পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

夺博可 সময়টিতে যেন কলসি কাখে করে রায়পুকুরে জল আনতে যায়।” মা ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, “বলব।” কালিচরণ বলিল, “বলব নয়, একটু অভ্যাস করে নাও। ধর—,” বলিয়া সে উঠিয়া কয়েক পা চলিয়া আসিয়া বলিল, “এই এতদূর যখন আসব, বাড়ীর বাইরে পা দিইদিই, তখনই তুমি ডাকবে—তার আগে নয়। আর বাইরে পা দেবার পরই দেখব ও রায়পুকুরে জল আনতে চলেছে।” মা চিন্তিত মুখে বলিলেন, “তা কি করে হবে! বউ মাচুর্য, কতক্ষণ কলসী কাখে করে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবে ! লোকে বলবে কি ?” —আমি কি পথে দাড়াতেই বলছি। ভট্চাজদের প'ড়ো বাড়ীটার মধ্যে ভাঙা পাচিল ঘেষে দাড়াবে। ঠিক যেমনি তুমি আমায় পেছু ডাকবে, ও অমনি কলসী কাকে আস্তে আস্তে পুকুর পানে যাবে। বুঝলে না ? আচ্ছা দাড়াও, কলসী একটা দেখি ।” মা বলিলেন, “এই তিনপোর বেলা হ’ল, আগে থেয়ে নে, তার পর ওসব করিস এখন ।” —ন, ন! । কোথায় তোমার বউ, ডাক । এক বার রিহাসে ল দিয়ে নেওয়া যাক । মা আর কি করেন, রান্নাঘরের পানে চাহিয়া হঁাকিলেন, “অ বেীমা, এক বার বেরিয়ে এস তো । দুয়োরে শেকলটা তুলে দিয়ে।” রিহাসেল আরম্ভ হইল । মাকে প্রণাম করিয়া পা মাপিয়া মাপিয়া কালিচরণ ‘দুর্গা’ ‘দুর্গ বলিয়া দুয়ারের দিকে অগ্রসর হইল। দুয়ারের চৌকাঠ পার হইয় গেলেও মা ডাকেন না দেখিয়া রাগে দাত মুখ খি চাইয়া কালিচরণ বলিল, “ডাকলে না ? ডাকলে না ? না, বুড়ো হয়ে মরতে চললে তবু যদি তোমার আঙ্কেল হ’ল ।” মা বলিলেন, “কি করি বল, রান্নাঘরের জানলা দিয়ে একটা বেড়াল ঢুকল। বউম যদি তরকারিগুলো আহ্বল রেখে থাকে—সব নৈরেকার করে দেবে।” —চুলোয় যাক তোমার তরকারি, ডাক। সগর্জনে কালিচরণ বলিল । শুভযাত্রার ফলাফল । /* ७** রান্নাঘরে যেন ঢুকৃঢাক শব্দ হইতেছে। ব্যঞ্জনলোড়ী বিধবা মায়ের মন ঐ দিকেই পড়িয়া আছে। কয়েক বার তাড়া খাইবার পর মা পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করিলেন । বউ তো এক বারের চেষ্টাতেই পাস হইয়া গেল । হাজার হউক বয়স কম, বুদ্ধিমতীও বটে। কলসী কাখে লইয়া উহার মুদু-মন্থর চলনভঙ্গিটি দেখিলেই ধূসর মনে সবুজের ঘন ছায়াপাত হইয়া থাকে। সে চলনকে এক কথায়, কবিত্ব করিয়া বলা যায়, অনবদ্য আটাশ তারিখে, এত নিখুত ভাবে মহলা দেওয়া সত্ত্বেও, কালিচরণ শুভ যাত্রা করিতে পারিল না । দইয়ের ফোট কপালে পরিয়া, সিদ্ধির কুটা দাতে কাটিয়া, দেবতার প্রসাদী নিৰ্ম্মাল্য আভ্রাণ করিয়া ও মাথায় রাখিয়া, মায়ের পায়ে প্রণাম করিয়া, দেওয়াল-বিলম্বিত তুণ্ডিলত সিদ্ধিদাতাকে চক্ষু চাহিয়া ও চক্ষু বুজিয়া উত্তমরূপে নিরীক্ষণ ও ধ্যান করিয়া, নিজের ও মায়ের ‘দুর্গা’ ধ্বনির মধ্যে মাপিয়া মাপিয়া পা ফেলিয়া চৌকাঠের দিকে যেমন কালিচরণ অগ্রসর হইয়াছে, অমনই মায়ের পিছু ডাকিবার শুভ মুহূৰ্ত্তের পূৰ্ব্বক্ষণেই দাওয়ায় মুড়ি-ভক্ষণরত মেয়েট ‘ফ্যাচ’ করিয়া হাচিয়া ফেলিল। যেমন ইাচ–সঙ্গে সঙ্গে কালিচরণও স্থাণুবং দাড়াইয়া পড়িল । মা বলিলেন, “ও কিছু নয়, সর্দির ইচি। ক-দিন থেকে জল ঘেটে ঘেঁটে মেয়েট —” কালিচরণ অবরুদ্ধ ক্রোধে ফাটিয়া পড়িল । চীৎকার করিয়। বলিল, “সন্দির ইচি ! হাচি যারই হোক, জান না : হাচি টিকটিকি বাধা তিন না শোনে গাধা । আমি কি-” মা বলিলেন, “যটি ! ষাট ! আমি কি তাই বলছি।” কালিচরণ চীৎকার করিয়াই চলিল, “হাচি ! কেন হাচি হয় ? কেন ওকে জল ঘাটতে দেওয়া হয় ? কেন অতবড় ধাড়ি মেয়ে জল ঘাটে ?” বলিতে বলিতে দাওয়ার উপর সশব্দে ব্যাগ ফেলিয়া কালিচরণ ঠাস করিয়া সজোরে মেয়ের গালে একটি চড় কসাইয়া দিল । প্রথম বৃষ্টিবিন্দুস্পর্শে ছাগী যেমন কর্ণভেদী স্বরে চীৎকার করিয়া উঠে মেয়েটি তেমনই চীৎকারে দাওয়া তথা