পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 প্রবাসী-কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৮ জল তুলতে ষাবো না পাছে পা পিছলে পড়ে যাই,— সেদিন আর একটা কি বলছিলে ? হ্যা মনে পড়েছে, ছাতে বেড়াতে পারব না পাছে ঘূর্ণ হাওয়ায় ঘুরে পড়ে যাই ! তাহ’লে কি করব বল ত সারাদিন ? বিন্ধপ স্কুললিতা করিতে পারে, করিলে অন্যায়ও হয় না, কিন্তু প্ৰণবেশ ত জানে জীবনের অর্থ কি ! একটি বিশেষ দৈব ঘটনার জন্ত মানুষ বসিয়া আছে, কখন কেমন করিয়া কি রূপে সে-দৈব নিয়তির মত মানুষের উপর আসিয়া পড়িবে তাহার কোনো স্থিরতাই নাই । কিয়ৎক্ষণ সে চুপ করিয়া রহিল, তারপর কহিল,— বেড়াতে যাবে আমার সঙ্গে ? স্কুললিত কহিল,—কি ভাগিা ! প্ৰণবেশ বলিল,—প্রতাপবাবুর বাড়িতে কীৰ্ত্তন আছে, চল আজ শুনে আসি । সন্ধ্যার সময় সেদিন তাহারা দুইজনে সতাই বাহির হইল। কাসারীপাড়ায় কোথায় কীৰ্ত্তন হইতেছে, সেইখানে গাড়ী করিয়া তাহারা আসিল । বাল্যকাল হইতে প্রশবেশের কীৰ্ত্তন শুনিবার সখ । ভিতরে কীৰ্ত্তন বসিয়াছে, কথক ঠাকুর "দোয়ার’ সঙ্গে লইয়া আসরের মাঝখানে বসিয়াছেন । পাল৷ মাথুরের। শ্ৰীকৃষ্ণের মথুরাযাত্রার সময় শোকার্ভ ব্রজবাসীর করুণ বিলাপ কুরু হইয়াছে । উদ্ধৰ আনিয়াছে সংবাদ, অকুর জানিয়াছে রথ। আসন্ন প্রিয়-বিরহে বিবশ ব্যাকুল শ্ৰীমতী ধূলায় ধূসরিত। কথক ঠাকুর মধুর কণ্ঠে ও মুললিত ভাষায় সমস্ত বর্ণনা করিতেছেন । নিস্তন্ধ আসরে সকলেই উদ্বেলিত আশ্রতে কীৰ্ত্তন শুনিতেছিল। স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বৃদ্ধ সকলেই সেই স্বন্দর কথকতায় মুগ্ধ হইয়া মাঝে মাঝে চোখের জল মুছিতেছিল। প্ৰণবেশের নিঃশ্বাসও ভারী হইয়া আসিতেছিল, তাহার মন বড় নরম । অনেকক্ষণ এমনি করিয়া শুনিতে শুনিতে এক সময় পিঠে চাপ পড়িতেই সে ফিরিয়া তাকাইল । একটি ছোট ছেলে তাহাকে ভাকিতেছিল। [ ৩১শ ভাগ, ২য় খণ্ড ছেলেটি তাহাকে ইঞ্জিত করিয়া দরজার দিকে দেখাইয়া কহিল,—আপনাকে ডাকছেন । প্ৰণবেশ কহিল,-কে ? —ওই যে, উঠে আস্থন না 7 শ্রোতাদের ভিতর হইতে অতি কষ্টে পথ কাটিয়৷ প্রণবেশ উঠিয়া আসিল । আসিয় দেখে, দরজার কাছে স্থললিতা দাড়াইয়। মুখে কাপড় চাপ দিয়া কোনও রকমে সে তখন হাসি চাপিবার চেষ্টা করিতেছিল। প্ৰণবেশকে দেখিয়া ফিসফিস্ করিয়া সে কহিল,—কি জায়গাতেই এনেছিলে বাপু, হাস্তে হাস্তে আমার দম আটকে যাচ্ছিল । যেদিকেই তাকাই, সবাই ফোস ফোস করছে । কাদবার জন্যে এরা সবাই তৈরি হয়ে এসেছিল ? আবার সে হাসিতে লাগিল । প্ৰণবেশের চোপে তখনও জলের রেগ মিলায় নাই । সে শুধু নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল,—আর একটু শুনে গেলে হ’ত না ? —না, আর এক মিনিটও নয়, এখুনি চল । মাইযের কান্না শোনবার জন্তে ত আর বেড়াতে বেরুনো হয়নি! অগত্য প্ৰণৱেশ তাহাকে লইয়া বাহির হইয় আসিল । ফুটুপাথের উপর এক জায়গায় স্থললিতাকে দাড় করাইয় সে গাড়ী ডাকিতে গেল। পথের অন্ধকারে তাহার মুখের চেহারাটা কি রকম হইয়াছিল তাহা বুঝা গেল ন ৷ কীৰ্ত্তন শেষ হইবার আগেই তাহাকে উঠিয়া আসিতে হইয়াছে এজন্য সে দুঃখিত নয়, কিন্তু তাহার মনে হইতেছিল, স্থললিতার অকরুণ ও হৃদয়হীন হাসিট। তখনও তাহার মনের মধ্যে আগুনের ঢেলার মত নড়িয়া চড়িয়া বেড়াইতেছে। বিয়োগাস্ত ভালবাসা যে-নারীর মনে রেখাপাত করে না, করুণ রস যাহার নিতান্তই বিদ্ধপের বস্তু, হৃদয়ের কোমল বৃত্তির পরিচয় যাহার মধ্যে বিন্দুমাত্রও নাই—সে নারীর বোঝা চিরদিন সে বহিবে কেমন করিয়া ? ভয়ে প্রণবেশের বুৰ দ্বঙ্ক দুরু করিতে লাগিল। গাড়ীতে বসিয়া কেহ কাহারও সহিত কথা কহিতেছিল না, কেবল এক একবার স্থললিত কীৰ্ত্তনের