পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ಹತ হাউসে প্রায় ২টার সময় পৌঁছিল। বহু জনতা সত্ত্বেও কোথাও বিশৃঙ্খলা হয় নাই। ইহার প্রশংসা বাঁকুড়ার ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য। যাহারা তাহাদের উপর সকল বন্দোবস্তের ভার দিয়াছিলেন, তাহাদের বিশ্বাস সার্থক হইয়াছে। হিল হাউসের বারাও এবং কবির শয়ন ও অভ্যর্থনার কক্ষের মেঝে সুন্দর আলিপনায় অলঙ্কজ হইয়াছিল। ১৭ই ফান্ধন কবি বাকুড়া পৌছেন। সেই দিন অপরাহ্লে হিল হাউসে মহিলারা তাহার সম্বধন করেন। কয়েক জন মহিলা ও কয়েকটি বালিক তাহার উদ্দেশে লিখিত কবিতা পাঠ করেন। মধ্যে মধ্যে রচিত কয়েকটি গান গাওয়া হয়। কবি র্তাহাদিগকে যাহা বলেন, নারীদের প্রতি তাহার মমতা ও করুণা সুন্দররূপে শেষে তিনি অতুরুপ্ত হষ্টয়া নিজের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন, কিন্তু গান করিতে প্লাজী হন নাই । মহিলাদের সভা কিছু দীর্ঘকালব্যাপী হইয়াছিল। ততক্ষণ কুঠির সুদীর্ঘ বারাগুয়ে বিস্তর ভদ্রলোক অপেক্ষা করিতেছিলেন । কবিকে তাহ। জানান হওয়ায় তিনি বাহিরে আসেন, তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করেন, এবং আর একটি নিজের কবিতা আবৃত্তি করেন । বাঁকুড়ার প্রদর্শনী খোলা কবির বাকুড়া-আগমনের অমৃতম উপলক্ষ্য ছিল। ১৮ই ফাত্তন প্রাতে তিনি এই কাৰ্য সমাধা করেন। তাঙ্গর পূর্বে, প্রদর্শনী-ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের মধ্যে যে বৃহৎ মণ্ডপটি নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহাতে তাহাকে কয়েকটি অভিনন্দন-পত্র প্রদান করা হয়। মওপে যে উচ্চ মঞ্চে কবিকে বসান হয়, তাহাতে অভিনন্দন-প্রদাতা সকলের বসিবার ব্যবস্থা শ্ৰীমতী ইল দেবীর প্রস্তাব ও উপদেশ অনুসারে করা হয়। প্রথমে পৌরজনের পক্ষ হইতে শ্ৰীযুক্ত হরিসাধন দত্ত অভিনন্দন পাঠ করেন। পরে অভ্যর্থনা-সমিতির পক্ষ হইতে ত্রযুক্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, বাঁকুড়া সাহিত্য পরিষদের পক্ষ হইতে অধ্যাপক ঐযুক্ত যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, এবং বাঁকুড়া শিক্ষা সম্মিলনীর পক্ষ হইতে ঐযুক্ত কবির তাহার পর তাহাতে বাঙালী বfভ হয় । বিবিধ প্রসঙ্গ—বাকুড়ায় রবীন্দ্রনাথ tr&3 নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তাহাদের অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন। বাকুড়া সাহিত্য পরিষদের পক্ষ হইতে আর দুটি অনুষ্ঠান হয়। কথাশিল্পনিপুণা শ্ৰীমতী ইলা দেবী কবিকে মাল্য ও চন্দন প্রদান করেন এবং পরিষদের নিদর্শনী (badge)— রেশমী কাপড়ে মুদ্রিত বংশীর ছবির নীচে চণ্ডীদাসের বাণী “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”— কবিকে পরাইয়া দেন । তাহার পর বাকুড়ার জেল-জজ কবি শ্ৰীযুক্ত সুধাংশুকুমার হালদার রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশে স্বরচিত একটি কবিতার সুন্দর আবৃত্তি করেন । বিষ্ণুপুরের যুক্ত নরেন্দ্রনাথ করও একটি কবিতা পড়িয়াছিলেন । উত্তরে কবি দীর্ঘ একটি বক্তৃতা করেন। তাহার পর ক্লান্তি সত্ত্বেও অঙ্কুরুদ্ধ হইয়া একটি কবিতা আবৃত্তি করেন । প্রদর্শনীক্ষেত্রে যাইবার ও সেখান হইতে আসিবার পথে এবং মণ্ডপে খুব ভিড় হইয়াছিল, কিন্তু ছাত্রদের সুবন্দোবস্তে কোন বিশৃঙ্খলা হয় নাই । ১৯শে ফাঙ্কন রবীন্দ্রনাথ প্রাতে প্রস্থতি ও শিশুদের কল্যাণবিধায়ক একটি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করেন । ইত শ্ৰীমতী উষা হালদার প্রমুখ বাকুড়ার মহিলাদের উদ্যোগে স্থাপিত হইয়াছে । কবি এই অনুষ্ঠানের পৌরোহিত্য করিয়া বিশেষ আনন্দ লাভ করেন। অতঃপর প্রদর্শনী-মণ্ডপে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ হইতে কবিকে অভিনন্দিত করা হয় । শ্ৰীমতী উমা গুহ অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন। রবীন্দ্রনাথ এইটির রচনার প্রশংস৷ করিয়াছেন। অভিনন্দনপত্র পঠিত হইবার পর তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন । বলা বাহুল্য, ইহাতে তিনি ছাত্রদিগকে খুশি করিবার চেষ্টা করেন নাই, যাহা গণনায়কেরা অনেকে করিয়া থাকেন। তাহাদের এবং দেশের ও জাতির কল্যাণার্থ উচ্চারিত অনেক কঠোর সত্য র্তাহার বক্তৃতায় ছিল । কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা তাহাতে বিন্দুমাত্রও “বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নাই –নীরবে সকল কথা শুনিয়াছিল । কবি পরে এই লেখককে বলিয়াছিলেন, "ছাত্রছাত্রীরা আমার কথায় ক্ষুণ্ণ হয়ে থাকবে ।" আমাদের বোধ হয়, তাহারা ক্ষুণ্ণ