্গে তার যোগ সাধন করেছেন ধিয়ে যো ন প্রচোদয়াং । কাপড়ের অভাবে যখন দুঃখ পাই তখন এই কথাই কি স্মরণ করবার নয় । এত দুঃখ অন্য কোনো জীবজন্তু পায় না, কেননা প্রত্যেক দুঃখের মধ্যে আমাদের প্রতি ডাক পাড়েন ধিয়ে যে ন: প্রচোদয়াং । এই ডাক এক জনের প্রতি নয়, সমস্ত জাতির প্রতি । যারা সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে পুরুৎ পাণ্ডার দোহাই পাড়তে ছোটে, তারা নিজের ভিতরকার দেবতাকে লাঞ্ছিত করে বাইরে মরে ব্যর্থ হয়ে পদে পদে । কিন্তু ষে ধী আমাদের অস্তরে আসছে সে কেবল জ্ঞানের শ্রেণীভুক্ত নয়, তার আর এক রূপ আছে, সে তার শ্রেয়োরূপ, যাকে বলে শুভবুদ্ধি স নো বুদ্ধা শুভরা