পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাখ অবতরণ করিলাম। আমাদের দুই জনের সঙ্গে দুইট ব্যাগ ছিল, তাহাতে বস্ত্র ও গামোছা প্রভৃতি লইয়াছিলাম। স্টেশনের গেটে টিকিট দিয়া বাহিরে আসিয়া শাস্তিনিকেতন হইতে কোন গাড়ী আসিয়াছে কিনা অনুসন্ধান করিতেছিলাম এমন সময় একটি ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনারা কোথায় যাইবেন ?” আমরা শাস্তিনিকেতন যাইব শুনিয়া তিনি বলিলেন, “আমিও শান্তিনিকেতনেই যাইব, আমায় সঙ্গে আমুন, ঐ যে শাস্তিনিকেতনের গাড়ী।” এই বলিয়া আমাদিগকে লষ্টয়া একখানা বুলক্‌ ট্রেনের নিকট গমন করিলেন । বুলকু ট্রেন গো-বাহিত শকট তবে তাহা দরমা-আচ্ছাদিত নহে, ঘোড়ার গাড়ীর মত অথবা শিবিকায় মত তক্তাদ্বারা নিৰ্ম্মিত, ভিতরে চার-পাচ জন আরোহী অনায়াসে বসিতে পারে। গাড়ীর তলায় ঘোড়ার গাড়ীর মত স্পিং থাকাতে অসমতল পথে আরোহীকে ধাক্কা খাইতে হয় না | আমরা তিন জনে গাড়ীতে উঠিয়া বসিলে গাড়ী ছাড়িয়া দিল । আমাদের সহযাত্রী সেই ভদ্রলোকটি বলিলেন যে, তিনি কলিকাতা হইতে আমাদের সহিত একই ট্রেনে অসিয়াছেন, তিনি রবীন্দ্রবাবুর জমিদারীর এক জন কৰ্ম্মচারী ; রবীন্দ্রবাবু শান্তিনিকেতনে থাকিলে হ, হার কৰ্ম্মচারীদিগকে মাঝে মাঝে শান্তিনিকেতনে আসিতে হয় । তিনি স্টেশন হইতে পদব্রজেই শাস্তিনিকেতনে যাইতেন, আমাদের সহিত দেখা হওয়াতে র্তাহাকে আর চলিতে হঠল না, আমাদের জন্য প্রেরিত গাড়ীতেই তিনি আমাদের সঙ্গে একত্রে গমন করিলেন । স্টেশন হইতে শাস্তিনিকেতন বোধ হয় এক ক্রোশ হইবে। আমাদের সহযাত্রী সেই ভদ্রলোক বলিলেন যে, শান্তিনিকেতন যে গ্রামের নিকট অবস্থিত, সেই গ্রামের নাম ভুবনডাঙা । প্রায় আধ ঘণ্টার পর আমরা ভুবনডাঙা অতিক্রম করিয়া থামের উত্তর দিকে মাঠে উপস্থিত হইলে, সেই ভদ্রলোক সম্মুখে অদূরে একটি দ্বিভল সুন্দর আটালিকা দেখাইয়া বলিলেন, “ঐ শান্তিনিকেতন ।” একট। বড় জলাশয়ের পূর্ব ও উত্তর পার্শ্ব দিয়া আমি দর গ! উী শান্তিনিকেতনের দক্ষিণ দিকের विश्वङीब्रउँौद्र अडूब्र ©ᎼᎼ ফটকে উপস্থিত হইল। আমরা গাড়ী হইতে অবতরণ করিবামাত্র এক জন. দ্বারবান গাড়ীর ভিতর হইতে আমাদের ব্যাগ দুইটি লইয়া আমাদিগকে সেই অট্টালিকাতে লইয়া গেল। স্টেশন হইতে যে-ভদ্রলোকটি আমাদের সঙ্গে আসিয়াছিলেন তিনি আমাদের সঙ্গে না গিয়া অন্য পথে অট্টালিকার পশ্চিম দিকে চলিয়া গেলেন। শান্তিনিকেতন একটি প্রকাগু সুন্দর বাগান, বাগানে নানাবিধ ফলকর বৃক্ষ ও ফুলের গাছ, বাগানের ঠিক মধ্যস্থলে অট্টালিকা—অট্টালিকা হইতে দক্ষিণ দিকের ফটক পৰ্য্যস্ত একটি সুন্দর, সরল, বিস্তুত পথ। পরে দেখিয়াছিলাম যে, বাগানের উত্তর দিকেও ঐরূপ একটি ফটক ও ফটক পর্য্যস্ত পথ আছে। উত্তর দিকের ঐ পথের দুই পাশ্বে শ্রেণীবদ্ধ আমলকী গাছ । বাগানের পশ্চিম ও উত্তর দিকে বিস্তৃত মাঠ, নিকটে গ্রাম নাই। পূৰ্ব্ব দিকে কিছু দূরে রেলওয়ে লাইন, কিন্তু শাস্তিনিকেতন হইতে উহা দৃষ্টিগোচর হয় না, কারণ শান্তিনিকেতন উচ্চভূমিতে অবস্থিত, রেলপথ সেই উচ্চভূমি খনন করিয়া প্রায় ২০ হাত নীচে দিয়৷ চলিয়। গিয়াছে । ঐ অঞ্চলের ভূমি নিম্নবঙ্গের ভূমির মত সমতল নহে, উচু নীচু ঢেউখেলান। শাস্তিনিকেতনের অগ্নিকোণে, যে-জলাশয়ের ধার দিয়া আমাদের গাড়ী আসিয়াছিল, সেই জলাশয়ের দক্ষিণে ভূবনডাঙা নামক গ্রাম। এই জলাশয়টিকে বাধ বলে। ক্রমনিম্ন ভূমির নিম্ন দিকে বাধ বাধিয়া জলাশয় করা হইয়াছে। এইরূপ জলাশয়কেই বীরভূম জেলাতে বাধ বলে । আমরা দ্বারবানের সঙ্গে আটালিকায় নিম্নতলস্থ হল ঘরে প্রবেশ করিলে দ্বারবান একটা টেবিলের উপর বাগ দুইটি রাখিয়া চলিয়া যাইবামাত্র অন্য দ্বার দিয়া এক জন বাঙালী ভূত্য হলঘরে প্রবেশ করিয়া আমাদিগকে সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করিল যে আমরা তামাক খাই কি না ? রাজারাম বাৰু তামাক খাইতেন, তিনি ধূমপানের ইচ্ছা জানাইলে ভৃত্য বলিল—ব্রাহ্মণের হুক ? রাজারাম বাৰু সন্মতি প্রকাশ করিলে ভূত প্রস্থান করিল এবং অনতিবিলম্বে তামাক সাজিয়া আনিয়া রাজারাম বাবুর হাতে ছক দিয়া বলিল, আপনারা কুয়ার জলে স্নান করিবেন, না বাধে স্নান