পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ზ) প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৮ ধরা যাক, শালটি ব্রটির উপন্যাসগুলি । কাহিনীর ভিতর দিয়া এই অপূৰ্ব্ব প্রতিভাশালিনী লেখিকার অতি অনুভূতিপ্রবণ জীবন আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। এমন-কি তাছার সাংসারিক জীবনের বহু পরিচয় এগুলির মধ্যে পাওয়া যায়। জেন আয়ারের মুখদুঃখ শালটি ব্রটির নিজের সুখদুঃখ । ধরা যাক, বায়রণের কাহিনীকাব্য গুলি । ম্যানফ্রেড, ডন জোয়ান, চাইল্ড হ্যারল্ড—সকলের মধ্যেই বায়রণের জীবনলীলার প্রকাশ দেখি । টলষ্টয়ের বহু চরিত্রই টলষ্টয়ের জীবনের অকুভূতি দিয়া গড়া । ধরা যাক, শরৎচন্দ্রের "শেষ-প্রশ্ন ।” ইহার মধ্যে শরৎচন্দ্রের প্রবৃত্তি ধারণা সংস্কার ঝোক যতটা অনাবৃতভাবে প্রকাশ পাইয়াছে, তাহার অন্য কোন উপস্কালে ততটা পায় নাই । যেটি যাহা সেটি তাহাই করিয়া ধিনি জাকিতে চান তিনি রিয়ালিষ্ট । সকল ক্ষেত্রে সাধা ন হইলেও বাস্তব বাদী নিজের কামনা অভিপ্রায় পক্ষপাত যত দূর সম্ভব পরিহার করিয়া চলেন । শরৎচন্দ্র সংসারকে as it is অঁাকেন না । তাহার প্রতিভার সে ধরাও নয় । র্তাহার সুখদুঃখবোধ তীব্র। নিজের ভাললাগ৷ মন্দলাগার মধ্য দিয়া তিনি সংসারকে গ্রহণ করেন । যেমনটি তেমন করিয়া আঁকিবার ঝোক তাহার নাই । তাই তিনি রিয়ালিষ্ট নহেন। তিনি নিজের মনে নিজের জগৎ রচনা করেন । সে জগৎ তাহার কল্পনায় প্রতিষ্ঠিত । সত্য কথা বলিতে গেলে বাস্তবের পরিচ্ছদে তিনি রোমান্স রচনা করেন । ‘শেষের কবিতা’য় আধুনিক মনের ছবি আছে। কিন্তু ‘শেষ প্রশ্ন’ কি ? ইহা অাদর্শ জীবনের আলোচনাও নয়, জাগতিক জীবনের ব্যাখ্যাও নয় । শরৎচন্দ্রের মনগড়া কতকগুলি মানুষ তাহাদের মনগড়া কতকগুলি প্রশ্ন করিডেছে এবং মনগড়া কতকগুলি উত্তর দিতেছে । ইহার মধ্যে তর্ক আছে সিদ্ধান্ত নাই, অকারণ উষ্মা, অহেতুক তীক্ষুভ, অনাবশ্বক শ্লেষ আছে, স্থষ্টির স্বষম নাই । [ ७s* छां★, २ग्न थ७ একজন প্রবীণ সাহিত্যিক বলিলেন, “ছেলেরা বলে, এ না-কি আধুনিকতার ফিলসফি " দর্শন ও বিজ্ঞানের এমন অপব্যাখ্যা আমরা মাঝে মাঝে করি । কথা তাহা নয়, ছেলেদের কথায় এ উপন্যাসের গতি কোন দিকে তাহ সহজে বুঝিতে পারি। সে দিন ইসাডোর ডানকানের আত্মজীবন পাঠ করিতেছিলাম। আত্মজীবনচরিত লেখার মত আত্মপ্রতারণার কৌশল আর নাই। দৃপ্ততঃ যাহা প্রতিভাত হইতেছে ভিতরের কথা তাহ নয়, যাহা আমার ক্রটি বলিয়া মনে হইতেছে, তাহা অস্তের দোষ, সাধারণের দোষ, সমাজের দোষ, সমাজ-সংস্থানের দোষ,—মনকে চোখ ঠারিয়া এমনি করিয়া দাবাইয়া রাখিতে চাই । যে বস্তু যাহা তাহাকে সেই নামে ডাকি না । কোদালকে কোদাল না বলিয়া অন্য কিছু বলি । মনকে তিরস্কার করিয়া তীব্রভাবে বলি, “ঠিক, ঠিক, আমি ঠিক করিয়াছি, দেখিতেছ না ইহা আমার জীবনের ফিলসফির সহিত কেমন খাপ খাইতেছে।” পরের বেলায় যেখানে বলিতাম, এ ত আত্মস্থখপরায়ণ স্বার্থপরের আত্মতৃপ্তি, নিজের বেলায় সেখানে বলি জীবনের মূল-নীতির অমুসরণ । সাহিত্যিক আত্মহত্যা তখনই ঘটে, যখন রচয়িত নিজের অধিকার ভুলিয়া যান, হৃদয়বান নিজেকে যুক্তিবাদী মনে করেন, রসম্রষ্ট দার্শনিক হইতে চান ৷ শরৎচন্দ্রের ভাবপ্রবণতাই ভাবমত্ত বাঙালীর কাছে তাহাকে আদরণীয় করিয়া তুলিয়াছে। তিনি যখন হৃদয়াবেগের রাজ্য ছাড়িয়া লজিকের জগতে ঢুকিতে চান, তখন ব্যাপারটা সত্যই জটিল হইয়া পড়ে। এরূপ অবস্থায় সাহসিকত দেখাইবার অভিপ্ৰায়ে বংশানুক্রম টানিয়া আনিতে হয়, স্বাধীন চিন্তার জন্ত সাহেব বাপ করিতে হয়, নিজের দেশের জাতি বিশেষের সম্বন্ধে অবজ্ঞাসূচক ইঙ্গিত করিতে হয় । ইংরেজীতে একটি ভাবদ্যোতক কথা আছে। বাংলায় তাহার সম্পূর্ণ অর্থ করা যায় না। সে কথাটি স্নবিশনেস ।