পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাত্মা গান্ধী শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবসে আশ্রমবাসী আমরা সকলে আনন্দোৎসব করব । আমি আরম্ভের স্বরটুিকু ধরিয়ে দিতে চাই । আধুনিক কালে এই রকমের উৎসব অনেকখানি বাহ অভ্যাসের মধ্য দাড়িয়েচে । থানিকট ছুটি ও অনেকখানি উত্তেজন দিয়ে এটা তৈরি । এই রকম চাঞ্চল্যে এই সকল উপলক্ষ্যের গভীর তাৎপৰ্য্য অস্তরের মধ্যে গ্রহণ করবার সুযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ক্ষণজন্ম লোক যারা তারা শুধু বৰ্ত্তমান কালের নন । বৰ্ত্তমানের ভূমিকার মধ্যে ধরাতে গেলে তাদের অনেকখানি ছোট ক'রে আনতে হয়, এমনি ক’রে বৃহৎকালের পরিপ্রেক্ষিতে যে শাশ্বত মূৰ্ত্তি প্রকাশ পায় তাকে থৰ্ব্ব করি । আমাদের আশু প্রয়োজনের আদর্শে র্তাদের মহত্ত্বকে নিঃশেষিত ক’রে বিচার করি । মহাকালের পটে যে-ছবি ধরা পড়ে বিধাত তা’র থেকে প্রাতাহিক জীবনের আত্মবিরোধ ও আত্মখণ্ডনের অনিবাস কুটিল ও বিচ্ছিন্ন রেখাগুলি মুছে দেন, যা আকস্মিক ও ক্ষণ কালীন তাকে বিলীন করেন, আমাদের প্ৰণম্য ধারা তাদের একটি সংহত সম্পূর্ণ মূৰ্ত্তি সংসারে চিরপ্তন হয়ে থাকে। যারা আমাদের কালে জীবিত তাদেরকেও এই ভাবে দেখবার প্রয়াসেই উৎসবের সার্থকতা । আজকের দিনে ভারতবর্ষে যে রাষ্ট্রক বিরোধ পরশু দিন হয়ত তা থাকবে না, সামরিক অভিপ্রায়গুলি সময়ের স্রোতে কোথায় লুপ্ত হবে । ধরা যাক, আমাদের রাষ্ট্রিক সাধন সফল হয়েচে, বাহিরের দিক থেকে চাইবার আর কিছু নেই, ভারতবর্ষ মুক্তিলাভ করল— তৎসত্ত্বেও আজকের দিনের ইতিহাসের কোন আত্মপ্রকাশটি ধূলির আকর্ষণ বঁচিয়ে উপরে মাথা তুলে থাকবে সেইটিই বিশেষ ক’রে দেখবার যোগ্য । সেই দিক থেকে যথন দেখ তে ধাই তখন বুঝি আজকের উৎসবে যাকে নিয়ে আমরা আনন্দ করচি তার স্থান কোথায়, তার বিশিষ্টভা কোনখানে। কেবলমাত্র রাষ্ট্রনৈতিক প্রয়োজনসিদ্ধির মূল্য আরোপ ক'রে তাকে আমরা দেখব না, যে দৃঢ়শক্তির বলে তিনি আজ সমগ্র ভারতবর্ষকে প্রবলভাবে সচেতন করেচেন সেই শক্তির মহিমাকে আমরা উপলব্ধি করব। প্রচণ্ড এই শক্তি, সমস্ত দেশের বুকজোড় জড়ধের জগদলপাথরকে আজ নাড়িয়ে দিয়েচে, কয়েক বৎসরের মধ্যে ভারতবর্ষের যেন রূপাস্তর, জন্মাস্তুর ঘটে গেল । ইনি আসবার পূৰ্ব্বে দেশ ভয়ে আচ্ছন্ন সঙ্কোচে অভিভূত ছিল, কেবল ছিল অন্যের অষ্ট্র গ্রহের জন্য আবদার আবেদন, মজ্জায় মজ্জায় আপনার পরে আস্থাহীনতার দৈন্ত । ভারতবর্ষের বাহির থেকে যার। আগন্তুকমাত্র তাদেরই প্রভাব হবে বলশালী, দেশের ইতিহাস বেধে যুগপ্রধ হিত ভারতের প্রাণধারা চিত্তধারা, সেইটেহ হবে মান, ধেন সেইটেই আকস্মি ক্ষ, এর চেয়ে দুৰ্গতির কথ। আর কি হ’তে পারে ? সেবার দ্বারা জ্ঞানের দ্বার মৈত্রীর দ্বার দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করবার বাধা ঘটাতে যথার্থই আমরা পরবাসী হয়ে পড়েচি ; শাসনকৰ্ত্তাদের শিক্ষাপ্রণালী, রাষ্ট্রবাবস্থ, ওদের তলোয়ার বন্দুক নিয়ে ভারতে ওরাই হ’ল মুখ্য, আর আমরাই হলুম গৌণ, মোহাভিভূত মনে এই কথাটির স্বীকৃতি অল্পকাল পুৰ্ব্ব পৰ্য্যগু আমাদের সকলকে তামসিকতায় জড়বুদ্ধি করে রেখেছিল । স্থানে স্থানে লোকমান্ত তিলকের মত জনকভক সাংসী পুরুষ জড়ত্বকে প্রাণপণে আঘাত করেচেন, এবং আত্মপ্ৰদ্ধার আদশকে জাগিয়ে ভোলবার কাজে ব্র ঠী হয়েচেন, কিন্তু কৰ্ম্মক্ষেত্রে এই আদর্শকে বিপুল ভাবে প্রবল প্রভাবে প্রয়োগ করগেন মহাত্ম। গান্ধা। ভার শুষধের স্বকীয় প্রতিভাকে অস্তরে উপলব্ধি ক’রে তিনি অসামান্ত তপস্তার তেজে নূতন যুগগঠনের কাজে নামূলেন । আমাদের দেশে আত্মপ্রকাশের ভয়হীন অভিধান এতদিনে যথোপযুক্তরূপে আরম্ভ হ’ল । এতকাল আমাদের নিঃসাহসের উপরে ছৰ্গ বেঁধে বিদেশী বণিকরাজ সাম্রাজ্যিকতার ব্যবসা চালিয়েচে । অন্ত্রশস্ত্র সৈন্যসামন্ত ভাল ক'রে দাড়াবার জারগা,