পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] পৃথক হইবার পূৰ্বে জায় কিন্তু একটি সর্ব করিয়াছিলেন। এমার বৃদ্ধ পিতাকে কিছু জানান হইবে না। দুহ জনেই পূর্বের মত র্তাহার নিকট চিঠিপত্র লিথিবেন । এমার পিতা শ্ৰীযুক্ত জর্জো নেকে কিছু বলা হইল না । তিনি নিজের মিথ্যা মুখস্বর্গে বাস করিতে লাগিলেন । কিন্তু তিনি মিলানে আসিবার প্রস্তাব করাতে বিপদ বাধিল । গৰ্ব্বিত স্বভাবের বাধা কাটাইয়া আবার স্বামীর অনুগ্রহপ্রাথিনী হুইয়া আসিতে হইল । যে-গৃহ তিনি উন্নতমস্তকে ত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন, সেখানে আবার প্রবেশ করিতে র্তাহার বধিতেছিল । তিনি ক্রমাগত মনে মনে জপ করিতে লাগিলেন, “আমি এট। বাবার খাতিরে করছি ।” গিদের কঠোর ভদ্রত। তাহাকে শক্তি দিল । তাহাদের কথাবান্তা মোটের উপর সস্তোষজনকই হইল । ধfহ৷ ঘটিয়া গিয়াছে, কেহই তাহার উল্লেখ করিলেন না, ভবিষ্ঠাতের কথাও কিছু হইল না ! উভয়েই ধীরস্থির বিজ্ঞ ব্যক্তির মত ব্যবহার করিলেন । কিন্তু পরের দিনটা কি ভাবে কাটিবে ? বুদ্ধকে ষ্টেশন হইতে গৃহে আনিয়া, না জানি কত মিথ্যা কথা তাহাদের বলিতে হইবে, কত মিথ্যাচারই করিতে হইবে । তাহার পর ? তাহার পর আবার অভিনেতা দুটি পরস্পরকে অত্যন্ত দূর হইতে অভিবাদন করিবে এবং যে যাহার পথে চলিয়া যাইবে । নিজেদের কলহের একট। নিম্পত্তি করিবার একজনেরও ইচ্ছা ছিল না । গিদে কখনও প্রথমে অগ্রসর হইবেন না এবং এমাও কখনও ক্ষমা করিবেন না । স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মনে মনে ভাবিলেন, বৰ্ত্তমান ব্যবস্থায়ই তাহারা বেশ সুখে আছেন, পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নাই । সান্ধ্য আহারটা সবেমাত্র শেষ হইয়াছে ৷ এমার পিতা চেয়ারে হেলান দিয়া আনন্দের হাসি হাসিতেছিলেন । তাহার মন তখন মুখে ভরপুর । মেয়ে-জামাই তাহাকে অতিশয় আগ্রহের সহিত অভ্যর্থনা করিয়াছেন, কোনও কিছুতে খুৎ ধরিবার জো ছিল না । এমাকে চিরন্তনী 8Σ Σ অভিনেতা দুইঙ্কনও তাহার হাসিতে যোগ দিয়া হাসিতেছিলেন, কিন্তু মনে মনে তাহারা বড়ই বিপন্ন বোধ করিতেছিলেন । কাল রাত্রে যাহা অত্যন্ত সহজ বোধ হইয়াছিল, আজ আর তাহা তত সহজ মনে হইতেছিল না। ষ্টেশন হইতেই বিপদ সুরু হইয়াছিল। এমার পিতা ট্রেন হইতে নামিয়াই এক হাতে কঙ্গাকে, অন্য হাতে জামাতাকে জড়াইয়া ধরিয়া চুম্বন করিলেন। গিদে এবং এমাকে বাধ্য হইয়া পরস্পরকে নাম ধরিয়া ডাকিতে হইল এবং অতিশয় প্রণয়াসক্ত পতি-পত্নীর মত ব্যবহার করিতে হইল। গিদ্যের মুখ থাকিয়া থাকিয় হৃদয়াবেগের আতিশয্যে বিবর্ণ হুইয়া উঠিতেছিল, এমার মুখেও রক্তোঞ্ছাস ঘনাইয়া উঠিতেছিল। অভিনয় করিতেছিলেন বটে, কিন্তু নিজেদের বিগত স্বখের দিনগুলি বড় বেশী করিয়া তাহাদের মনে পড়িতেছিল । তখনকার দিনে দুজনার পরস্পরের প্রতি যে মনোভাব ছিল, তাহা বার-বার মনে জাগিয়া উঠিতেছিল। ইহার উপর উাহাদের সর্বদাই সশঙ্কিত হুইয়া থাকিতে হইতেছিল, পাছে কোনো অসাবধানতায় বুদ্ধের নিকট তাহারা ধরা পড়িয়া যান । তাহারা দুজনেই বড় বেশী বিচলিত হুইয়া উঠিয়াছিলেন, কেন জানি না তাহাদের কেবলই মনে হুইতেছিল, এই অভিনয় হইতে তাহদের জীবনে বিপুল একটা পরিবর্তন আসিয়া পড়িবে। আহারের পর বৃদ্ধ উপরে চলিলেন । . এম এবং গদে তাহার পশ্চাতে আসিতেছিলেন। এমী অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে গিদোর দিকে চাহিলেন । গিদে তাহার মনের কথা বুঝিলেন, এমা ভাবিতেছেন “কেমন করে আমরা সারাটা দিন এই অভিনয় চালাব ?” গিদোও অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে উত্তর দিলেন, তাহার মনের ভাব, “আমরা যথাসাধ্য করে যাই, তারপর যা করেন ভাগ্যবিধাতা ।” ইহার পর অভিনয় চালাইয়ু যাওয়া আরও শক্ত হইল, কারণ এমার পিতা বলিবার ঘরে আসিয়া আরাম-চেয়ারে বসিলেন এবং নানাপ্রকার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, সেগুলির উত্তর দিতে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই বড় বিপন্ন হইতে হুইল ।