পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ তৃণাচ্ছাদিত কুটীর রহিয়াছে। একটা কুটীরের দাওয়াতে উপাধ্যায় মহাশয়কে দেখিয়া আমরা সেই দিকে অগ্রসর হইলে তিনি হাসিমুখে আমাদের কাছে আসিয়া বলিলেন, “আমি সন্ন্যাসী, তাই লোকালয়ে বাস না করিয়া এই শালবনে ফুটারে একাকী বাস করি, আর ঐ কুটীরে শ্ৰীযুক্ত রেবাচাদ তাহার ভাইকে লইয়া থাকেন।” শীৰ্ব্বক্ত রেবাচাদের ছোট ভাই ব্রহ্মচৰ্য্যাশ্রমের ছাত্র, বয়স দশ-এগার বৎসর হইবে। আমরা যে ছোট ছোট ঝোপ দেখিয়াছিলাম, সেগুলি শালগাছের চারা, অধিকাংশ গাছই কোমর-সমান উচ্চ, দুইরিটা তিন হাত সাড়ে তিন হতে উচ্চ হইয়াছে। উপাধ্যায় শিয় বলিলেন যে, রবীন্দ্রবাবু এইখানে একটা শালবন তৈয়ারি করিতেছেন। ঐ সকল শালের চারা দুর হইতে আনাইয়া রোপণ করা হইয়াছে। সে শালবন এখনও আছে কি না জানি না ; যদি থাকে, তবে এত দিনে গাছগুলি নিশ্চয়ই খুব বড় হইয়াছে সন্দেহ নাই । আমরা ভুবনডাঙা গ্রামটি প্রদক্ষিণ করিয়া আবার যখন বাধের নিকটে আসিলাম তখন ছাত্রেরা বাধে স্নান করিতেছিল, ছোট ছোট ছেলেদের জলাশয়ে স্বান করিবার সময় এক জন শিক্ষক তাহাদের সঙ্গে থাকিতেন, সেদিন জগদানন্দবা কে ছাত্রদের সহিত স্নান করিতে দেখিলাম । উপাধ্যায় মহাশয় ও আমাদের সঙ্গে বেড়াইতেছিলেন, বেড়াইবার সময় তাহার নিকট হইতে শাস্তিনিকেতন ও বিদ্যালয় সম্বন্ধে অনেক তথ্য অবগত হইলাম। তিনি বলিলেন যে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় নির্জনে ঈশ্বর-চিন্তায় কালযাপনের জন্য প্রচুর অর্থব্যয়ে কলিকাতা হইতে বহুদূরে নির্জন স্থানে এই শাস্তিনিকেতন স্থাপন করিয়াছিলেন। এখানে যে-কোন ভদ্রলোক আসিয়া আতিথ্য গ্রহণ করিতে পারেন । শাস্তিনিকেতনের সীমার মধ্যে মাদক দ্রব্য সেবন এবং মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। স্কুলের ছাত্রদিগের জন্য সপ্তাহে দুই-তিন দিন মাংস খাইতে দেওয়া হয়, সেই জন্য রবীন্দ্রবাৰু স্কুলগৃহের অব্যবহিত পশ্চিমে শাস্তিনিকেতনের সীমার বাহিরে ছাত্রদের জন্য রন্ধনাগার بن بن حسيد ملاونة विश्वङाब्रडौङ्ग अडूत्र 636. ও ভোজনাগার নির্মাণ করাইয়াছেন। ছাত্রেরা সেইখানেই ভোজন করে, তবে মধ্যে মধ্যে শাস্তিনিকেতনে তাঙ্গদের গুরুদেবের সঙ্গেও আহার করে। ব্রহ্মচৰ্য্যাশ্রমের ছাত্রগণ রবীন্দ্রবাবুকে গুরুদেব বলে । উপাধ্যায় মহাশয় বলিলেন যে, স্নানের পর ছাত্রগণ মন্দিরে গিয়া রবীন্দ্রবাবুর সঙ্গে উপাসনা করে, তাহার পর স্কুলে আসিয়া জলযোগের পর পড়াশুনা করে । বেলা সাতটার সময় ছাত্রেরা শিক্ষকগণের সহিত শ্রেণীবদ্ধ ভাবে উপাসনা-মন্দিরে গমন করিল। আমরা অট্টালিকায় প্রবেশ করিয়া দেখিলাম যে আট-দশ জন ভদ্রলোক সেখানে উপস্থিত হইয়াছেন, তন্মধ্যে এক জন রাজারাম বাবুকে দেখিয়া তাহার নিকটে আসিয়া চরণস্পর্শ করিয়া প্রণাম করিলে রাজারাম বাবু বলিলেন, “আমি আপনাকে ঠিক চিনিতে পারিতেছি না।” সেই ভদ্রলোক বলিলেন, “কলিকাতার সঙ্গীত-বিদ্যালয়ে আমি আপনার ছাত্র ছিলাম। আপনি আমাকে বিস্মৃত হইতে পারেন, কিন্তু আমি আমার ওস্তাদজীকে কি ভুলিতে পারি ?” সেই ভদ্রলোকের বয়স তখন বোধ হয় পঞ্চাশ বৎসর হইবে । তিনি বলিলেন যে, তাহার কলিকাতা হইতে রাত্রির ট্রেনে যাত্রা করিয়া ভোরবেলা বোলপুর স্টেশনে অবতরণ পূৰ্ব্বক পদব্রজে আসিয়াছেন। র্তাহারা কয় জন আসিবেন এবং কোন ট্রেনে আসিবেন তাহার স্থিরতা ছিল না বলিয়া পূৰ্ব্বে কবিবরকে সংবাদ দিতে পারেন নাই । মন্দিরে শঙ্খধ্বনি ( আমার ঠিক মনে নাই শঙ্খধ্বনি কি ঘণ্টাধ্বনি, তবে শঙ্খধ্বনি বলিয়াই মনে হইতেছে ) শ্রবণ করিয়া আমরা সকলে মন্দিরে গমন করিলাম । মন্দিরটি একটি প্রকাগু হল, উহার প্রাচীর ইষ্টকের পরিবর্তে শাশীর মত কাচে নিৰ্ম্মিত। হলের উত্তর, পূৰ্ব্ব ও দক্ষিণ দিকে সারি সারি কুশাসন পাতা, বোধ হয় চল্লিশ কি পঞ্চাশখানা আসন ছিল । মন্দিরের ছাদের উপর এক পাশ্বে রথের চুড়ার মত একটি অতি উচ্চ লৌহনিৰ্ম্মিত চুড়া আছে। রেলের গাড়ী ভূপৃষ্ঠ হইতে অনেক গভীর খাদের মধ্য দিয়া গিয়াছে বলিয়া, ট্রেনের যাত্রীরা গাড়ী হইতে শান্তিনিকেতনের অট্টালিকা দেখিতে