পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8९ প্রত্যেক প্রতিনিধির নিজের মাতৃভাষা ব্যবহার করিবার অধিকার আছে, তদ্রুপ কংগ্রেসে ভারতবর্ষের সাৰ্ব্বজনিক কাজে হিন্দুস্থানী ও ইংরেজী ব্যবহৃত হওয়া উচিত এবং তদ্ভিন্ন প্রত্যেক প্রদেশের লোকদের নিজেদের মাতৃভাষা ব্যবহার করিবার অধিকার থাকা উচিত-বিশেষত: সেই প্রদেশের মাতৃভাষা যেখানে কোন বৎসর কংগ্রেসের অধিবেশন হুইবে । সাধারণ ভাষা রূপে ইংরেজীর ব্যবহার নেহরু কমিটির রিপোটেরও আঙ্গুমোদিত । আগামী বৎসর উৎকলে কংগ্রেসের অধিবেশন হইবে । অতএব ঐ অধিবেশনে হিন্দুস্থানী ইংরেজী এবং ওড়িয়া ব্যবহার করিবার অধিকার প্রতিনিধিবর্গকে দেওয়া উচিত। মাতৃভাষা ব্যবহারের এই অধিকার উৎকল বা ভারতবর্ষের উত্তরাদ্ধের অন্য কোন প্রদেশের চেয়ে মাম্রাজ প্রেসিডেন্সীর অন্ধ দেশ, তামিল নাড়ু (তামিল ভাষীদের দেশ ), কর্ণাট, কেরল প্রভৃতি দেশের জন্য আরও অধিক দরকার। কারণ ভারতবর্ষের উত্তরাদ্ধের প্রধান সব ভাষা সংস্কৃত বা প্রাকৃত হইতে উৎপন্ন ; মান্দ্রাজ প্রেসিডেন্সীর প্রধান ভাষাগুলি তাহা নহে। এই জন্ত মান্দ্রাজ প্রেসিডেন্সীর অধিকাংশ লোকের পক্ষে হিনী না শিখিয়া বুঝা অসম্ভব ; বাঙালী, আসামী, ওড়িয়া, মরাঠা, গুজরাতীদের পক্ষে তাহা নহে। তাহারা হিন্দী না শিখিলেও সামান্ত হিন্দী বুঝিতে পারে। বাঙালীর হিন্দী শেখা উচিত আমাদের বিবেচনায় অনেক দিকৃ-দিয়া হিন্দী অপেক্ষ বাংলার ভারতবর্ষের সাধারণ ভাষা হইবার উপযোগিতা বেশী আছে। কিন্তু ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের লোকের বাংলার পক্ষে প্রবল যুক্তি দেখাইলেও তাহাতে কর্ণপাত করিবেন না বলিয়া আমরা বাংলা ভাষার দাৰি অবাঙালী ভারতীয়দের নিকট উপস্থিত করিতে, চাই না । বাংলা যাহার বলেন ও বুঝেন, তাহাদের সংখ্যাও কম নহে। পাচ কোটির উপর লোকের মাতৃভাষা [ ৩১শ ভাগ, ১ম খণ্ড مسی مسمہ سی۔ --سهم" বাংলা । তদ্ভিন্ত্র ওড়িয়া ও আসামীর বাংলা বলিতে ও বুঝিতে পারেন। বিহারের অনেক লোক বাংলা বুঝেন, কাশীরও তাই। ছোটনাগপুরের বিস্তর অবাঙালী . বাংলা বুঝেন। বঙ্গদেশবাসী সাওতালরা বাংলা বুঝেন। শিক্ষা করিয়া নিভুল বাংলা লেখা, শিক্ষা করিয়া নিভুল হিন্দী লেখা অপেক্ষ সোজা। বাংলা লিপি নাগরী লিপি অপেক্ষ প্রাচীনতর এবং কম জটিল । আধুনিক বাংলা সাহিত্য আধুনিক হিন্দী সাহিত্য অপেক্ষ সমৃদ্ধ ও ভাবপ্রকাশক্ষম। কিন্তু এসব কথা সত্য হইলেও কংগ্রেসে বাংলা সাধারণ ভাষা বলিয়া গৃহীত হইবে না। অবাঙালীরা যদি বাংলা শেখেন, তাহ বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষের জন্যই শিখিবেন । আমাদের মাতৃভাষা ও সাহিত্যের সেই উৎকর্ষ সাধনেই যত্নবান হওয়া দরকার—কংগ্রেসওয়ালাদের সহিত তর্কবিতর্ক করিবার প্রয়োজন নাই । বাঙালীদের হিন্দী কেন শেখা উচিত বলিতেছি । প্রথমে একটা সম্ভবপর আশঙ্কা নিরসন করা আবশুক । কেহ যেন মনে না করেন, আমরা হিন্দী শিখিলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের- ক্ষতি হুইবে । আমরা ইংরেজ রাজত্বের আরম্ভ হইতে এপর্য্যস্ত বহু লক্ষ বাঙালী ইংরেজী শিখিয়াছি । তাহাতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কোন ক্ষতি হয় নাই, প্রসারও কমে নাই। বরং ইংরেজী শিক্ষা প্রাপ্ত প্রতিভাশালী বাঙালীদের দ্বারা আমাদের সাহিত্যের উন্নতিই হইয়াছে। বাংলা দেশের তুলনায় ওয়েলস্ অতি ক্ষুদ্র দেশ, উহার লোক-সংখ্যা ২৫ লক্ষের বেশী নয় । ইংরেজী সাহিত্যের তুলনায় ওয়েলসের সাহিত্যও নগণ্য। তথাপি, ওয়েলস বহু শতাব্দী ধরিয়া ইংলণ্ডের সহিত যুক্ত থাকা সত্বেও ওয়েলসের ভাষা ও সাহিত্য লুপ্ত হয় নাই। ভারতবর্ষে বাঙালীদের প্রভাব ষে অল্পাধিক পরিমাণে বিস্তৃত হইয়াছিল, তাহার অনেক কারণ আছে। সবগুলির উল্লেখ এখানে অনাবশুক । একটা কারণ, আমরা অন্ত অনেক প্রদেশের লোকদের চেয়ে জাগে ইংরেজী শিখিয়াছিলাম এবং আধুনিক যুগের উপযোগী আধুনিক চিন্তা ও ভাবধারা এবং কৰ্ম্মপদ্ধতির সহিত পরিচিত হইয়াছিলাম। তাহাতে ইংরেজদের