পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੋਂ আমার শিক্ষার ভার বড়দাদার হাতে থাকিত তবে আরও অনেক বেশি স্বাধীনতা পাইতাম, অনেক দুঃখদুৰ্গতি এড়াইতে পারিতাম, এবং আরও পরিপূর্ণতর শিক্ষা পাইবার সুযোগ ঘটিত ।” প্রাচীন কালের কথা বলিতে দ্বিজেন্দ্রনাথ শিশুর মতই আনন্দ পাইতেন । র্তাহার কাছে শুনিয়াছি আঁহাদের জোড়াসাঁকোর বাড়ীতে পূৰ্ব্বে নৌকায় যাওয়া যাইত। চিৎপুর রোডের ধার দিয়া নৌকার মত খাল ছিল। র্তাহীদের বাড়ীর কাছে দুইটি শাকো থাকায় ঐ পাড়ার নাম হয় জোড়াসাকে । তাঁহাদের বাড়ীতে বৎসরের ধান নৌকাতে আসিয়া গোলাবাড়ীতে থাকিত, ঢেকিশালে চাউল হইত। কলের জল ছিল না। সমুদ্রের নোনা জল আসিবার পূৰ্ব্বে জালা জালা গঙ্গাজল নৌক৷ করিয়া আনিয়া একটি বৃহৎ অন্ধকার ঘরে রাখা হইত। সারা বৎসর সেই জল ব্যবহৃত হইত। খুব পরিষ্কার শুচি হইয়া সেই জল ঐ ঘর হইতে বাহির করিতে হইত। সেই ঘরট ছিল একটা রহস্যময় স্থান । বাড়ীতে আত্মীয়স্বজনের বাহুল্য, কুটুম্ববহুল সংসারে ক্রিয়াকৰ্ম্মে প্রাচীন-কালোচিত আচার-ব্যবহার ; এই সব কথায় তিনি যেন সেই যুগের স্বপ্ন দেখিতেন । বৰ্ত্তমান কলিকাতার খুব কম খবর তিনি জানিতেন । এক দিন জিজ্ঞাসা করিলেন, “আচ্ছা, হেদোর কাছ দিয়া চিৎপুর পথের সমাস্তরালে যে পথটি হইয়াছিল তাকার দুই দিকে তখন ততটা বসতি হয় নাই। হয়তো এতদিনে হইয়া থাকিবে ।” তিনি খবর রাখতেন না যে কর্ণওয়ালিস স্ত্রীটের পরও বহু সমস্তেরাল পথ রচিত হইয়াছে, তবু স্থানাভাবে কলিকাতাকে ক্রমাগত উত্তর হইতে দক্ষিণে সরিতে হইয়াছে । কলিকাতায় যখন ঘোড়ার গাড়ীও বিশেষ হয় নাই, ছাতাওয়ালার ছাত ধরিয়া লোককে রৌদ্র বৃষ্টিতে লইয়া যাইত, তখনকার কথাও তিনি উৎসাহের সহিত বলিতেন । যাহাদের জীবন কম বহুল র্তাঙ্গদের জীবনচরিতে বর্ণনযোগ্য নানাবিধ বৈচিত্র্য পাওয়া যায়। দ্বিজেন্দ্রনাথ সেই শ্রেণীর মাচুর্য নহেন । তাহার চরিত-কথার মধ্যে নানাবিধ বর্ণনীয় বিচিত্র ঘটনা পাইবার উপায় নাই । তিনি এক জন ধ্যানপরায়ণ গভীর চিস্তাশীল মাছুয{ কাজেই তাহার দিনচৰ্য্যা জানিতে অনেকের ঔৎসুক্য থাকিতে পারে মনে করিয়া তাহার বহুদিনের পুরাতন ভূত্য মুনীশ্বরকে ডাকাইয়া মানিয়া তাহার কাছে অনেক কথা শুনিলাম। মুনীশ্বর বলিল, আমি বহু দিন এই বাড়ীতে আছি । মহর্ধিদেব জীবিত থাকিতেই যখন আমার খুব অল্প বয়স তখন আমি তাহদের বাড়ীতে বাহিরের কাজে আসিয়া যোগ দেই। বড়বাবু (দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এই নামেই সাধারণত পরিচিত ছিলেন ) দুই-এক বার আমার সেবা পাইয়া খুশী হন এবং আমাকে তাহার কাজে ডাকিয় লন । মহুধি জীবিত থাকিতেই তিনি অনেক সময় সিংহ বাবুদের রায়পুরে ( বীরভূম জেলায়, বোলপুরের নিকটে ) গিয়া থাকিতেন, মহর্বিদেবের পরলোকের পরেও তিনি সেখানে চলিয়া গেলেন । তাহার পর নীচ বাংলার এই বাড়ী উহার পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় তৈয়ীর করান । সেথানেই তিনি বাকী জীবনটা কাটাইয়া দেন । নীচু বাংলায় পূৰ্ব্বে মন্থধিদেব পাকিতেন । সে বাড়ী ভাঙিয়। যাওয়ায় নুতন বাড়ী তৈয়ার করিতে হয় । মহর্ষির সময়কার কয়েকটি বট ও আমলকী গাছ তখনও ছিল। দ্বিপুৰাৰু আমি প্রভূতির নানা রকম কলম ও গোলাপ বেলী চামেলা প্রভৃতি ফুলের বাগান করেন। বাগানে কাঠবেড়ালী অনেক ছিল । বড়বাৰু তাহদের দেখিতে ভালবাসিতেন । নিজে যে ছাতু মাখিয় খাইতেন তাহার ভাগ দিয়া কাঠবেড়ালীদের বশ করিলেন । ঐ খাদ্য থাইতে কতকগুলি কাকও আদিতে লাগিল। তার মধ্যে একটি কাক ছিল গোড়া। বড়বাবু তাহাকে বড় স্নেহ করিতেন । ক্রমে সে তাহার টেবিলের উপর শদিয়া বসিত। অষ্ঠ কী করাও তাঁহাই করিতে লাগিল । ক্রমে তাহদের উৎপাত অসঙ্গ হইতে লাগিল, কিন্তু তিনি কিছুতেই ঐ সব আশ্রিত জীবজন্তুদের তাড়াইতে দিতেল না । একবার একটি শালিক পার্থীর কচি ছানা মাটিতে পড়িয়া যায় । আমি তাহাকে পালন করি । কিছু দিন পরে অtহার পাখন হুইল । বড়বাবু দেখিতে পাইয় তাহার জন্ত গাছে ইড়িতে বাস করাইয়। দিলেন । ক্রমে মেল শালিক পার্থীও জুটিল । আমরা তাড়াইতে চাহিলে বড়বাবু রাগ করিতেন । কিন্তু পার্থীগুলি আমাদের দেখিলে আপনিই পলাইত। মামুষের মন ওরা বেশ বুঝিতে পারে। বড়বার নিদ্র ছিল বড় অল্প । রাত্রি ১১টার আগে শুইতে যাইতেন না। তাঁহাতেও মাঝে মাঝে কিছু একটা ভাব মনে আসিলে উঠিয়া টেবিলে লিখিতে বসিতেন । শেষের দিকে বিছানায় বলিয়াই লিখিতেন । তার পরে রাত্রিতে উঠিয় লিখিতে কষ্ট হুইত তখন আমাদিগকে মুখা মুখ্য দুই একটা কথা লিখির। রাখিতে বলিতেন ।-বানান করিয়া কথাগুলি লেখাইতেন । পরঙ্গিম দিমেৰু