পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় হষ্টতে পঞ্চম অধ্যায়ের আরম্ভ পৰ্য্যস্ত অর্জনের প্রশ্নের পারম্পর্ঘা ৪ ীিরুষ্ণের উত্তর । ২৭ অর্জন। আমি ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না, . আমার যুদ্ধ করা উচিত কি না, আমার কিসে শ্রেয় হয় বল । শ্ৰীকৃষ্ণ । তুমি যুদ্ধের কথায় শোক ও পাপভয়ে সগ্রস্ত হইয়াছ ও বড় বড় কথা বলিতেছ ; সে সব ছাড়িয়া বৃদ্ধির শরণ লও। বেদবাদীদের কথায় মোহিত হইও না। কৰ্ম্মফল তোমার আয়ত্ত নহে। সিদ্ধি অসিদ্ধিতে সমবুদ্ধি হইয়া অসঙ্গচিত্তে কৰ্ম্ম কর। ইহাতে স্থিতপ্রজ্ঞত্ব লাভ হইবে । [অর্জুনের প্রশ্নে ( ২৫৪ গ্লোকে রুষ্ণ) স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণ বলিলেন । ] অসঙ্গচিত্তে বিষয়ভোগে ধাতু প্রসন্ন হয় ( ২৬৪ ) ও ফলে বুদ্ধি শীঘ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বুদ্ধিযুক্ত পুরুষ স্বকৃত দুষ্কৃত উভয়ের হস্ত হইতে উদ্ধার পায়। অতএব ফলাফলে অনাসক্ত হইয়া যুদ্ধ কর। ৩১ অর্জুন। যে বুদ্ধিতে কৰ্ম্ম করা যায় তাহাষ্ট যখন প্রধান কথা, তখন নিষ্ঠর কৰ্ম্ম কেন করিব ? [ এখানে সাধারণ কর্মের কথা বলা হয় নাই। অর্জনের প্রশ্নের অর্থ স্থিতপ্রজের কাছে সব কৰ্ম্মই যখন সমান ও যখন এই আদর্শই বড় তখন নিষ্ঠর কৰ্ম্ম না-হয় নাই করিলাম, বেদোক্ত যাগযজ্ঞাদি ভাল কাজই করি ও ক্রর কাজ পরিত্যাগ করি ।] শ্ৰীকৃষ্ণ। প্রথমে বুঝ যে একেবারে কৰ্ম্মত্যাগ করিবার উপায় নাই। জ্ঞানযোগ ও কৰ্ম্মযোগ এই দুই মার্গ আছে সত্য, কিন্তু যে মার্গই অবলম্বন কর না কেন, কৰ্ম্ম করিতেই হইবে। কৰ্ম্ম বিনা জীবনযাত্রাও চলিবে না। যদি মনে করিয়! থাক যজ্ঞকৰ্ম্ম নির্দোষ তাহাও ভুল ! যজ্ঞেরও বন্ধন আছে। অতএব অনাসক্ত হইয়া কৰ্ম্ম কর । ইহাতে পরম লাভ হইবে। আরও দেখ, লোকশিক্ষার জন্যও কৰ্ম্ম দরকার। প্রকৃতিই মানুষকে কৰ্ম্ম করায়। তুমি যুদ্ধ করিব না বলিলে কি হইবে, প্রকৃতি তোমাকে যুদ্ধ করাইবেই। বুঝিয়া চলিলে নিষ্ঠর কর্শেও বন্ধন নাই। তুমি ক্ষত্রিয়, যুদ্ধের দিকে তোমার প্রবৃত্তি স্বভাবজ। কেবল মোহবশেই যুদ্ধ করিব না বলিতেছ। মযুদ্ধ সাজ-অনুমোদিতও বটে। এই জন্য তাহা তোমার স্বধৰ্ম্ম । অতএব ক্রর কৰ্ম্ম করিব না বলিয়া লাভ নাই। স্বধৰ্ম্ম বিগুণ বোধ হইলেও নিজ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধ কাৰ্য্য ভয়াবহ । সেরূপ কার্যো ধাতু অপ্রসন্ন থাকে ও শ্রেয়লাভ হয় না । ৩৩৬ অর্জন । তুমি বলিতেছ প্রকৃতি আমাকে যুদ্ধ করাইবেই। কাহার বশে অর্থাং প্রকৃতির কোন গুণের জোরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে যুদ্ধ করিতে হুইবে ? কাহার বশে মানুষে পাপ কাজ করে ? [ এখনও অর্জনের যুদ্ধকে পাপ বলিয়া মনে হইতেছে ।] শ্ৰীকৃষ্ণ । কাম অর্থাং কামনাই মন্ত্যকে পাপ কৰ্ম্ম করায় । কাম অতি প্রবল ও তাহা পুথিবী বাপিয়া আছে। যদি মনে কর যে, তাহা হইলে কামেরই জয়জয়কার হয় না কেন ও পৃথিবী পাপে ভরিয়া যায় না কেন, তাহার উত্তর এই যে, পাপ বৃদ্ধি পাইলে ৪ পূৰ্ম্মের গ্লানি হষ্টলে ভগবান অবতীর্ণ হইয় তাহার প্রতিকার করেন। অবতারতত্ত্ব জানিলে কৰ্ম্মবন্ধন হয় না ( ৪১৪ তুমি যুদ্ধকে কুর কৰ্ম্ম বলিজেছ, কিন্তু কি কৰ্ম্ম কি অকৰ্ম্ম আর কি বিকৰ্ম্ম সে সম্বন্ধে পণ্ডিতেরাও একমত নহেন। কৰ্ম্মে যে অকৰ্ম্ম দেগে সে-ই বুদ্ধিমান (৪১৮) । অসঙ্গ হইয়া শরীরই কেবল কৰ্ম্ম করিতেছে এই জ্ঞানে কৰ্ম্ম করিবে । বাস্তবিক মতুন্যের যে কাজই করুক না কেন, আমার বশেই তাহ করিয়া থাকে। যজ্ঞের মত ভাল কাজেও বন্ধন আছে । অতএব বিবিধ যজ্ঞাদিও এই ব্রহ্মবুদ্ধিতেই করা উচিত। উপযুক্ত জ্ঞানেই সমস্ত কর্মের অবসান হয় (৪I৩৩) । যাহাকে পাপ কাজ মনে করিতেছ তাহfও জ্ঞানে দগ্ধ হয় । জ্ঞানের তুলা পবিত্র কিছুই নাই ( ৪৩৬-৩৮ ) । ৫১ অর্জুন । তোমার কথা না হয় মানিলাম ; ক্রর কৰ্ম্ম হইলেও স্বধৰ্ম্ম আচরণীয়। আর ব্রহ্মবুদ্ধিতে অনুষ্ঠিত হইলে নিষ্ঠর কৰ্ম্ম ও যজ্ঞকর্থে প্রভেদ নাই। কিন্তু তুমি নিজেই বলিয়াছ যে, কৰ্ম্ম অপেক্ষ জ্ঞানই শ্রেষ্ঠ এবং কৰ্ম্মযোগ ও জ্ঞানযোগ দুই প্রকার সাধনাই লৌকিক । অতএব নিষ্ঠুর কৰ্ম্ম ভাল কৰ্ম্ম সবই পরিত্যাগ করিয়া সন্যাসী হইয়া জ্ঞানমার্গ অবলম্বনে আপত্তি কি ? কৰ্ম্মসন্ন্যাস ও কৰ্ম্মযোগ এই দুইটির ভিতর কোনটি বাস্তবিক ভাল ? শ্ৰীকৃষ্ণ । উভয়ের ফল একই। কিন্তু কৰ্ম্মসন্ন্যাস