পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

夺t哥可 পূর্ণের সাধনা W8) সর্বত্র দেখেন, “ন হিনস্তাত্মনাত্মানং” তিনি নিজের দ্বারা নিজেকে আঘাত করেন না। যুরোপে যুধ্যমান জাতির প্রত্যেকে অন্তকে মারছি মনে স্থির করেছে, কিন্তু মারছে সে নিজেকে। যে পক্ষেরই জিত হোক এই নিজেকে নিজে আঘাত থামবে না। পরকে মারার আত্মঘাত বার-বার জেগে উঠবে। এদিকে ভারতবর্ষে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে অসম্মানের আঘাত ক’রে নিজের প্রতি আঘাতকে চিরস্থায়ী ক’রে রাখছে । আমরা “আত্মহনো জনাঃ” আমরা দীর্ঘকাল তমসাবৃত লোকে রয়ে গেলুম আত্মঘাতের পাপে । আশ্চর্যের এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, ভারতের কল্যাণীবাণী ঐক্যবাণী সকলের চেয়ে অশ্রদ্ধা পেয়েছে ভারতবর্ষে । আমাদের শাস্ত্রে যোগের কথা বারংবার পাই । কী পতঞ্জলি কী বৌদ্ধশাস্ত্র এই যোগের পথ নির্দেশ করেছেন করুণায় মৈত্রীতে—অর্থাৎ এই যোগ সকলের সঙ্গে প্রেমের যোগে । প্রেমের সাধনা তো শুন্যতার সাধন হ’তেই পারে না। এ হ’ল সকলের মধ্যে ঐক্য উপলব্ধির সাধন । মাচুধকৈ ছেড়ে কোনো দেবতাকে পাওয়ার কথা এ নয়, এ নয় পৃথিবীকে ছেড়ে দিয়ে স্বর্গের দিকে তাকানো । এ পরিমার্থিক বটে, কেন না এ স্বাথিক নয়, এর পরম অর্থ সকল মাতুষকে মিলিয়ে নিয়ে । মামুষের এই আত্মপ্রকাশের যোগসাধন। কোনো একটা বিশেষ অমুষ্ঠানের অস্তগত নয়, এ আমাদের প্রতিদিনের । এ তপস্য। অরণ্যের নয়, গিরিকন্দরের নয়, এ নয় মামুষের সঙ্গবর্জনের তপস্যা । এ যে সহজ স্বাভাবিক মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার অধ্যবসায় । এই অধ্যবসায়ে বিশ্বনিয়স্তার সঙ্গে যোগে বাধা দেয় জ্ঞানের মুঢ়তায়, আর বিশ্বাত্মার সঙ্গে যোগে বাধা দেয় প্রেমের বিকারে, কাম ক্রোধ লোভে, অহংকারে ঈর্ষায় । এই দুই যোগের দ্বারা মামুষের সম্পূর্ণতা, তার প্রতিমুহূতের প্রকাশে জ্ঞানে আর প্রেমে । এই জীবনব্যাপী নিত্য যোগসাধনার বাধা যে-সকল রিপু তাদের জটিল শিকড় আমাদের স্বভাবের অনেক গভীরে চলে গেছে । তার কতক থাকে প্রত্যক্ষে, অপ্রত্যক্ষে থাকে অনেকখানি । তাদের আঘাত অনেক সময়ে অতর্কিত। তাই শুভসংকল্পে ভুল হয়, অন্যমনস্ক হই, হু চট থাই পদে পদে। মনের আলস্তে হার মেনে অনেক সময়ে হাল ছেড়ে দিই। সেই পরাভবের সময় কী ক’রে নিজেকে চেতিয়ে তুলক সেই প্রশ্ন মনে উদ্বেগ আনে । আমি জানি নে কোনো বাহ প্রক্রিয়া, জানি নে এক জাল থেকে মনকে টানতে গিয়ে আর কোনো অস্বাভাবিক জালে তাকে জড়িয়ে রাখার কী উপায় । আমি কেবল জানি মনের উপর বাণীর প্রভাব । কেন না বাণী মনের একাস্ত আপন জিনিস। যে-বাণী মানুষের সার্থক উপলব্ধির বাণী, প্রাণধম আছে তাতে, তাই সে মনের সঙ্গে মিলিত হ’তে পারে স্বভাবতই । তেমন বাণী আমরা পেয়েছি আমাদের ঋষিদের কাছ থেকে, তাদের পরিপূর্ণ জীবনের ফলস্বরূপে। এ বাণী আমরা নির্বাচন ক’রে নিতে পারি নিজের স্বভাবের বিশেষ প্রবর্তনা থেকে । যে গুরু আমাদের অস্তরের বেদীতে আছেন তিনিই এই বাণীযোগে আমাদের সত্যমন্ত্র দিতে পারেন। কোনো এক শুভক্ষণে আমি পেয়েছি আমার জীবনের মন্ত্র শাস্তম্ শিবম্ অদ্বৈতম। আমি চেষ্টা করি এই মন্ত্র আমার চিত্তের কুহরে ধ্বনিত ক’রে রাখতে। অশাস্তি বাইরে উদ্যত হয়ে ওঠে, মনকে বলতে বলি, শাস্তম্। অশান্তি যতই উগ্ৰমূৰ্ত্তি ধরে আস্থক এক দিন মরীচিকার মতো তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রলয় আপনিই আপনাকে লয় করতে করতে চলে, বাকি থাকে শাস্তম্। শাস্তির সেই চরম জয়পতাকাই নিখিল জগতের চুড়ায়—সেই শাস্তই সত্য, নইলে বিশ্ব যেত বিলীন হয়ে । ছোটো ছোটো বিলীয়মান সীমার মধ্যেই বড়ে ক’রে দেখি অশিবকে—বিরাটের মধ্যে সে না হয়ে যায়। যত কিছু ভাগ বিভাগ বিচ্ছেদও তাই । ছোটো ছোটো সংসার সীমার মধ্যে তারা এসে পড়ে নানা অশিব রূপ ধ’রে । অতএব অশাস্তি ও অমঙ্গলের সঙ্গে আমাদের নিত্যসংঘাত ঘটেই । তাদের সম্পৰ্কীয় সমস্যা নিয়ে সংসারে সর্বদাই আমাদের কতব্য স্থির করতে হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সমস্তকে যদি বিরাটের ভূমিকায় দেখি তাহলে মনকে কিছুতে অভিভূত করতে পারে না। তাহলে বিহবল হই নে দুর্বলতায় । তাহলে সমস্ত কত ব্যকে । ধৈর্যের সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারি, ক্ষমা সহজ হয়, উদ্বেগ